*** যশোর মেডিকেল কলেজ
*** মেডিকেল শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শিক্ষা কার্যক্রম বিঘিœত
*** তিন কিলোমিটার দূরের যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা, ওয়ার্ড ভিজিট ও প্র্যাকটিস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের
*** ১৫ বছরে ৯টি ব্যাচ পাস করলেও কেউই নিজ ক্যাম্পাসে সংযুক্ত হাসপাতালের সুবিধা পাননি
*** ৫০০ শয্যার হাসপাতাল চালু হলে আশপাশের জেলার রোগীরা উন্নত চিকিৎসা পাবে
প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও যশোর মেডিকেল কলেজে (যমেক) ৫০০ শয্যার হাসপাতালটি চালু হয়নি। ফলে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শিক্ষা কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে। ক্লাস শেষে তিন কিলোমিটার দূরের যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা, ওয়ার্ড ভিজিট ও প্র্যাকটিস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ১৫ বছরে এখান থেকে ৯টি ব্যাচ পাস করলেও তাদের কেউই নিজ ক্যাম্পাসে সংযুক্ত হাসপাতালের সুবিধা পাননি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যমেকের ৫০০ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হলে যশোরসহ আশপাশের চার জেলার রোগীরা উন্নত চিকিৎসা পাবেন এবং জেনারেল হাসপাতালের অতিরিক্ত চাপও কমবে।
যমেকের প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অনুমোদন পায়। ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে শংকরপুরের হরিণার বিলে ২৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ২০০৮ সালে ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ তলা প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনের মধ্যে ৬ তলা নির্মাণকাজ শুরু হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২০১০ সালের মার্চ মাসে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে ফ্যাকাল্টি অনুমোদন দেয়। নিজস্ব ক্যাম্পাস প্রস্তুত না হওয়ায় ওই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটের দ্বিতীয় তলায় ৫০ শিক্ষার্থী নিয়ে মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৩ সালের শেষের দিকে মেডিকেল কলেজের অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হলেও যাতায়াতের সড়ক না থাকায় কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ক্যাম্পাসে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেননি। রাস্তা নির্মাণের পর ২০১৬ সালের ৩ জুন অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম নিজস্ব ক্যাম্পাসে শুরু হয়। কিন্তু আজ অবধি ৫০০ শয্যার হাসপাতাল চালু হয়নি। যশোর গণপূর্ত অফিস সূত্রে জানা যায়, যশোর মেডিকেল কলেজের ৫০০ শয্যার হাসপাতালটির নির্মাণকাজ সবেমাত্র শুরু হয়েছে। এখন পাইলিংয়ের কাজ চলছে। এটি শেষ হতে ২০২৮ সাল লেগে যেতে পারে। ফলে অপেক্ষায় থাকতে হবে আরও কয়েক বছর।
সূত্র জানায়, ২০১০ সালে যশোর মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু ২০২৫ সালেও ক্যাম্পাসে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যশোরের পরে প্রতিষ্ঠিত হলেও সাতক্ষীরা ও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল চালু হয়েছে। মেডিকেল কলেজের সঙ্গে হাসপাতাল থাকতেই হবে। এটি নিয়ম। যশোর মেডিকেল কলেজের ৫০০ শয্যার হাসপাতাল স্থাপনের জন্যে ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি ছিল। তাদের ঋণের টাকায় হাসপাতালটি নির্মাণ হওয়ার কথা ছিল। তবে তা শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়। এখন নিজস্ব তহবিলেই হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়ে কাজ করছে সরকার। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এতে উন্নয়ন প্রকল্প স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ৫০০ বেডেড হসপিটাল ও এনসিলারি ভবন ইন যশোর’ প্রকল্পটি স্থান পেয়েছিল।
যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির সদস্যসচিব জিল্লুর রহমান বলেন, যশোর, নড়াইল, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার অন্তত ২০ লাখ মানুষ যশোর আড়াই শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল। বিগত সময়ের জনপ্রতিনিধিরা যশোরের মানুষের জন্য কোনো কাজ করেনি। যে কারণে গত ১৫ বছর আমরা ৫০০ শয্যার হাসপাতাল পায়নি।
যমেকের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডাক্তার আবু হাসনাত মোহম্মাদ আহসান হাবিব বলেন, অর্থ ছাড় না পাওয়ায় ৫০০ শয্যার মেডিকেল হাসপাতাল ভবন নির্মাণে বিলম্ব হয়। এখন কাজ শুরু হয়েছে।
যমেকের সহকারী অধ্যাপক ডা. আলাউদ্দিন আল মামুন বলেন, যশোর মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরেও ক্যাম্পাসে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ না হওয়া দুঃখজনক। হাসপাতাল না থাকায় শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তারা ৩ কিলোমিটার দূরে যশোর আড়াই শয্যা জেনারেল হাসাপাতালে এসে হাতে কলমে শিক্ষা নিচ্ছে। যাতায়াতে নিরাপত্তাহীনতায়ও ভুগছেন শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে গত ১৫ বছরে ৯টি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা পাস করে বের হয়েছেন।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত বলেন, আমাদের হাসপাতালে বেডের চেয়ে কয়েকগুণ রোগী ভর্তি থাকে। আবার বহির্বিভাগেরও প্রতিদিন ৫-৬ হাজার রোগী দেখা হয়। এতে চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। ৫০০ শয্যার হাসপাতাল চালু হলে আমাদের এখানে চাপ কমবে। তখন রোগীরা আরও ভালো চিকিৎসাসেবা পাবেন বলে আমি আশাবাদী।
যশোর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, সবে কাজ শুরু হয়েছে। পাইলিং চলছে। ইচ্ছে করলেও ২০২৬ সাল তো দূরে থাক ২০২৭ সালেও বুঝে দেওয়া সম্ভব না।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন