বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০২৫, ০১:১৩ এএম

রাস্তায় চার সন্তান নিয়ে জান্নাতের জীবনযুদ্ধ

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০২৫, ০১:১৩ এএম

রাস্তায় চার সন্তান নিয়ে  জান্নাতের জীবনযুদ্ধ

চোখে-মুখে তার বিষণœতার ছাপ। দুই চোখে অনিশ্চয়তার ছায়া। কাঁধে তার চার শিশুসন্তানের ভার। জীবনযুদ্ধে একা এই মায়ের নাম জান্নাত আক্তার। ঠাকুরগাঁও শহরের রাস্তায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা যাচ্ছে কিছুদিন ধরে। লোহার তৈরি খাঁচার মতো এক ছোট্ট গাড়িতে বসে আছে তিন সন্তান, সেই গাড়ি ঠেলে চলেছে সাড়ে তিন বছরের ছোট্ট কন্যাশিশু মরিয়ম। পাশে হাঁটছেন মা জান্নাতÑ চোখে প্রশ্ন ‘আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ কী?’
জান্নাতের গল্পটা কষ্টের, অসম লড়াইয়েরÑ বেঁচে থাকার কঠিন সংগ্রামের। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মালিয়াটি কাজীবাড়ী গ্রামে। জান্নাত জানান, বছর পাঁচেক আগে ঢাকায় হাবিল নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। পরিচয় থেকে প্রেম-বিয়ে। দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে ঠাকুরগাঁওয়ের ঢোলারহাট ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের হাবিলের সংসারে আসেন জান্নাত।
বিয়ের পরে কেটে যায় কিছু বছর। এর মাঝে জন্ম নেয় এক মেয়ে। বিপত্তি বাধে ১৩ মাস আগে একসঙ্গে জন্ম নেয় তার তিন সন্তানÑ এক ছেলে ও দুই মেয়ে। এটাই যেন কাল হয়ে দাঁড়ায়। স্ত্রী আর সন্তানদের দায় নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে পালান স্বামী হাবিল। এরপর থেকেই জান্নাতের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার।
‘চার সন্তান নিয়ে কীভাবে চলব? কেউ পাশে নেই। কত দিন না খেয়ে থেকেছি, সেটা আমি জানি আর আল্লাহ জানে।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন জান্নাত। স্বামীর অনুপস্থিতিতে পরিবারের ভার একা কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে তাকে। বাবার বাড়ি থেকে সামান্য সহযোগিতা পেয়েছেন, কিন্তু তা দিয়ে কত দিন? বাধ্য হয়ে আত্মহত্যার কথাও ভেবেছেন। এমনকি কিডনি বিক্রি করে সন্তানদের মুখে ভাত তুলে দেওয়ার চিন্তাও করেছিলেন। কিন্তু সন্তানদের কথা ভেবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন জান্নাত। 
এমন পরিস্থিতিতে সন্তানদের নিয়ে চলার জন্য তৈরি করেছেন লোহার খাঁচার মতো এক গাড়ি, যার ভেতরে থাকে তিন সন্তান। গাড়িটি তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৭ হাজার টাকা। জান্নাত বলেন, ‘প্রথমে লজ্জায় রাস্তায় নামিনি। কিন্তু যখন দেখলাম আর কোনো পথ নেই, তখন বাধ্য হয়ে সন্তানদের নিয়ে বের হই। কেউ দেয়, কেউ দেয় না। চেষ্টা করি ওদের মুখে প্রতিদিন খাবার তুলে দিতে।’
প্রখর রোদ, বৃষ্টি কিংবা মানুষের অবহেলাÑ কিছুই থামাতে পারেনি জান্নাতকে। প্রতিদিন সকালে বের হন সন্তানদের নিয়ে, কখনো একমুঠো খাবারের আশায়, কখনো মানুষের দয়ায় একটি ঘর পাওয়ার আশায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জান্নাতের জীবনসংগ্রাম এখন সবার জানা। প্রতিবেশীরা যখন যা পারেন সাহায্য করেন। কিন্তু এতজনের ভার একা টানা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। তারা আরও জানান, ‘জান্নাতের স্বামী একসময় বাচ্চাদের দায়িত্ব না নিয়েই পালিয়েছিলেন। এখন মানুষ যখন সাহায্য করতে শুরু করেছে, তখন সে ফিরে এসেছে। আমরা ভয় পাই, জান্নাতের শেষ সম্বলটুকুও সে হয়তো কেড়ে নেবে।’
এই প্রতিবেদন লেখার সময় গত মঙ্গলবার বিকালে স্বামী হাবিল ফিরে আসেন স্ত্রী-সন্তানের কাছে। কিন্তু স্থানীয়রা বলছেন, ভালোবাসার টান থেকে সে ফিরে আসেনি। জান্নাতের সংগ্রামকে পুঁজি করে সুবিধা নেওয়ার উদ্দেশ্যেই সে এসেছে।
জান্নাত আকুতি জানিয়ে বলেন, ‘একটা ঘর চাই। একটু সহযোগিতা চাই। যাতে সন্তানদের মুখে একমুঠো ভাত তুলে দিতে পারি। আমি ভিক্ষা চাই না, বাঁচতে চাই।’
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিষয়টি জানা গেছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সরদার মোস্তফা শাহিন জানিয়েছেন, ‘জান্নাতের পরিবারের ব্যাপারে আমরা অবগত হয়েছি। পরিবারটিকে আবাসন ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।’
একজন মায়ের এই লড়াই শুধুই খাবার বা আশ্রয়ের জন্য নয়, বরং সম্মানের জন্য, সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য। এই সংগ্রাম আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়, প্রশ্ন তোলে, আমরা কি এই মায়ের পাশে দাঁড়াতে পারি না?
 

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!