মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২৫, ০৭:৩৩ এএম

দৃষ্টিহীন আরিফার স্বপ্ন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করা

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২৫, ০৭:৩৩ এএম

দৃষ্টিহীন আরিফার স্বপ্ন ডাক্তার  হয়ে মানুষের সেবা করা

জীবনের শুরু থেকেই অন্ধকার। এক চোখে দৃষ্টিই নেই, আরেক চোখে সামান্য আলো-ছায়া। তবু দারিদ্র্য, প্রতিবন্ধকতা আর সামাজিক বাধা পেরিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার লড়াইয়ে প্রতিদিন নতুন করে পথ তৈরি করছেন যশোরের শার্শা উপজেলার কায়বা ইউনিয়নের দিঘা গ্রামের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কিশোরী আরিফা। জন্মগত দৃষ্টিহীনতা সত্ত্বেও এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় তিনি পেয়েছেন জিপিএ-৫। এর আগে পিএসসিতেও অর্জন করেছিলেন সর্বোচ্চ জিপিএ। অদম্য এই মেয়ের স্বপ্ন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করা।

মাত্র একটি ভাঙাচোরা মাটির ঘরে ঠাঁই এ পরিবারের। ঘরের চারপাশের দেয়ালে ফাটল, টিনের চাল দিয়ে পানি পড়ে ভেতরে, নেই ফ্যান, নেই পড়ার টেবিল পড়াশোনার ন্যূনতম পরিবেশও নেই। তবু সেই সেমাইভেজা ঘরেই কেরোসিনের আঁধারে রাত জেগে পড়েন আরিফা। চোখে আলো নেই, তবু মন থেকে আলো হারায়নি কখনো।

আরিফার বাবা সোহারাব হোসেন পেশায় ভ্যানচালক। প্রতিদিনের খাটুনি শেষে আয় দাঁড়ায় ২০০-৩০০ টাকা। সেই টাকায় চলে পাঁচজনের সংসার। মেয়ের পথের কাঁটা সরাতে তিনি একমুহূর্ত থেমে নেই। বলেন, মেয়ে এক চোখে কিছুই দেখে না, আরেক চোখেও খুব কম দেখে। তার পরও ওর ইচ্ছা আর পরিশ্রম দেখে আমি হাল ছাড়তে পারি না। ডাক্তার হবে এই স্বপ্নেই বেঁচে আছি।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আরিফার শৈশব ছিল কষ্টে ভরা। অভাবের কারণে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। স্কুলে যাতায়াতও ছিল বড় যুদ্ধের মতো। বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে চালিতাবাড়িয়া হাইস্কুলে যেতে তাকে প্রতিদিন একাধিকবার রাস্তা পার হতে হতো। সামান্য দেখার ক্ষমতা থাকায় দুর্ঘটনার ঝুঁকিও ছিল বেশি। তবু নিয়মিত স্কুলে গেছেন, এক দিনও পিছিয়ে পড়েননি। এসএসসি পাস করার পর এবার তিনি ভর্তি হয়েছেন কলারোয়া সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে। বাড়ি থেকে কলেজের দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার। প্রতিদিন যাতায়াত খরচ প্রায় ১০০ টাকা।

আরিফা জানান, অনেক দিন টাকা না থাকায় ক্লাস করতে যেতে পারেন না। শুরু হয়েছে এইচএসসির ক্লাস, কিন্তু বইগুলো এখনো কেনা হয়নি। সহপাঠীদের কাছ থেকে ধার নিয়ে পড়ছেন তিনি। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী আরিফা। কিন্তু পরিবারের অনিশ্চিত অর্থনৈতিক অবস্থাই তার সবচেয়ে বড় ভরসাহীনতা। চোখের কোণে পানি জমিয়ে বলেন, এক চোখে কিছুই দেখি না, আরেক চোখে খুব কম দেখি। তবু আমি পড়তে চাই, ডাক্তার হতে চাই। বাবা কত দিন পারবেন জানি না। সরকার আর সমাজের সহায়তা চাই, আমার স্বপ্ন যেন মাঝপথে থেমে না যায়।

আরিফার মা ফিরোজা খাতুন বলেন, মেয়ের প্রতি মাসে এক হাজার টাকার ওষুধ লাগে। দারিদ্র্যের কারণে বেশির ভাগ সময়ই কিনতে পারি না। নিজের খাবারের চেয়ে মেয়ের পড়াশোনাটা চালিয়ে নেওয়াটাই আমাদের কাছে বড়। এ পরিবারের আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে প্রায়ই না খেয়ে দিন কাটাতে হয়। তবু মেয়ের পড়াশোনায় যেন বাধা না আসে, সেই চেষ্টাই করেন বাবা-মা।

কায়বার প্রাক্তন প্রফেসর আব্দুল মাজেদ বলেন, আরিফা অত্যন্ত ভদ্র ও মেধাবী। দৃষ্টিশক্তি নেই, তবু প্রতিটি পরীক্ষা দিয়েছে নিজের প্রচেষ্টায়। ইউনিট টেস্ট থেকে বোর্ড পরীক্ষাÑ সব জায়গায়ই নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। তারা বলেন, বাবা দিনরাত ভ্যান চালান শুধু মেয়ের স্বপ্নটাকে বাঁচিয়ে রাখতে। এই পরিবারের সরকারি সহায়তা পাওয়া জরুরি।

শার্শা উপজেলা প্রশাসক কাজী নাজিব হাসান আশ্বাস দিয়ে বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও আরিফার এমন অসাধারণ সাফল্য সত্যিই অনুকরণীয়। দারিদ্র্য ও শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে উপেক্ষা করে যে দৃঢ়তার সঙ্গে সে এগিয়ে যাচ্ছে, তা আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরিফার শিক্ষাজীবনে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমরা চাই এ ধরনের মেধাবী শিক্ষার্থীর স্বপ্ন কোনো বাধায় থেমে না যাক।

দৃষ্টি না থাকলেও দৃঢ় সংকল্প আর মেধা দিয়ে হাজারো বাধা পেরিয়ে এগিয়ে চলেছেন আরিফা। সমাজ ও রাষ্ট্রের সহযোগিতা পেলে এই অদম্য কিশোরী হয়তো একদিন সত্যিই দাঁড়াবেন সাদা এপ্রোন পরে মানুষের সেবায় নিবেদিত একজন ডাক্তার হিসেবে।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!