শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার গড়জরিপা উত্তরপূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বছরের পর বছর চলছে মাত্র পাঁচজন শিক্ষার্থী নিয়ে। অথচ প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত আছেন ৫ জন শিক্ষক। ফলে স্থানীয়দের অভিযোগ, এখানে সরকারিভাবে কোটি টাকা ব্যয়ে শিক্ষক নিয়োগ ও মাসিক বেতন-ভাতা দেওয়া হলেও শিক্ষার্থীর অভাবে বিদ্যালয় কার্যত অকার্যকর।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত মাত্র ৫ শিক্ষার্থী। প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল হালিমসহ তিনজন সহকারী শিক্ষিকা উপস্থিত থাকলেও একজন নারী শিক্ষক ঘুমিয়ে ছিলেন প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষে। অপর শিক্ষক জিয়াউর রহমান ছিলেন অনুপস্থিত।
এমন অবস্থায় স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিদ্যালয়ে ছাত্র নেই, ক্লাস হয় না। তবুও মাসে মাসে সরকারি টাকা হজম করছেন শিক্ষকরা। কেউ দেখে না, কেউ জবাবদিহিতাও করে না।’
জানা গেছে, ২০১০ সালে একটি টিনের ছাপড়া ঘরে সাইন বোর্ড লাগিয়ে শুরু হয় বিদ্যালয়টির কার্যক্রম। ২০১৩ সালে জাতীয়করণ হলেও শুরু থেকেই শিক্ষার্থী সংকটে ভুগছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানেও সকালে ৫-৭ জন ও বিকেলে ৫-৬ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে।
বড় প্রশ্ন হলো- বিদ্যালয়টির মাত্র আধা কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে আরেকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যা ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও জাতীয়করণ নীতিমালা ২০১৩’-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল হালিম দাবি করেন, ‘অভিভাবকরা দারিদ্র্যের কারণে সন্তানদের স্কুলে পাঠান না। অনেকে অটোরিকশা চালায়, কেউ কেউ মাদ্রাসায় চলে যায়। আমরা চেষ্টা করছি শিক্ষার্থী আনতে।’
সহকারী শিক্ষিকারা বলেন, ‘নিয়মিত উপস্থিত থাকলেও শিক্ষার্থী কম। তাদেরও আগ্রহ নেই। অনেক সময় ক্লাসে কেউ আসে না।’
কুরুয়া ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমি এপ্রিল থেকে দায়িত্বে আছি, বিষয়টি জানা ছিল না। অল্প শিক্ষার্থী থাকলে বিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। আমরা একজন কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছি, প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি স্বীকার করেন, ‘বছরের পর বছর ধরে এই অনিয়ম চললেও তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেননি।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের ‘ভূতুড়ে স্কুল’ দেশের আরও অনেক স্থানে রয়েছে। বাস্তবতা বিবেচনায় বিদ্যালয় একীভূতকরণ বা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রাথমিক শিক্ষায় প্রতিনিয়ত বাজেট বাড়ছে, বাড়ছে শিক্ষক নিয়োগ ও অবকাঠামো নির্মাণ। অথচ গড়জরিপার মতো বহু বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর অভাবে ক্লাস হয় না, শিক্ষকরা নিয়মিত বেতন নিচ্ছেন ঘরে বসেই।
স্থানীয়দের দাবি, এই বিদ্যালয় অবিলম্বে বন্ধ অথবা একীভূত করে সরকারের অর্থ অপচয় বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় সারা দেশের আরও বহু বিদ্যালয় একই দুর্নীতির বলয়ে ধ্বংস হবে।