*** যাওয়া হলো না উইরোপের দেশ ইতালি
দীর্ঘ ৮ বছর ছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ মালয়েশিয়ায়। হঠাৎ মাথায় ভূত চাপে যাবেন ইউরোপের দেশ ইতালি। পরিবারের বাধার মুখে স্থানীয় দালালের মাধ্যমে ১২ দিন আগে নিজের জমি লিখে দিয়ে পাড়ি জমান লিবিয়া, সেখান থেকেই ডাঙ্কি দিয়ে নৌকা বা বুটে করে যাবেন স্বপ্নের দেশ ইতালি। তবে সেই স্বপ্ন, স্বপ্নই রয়ে গেল কিশোরগঞ্জের ভৈরবের আরমানের (৩২)। ভূমধ্যসাগরে নৌকায় অগ্নিকা-ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবারের কাছে সংবাদ পৌঁছেছে। তবে এখনো মৃত্যুর সঠিক তথ্য ও নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পরিবার। আরমান উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের আলুকান্দা গ্রামের রেনু মিয়ার ছেলে। এলাকাজুড়ে আরমানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লেও পরিবারের দাবি মৃত্যুর খবর পেলেও এখনো মৃত্যুর সত্যতা পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় দালাল জসিম উদ্দিনের মাধ্যমে প্রায় ২৫ লাখ টাকার চুক্তিতে অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আরমান। এজন্য তিনি ২০ লাখ টাকার সমপরিমাণ সাত শতাংশ জমি লিখে দেন এবং নগদ ৫ লাখ টাকা প্রদান করেন। দালালের প্রতিশ্রুতি ছিল নিরাপদে শিপে করে তাকে ইতালি পৌঁছে দেওয়া হবে।
গত ৭ নভেম্বর মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে আবার লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন তিনি। ১৬ নভেম্বর সকালে দালাল পরিবারকে জানান, আরমানের ইতালিতে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু এরপর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
আরমানের ছোট ভাই নয়ন মিয়া বলেন, ‘আমরা এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না ভাই মারা গেছে। দালাল জসিম একেক সময় একেক তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছে। নৌকায় পাঠানো হয়েছিল কি-না সেটাও নিশ্চিত নই। পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে থাকতে পারে।’
আরমানের বড় ভাই নূরে আলম বলেন, ‘দুই দিন আগে সকালে জসিম ফোন করে জানায় নৌকা ডুবে আরমানসহ অনেকে মারা গেছে। কিন্তু কারা মারা গেছেন, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেনি। আগে বলেছিল ইতালিতে পৌঁছে গেছে। তাই ঘটনার পেছনে রহস্য রয়েছে।’
জসিম লিবিয়ায় থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তার মা হামিদা বেগম জানান, ১০ দিন আগে জসিমের স্ত্রী-সন্তান লিবিয়ায় যান। তিনিও ছেলের কাছ থেকেই আরমানের মৃত্যুর খবর শুনেছেন। আরমানের লেনদেন জসিমের স্ত্রী আকলিমা বেগমের মাধ্যমে হয়েছে বলেও জানান তিনি। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গত দুই দিন ধরে স্বজন ও প্রতিবেশীরা আরমানের বাড়িতে ভিড় করছেন। ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু তালেব বলেন, ‘লিবিয়ায় কোনো বাংলাদেশির মৃত্যু সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ বা তথ্য এখনো আমাদের কাছে আসেনি।’ তিন সন্তানের জনক আরমান সাত ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন। দীর্ঘ আট বছর মালয়েশিয়ায় থাকার পর ভবিষ্যতের আশায় ইউরোপে পাড়ি জমালেও শেষ পর্যন্ত সেই স্বপ্ন আর বাস্তবায়িত হলো না।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন