চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অসময়ে তরমুজ চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। কম খরচে বেশি ফলন এবং বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় তারা সন্তুষ্ট। উচ্চ ফলনশীল তরমুজ চাষ করে অল্প সময়ে এবং কম খরচে দ্বিগুণ-তিনগুণ লাভ করছে কৃষকরা। তরমুজ চাষ করে উপজেলার ১২ নম্বর খৈয়াছড়া ইউনিয়নের নিশ্চিন্তা, মসজিদিয়া বুজননগর ও মাছুমেরতালুক গ্রামে বেশ কয়েকজন কৃষক সাড়া ফেলেছেন।
কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্ট (এসএসিপি) এর আওতায় ৮ জন কৃষককে প্রদর্শনী প্লট দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আরও ২ জন কৃষক নিজস্ব উদ্যোগে তরমুজ চাষ করছেন। এবার মোট ৩০০ শতক জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। মালচিং ও মাচাং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষে কৃষকরা সফলতা পাওয়ায় অন্যান্য কৃষকরাও আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ফলে অসময়ে তরমুজ চাষ নিয়ে দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা। আগামীতে আরও বড় পরিসরে তরমুজ চাষের স্বপ্ন বুনছেন অনেক কৃষক। অধিক লাভ হওয়ায় অসময়ে তরমুজ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে কৃষি বিভাগ। দিচ্ছেন মালচিং পেপার, সার, বীজসহ প্রশিক্ষণ।
কৃষক রাজু চন্দ্র দাশ বলেন, ‘আমি প্রথমবার ৩৩ শতক জমিতে ৬ টি জাতের তরমুজ চাষ করেছি। মালচিং পদ্ধতিতে এই চাষে খুবই ভালো ফলন হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের সর্বাত্মক সহযোগিতায় আমি সফলতা পাব বলে আশাবাদী। আমার ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ৩ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী তিনি।’
কৃষক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমি দুই বছর যাবত তরমুজ চাষ করে আসছি। প্রথমবার সফলতা পাওয়ায় এবারও ৩৩ শতক জমিতে ব্ল্যাক ভেরি, বাংলালিংক, সূর্যডিমসহ কয়েকটি জাতের তরমুজ চাষ করেছি। কৃষি অফিস থেকে মালচিং পেপার, সার, বীজসহ নানা সহযোগিতা পেয়েছি। ফলনও ভালো হয়েছে। ৮৫ হাজার টাকা আমার খরচ হয়েছে, আমি আশা করছি দেড় থেকে ২ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারব।’ উপজেলায় চাষ হওয়া তরমুজ জাতের মধ্যে অন্যতম ব্ল্যাক ভেরি, সূর্য ডিম, বাংলালিংক, রসগোল্লা, লিয়োনা, কিংসুপার, বিগবাইট, জাফরান ও সুইটবাইট। উৎপাদিত তরমুজের ওজন ৩ কেজি থেকে শুরু করে ১০ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। বীজ রোপন থেকে শুরু করে বিক্রির উপযুক্ত হয় ৭০ থেকে ৭৫ দিনের মধ্যে। প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ৭০ থেকে ৯০ টাকায়।
মিরসরাই উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (খৈয়াছড়াও মসজিদিয়া ব্লক) মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘এসএসিপি প্রকল্পের আওতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৮টি প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়েছে। সার, বীজ, মালচিং পেপার ও আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে। গত তিন বছর ধরে ব্লকে অসময়ী তরমুজ চাষ হচ্ছে। অল্প সময়ে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।’
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘২০২৩ সালে মাত্র ৫০ শতক জমিতে তরমুজ চাষ শুরু হয়েছিল। তিন বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০০ শতকে। লাভজনক হওয়ায় কৃষকেরা দ্রুত সাড়া দিচ্ছেন। আগামীতে চাষ আরও বাড়বে বলে আশা করছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন