আগের দিন ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আগার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কয়েক মাস আগে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে যেভাবে বাংলাদেশের বিপক্ষে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলেছিল পাকিস্তান, সেই ধারা কি মিরপুরেও বজায় থাকবে? টেকনিক্যালি উত্তর দিয়ে সালমান বলেছিলেন, উইকেটের অবস্থা বুঝে খেলবেন তারা। গতকাল মিরপুরে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই আক্রমাত্মক ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করে পাকিস্তান। আর এই আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে গিয়েই মিরপুরে ‘ধরা’ খেল তারা। প্রথম পাওয়ার প্লেতে ৪ উইকেট হারিয়ে মহাবিপর্যয়ে পড়ে সফরকারীরা। বোলিংয়ে দাপট দেখিয়ে যান বাংলাদেশের বোলাররা। বিশেষ করে বোলিংয়ে নজর কাড়েন তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান। তাদের বিধ্বংসী বোলিংয়ের সুবাদে ১৯.৩ ওভারে পাকিস্তান ১১০ রানেই অলআউট হয়েছে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে শ্রীলঙ্কায় সিরিজ-জয়ী ম্যাচের একাদশে একটি পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ। পেসার শরিফুল ইসলামের জায়গায় একাদশে নেওয়া হয় তাসকিন আহমেদকে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই অভিজ্ঞ তাসকিনের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক লিটন কুমার দাস। নতুন বল হাতে নিয়ে নিজের প্রথম ওভারেই বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন তাসকিন। ওপেনার সাইম আইয়ুবকে মোস্তাফিজের হাতে ক্যাচে পরিণত করেন। পরের ওভারেই জ¦লে ওঠেন শেখ মেহেদী হাসান। তার বলে ডিপ মিড উইকেটে শামীম পাটোয়ারীর কাছে ক্যাচ দেন মোহাম্মদ হারিস। পরপর ওভারে উইকেট হারালেও আগ্রাসী ব্যাটিং অব্যাহত রাখার চেষ্টা করেন পাকিস্তানিরা। তাতেই বিপদে পড়ে সফরকারীরা। আবার পরপর ওভারে বাংলাদেশকে আনন্দের উপলক্ষ এনে দেন মোস্তাফিজ ও তানজিম হাসান সাকিব। পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আগা সাকিবের বল খেলতে পারছিলেন না। বেশ নার্ভাস দেখাচ্ছিল তাকে। শেষ পর্যন্ত সাকিবের বলে ধরাশায়ী হয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরত যেতে হলো সালমানকে।
সাকিবের বল কিপার লিটনের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। এরপর হাসান নেওয়াজের উইকেটটি নেন মোস্তাফিজ। তখন ৬ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪১ রান। তবে তখনো উইকেট ধরে রেখেছিলেন পাকিস্তান ওপেনার ফখর জামান। বেশ কয়েকবার ‘জীবন’ পাওয়ার পর পাকিস্তানের স্কোর সামনের দিকে নিয়ে যান তিনি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তারও। রানআউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন ফখর। পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৪ রান আসে তার ব্যাট থেকেই। এর আগে মোহাম্মদ নেওয়াজও রানআউটের ফাঁদে পড়লে আরও বিপদে পড়ে পাকিস্তান দল। শেষ দিকে মোস্তাফিজ ও তাসকিনের গতির সামনে নির্ধারিত ওভারের আগেই অলআউট হয় পাকিস্তান। ৩.৩ ওভারে ২২ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট শিকার করেন তাসকিন। ৪ ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে ২ উইকেট পান মোস্তাফিজ।
রিশাদ ৩ ওভারে ১৯ রানে উইকেট পাননি। মিরপুরে সিরিজের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে কম রানে অলআউট করার পেছনে কৃতিত্ব দিতে হবে অধিনায়ক লিটনকেও। যেভাবে বোলিংয়ে পরিবর্তন আনেন তিনি, একজন দক্ষ অধিনায়কের পরিচয় দিয়েছেন। বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় বোলিংয়ের কাছে হার মানতে হয়েছে পাকিস্তানিদের।
মিরপুরে আনন্দ-উচ্ছ্বাস করেছেন তাসকিন-মোস্তাফিজরা। বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে রেকর্ডের পাতায়ও নাম উঠেছে মোস্তাফিজের। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৪ ওভারের বোলিং কোটা পূর্ণ করে সবচেয়ে কম রান দেওয়া বাংলাদেশি বোলার হলেন এখন এই বাঁহাতি পেসার। এর আগে ৪ ওভারের বোলিং কোটা পূরণ করে রিশাদ হোসেন, তানজিম হাসান সাকিব ও মোস্তাফিজ নিজেও ৭ রান দিয়েছিলেন। এবার অন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেলেন মোস্তাফিজ। তার প্রশংসা হচ্ছে ক্রিকেট মহলে। মোস্তাফিজের বল খেলতেই পারেনি পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা।
অসাধারণ বোলিং পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছেন এই কাটার মাস্টার। অতীতেও পাকিস্তানের বিপক্ষে বিধ্বংসী বোলিং করার রেকর্ড রয়েছে মোস্তাফিজের। আবারও তার ভয়ংকর রূপ দেখল পাকিস্তানিরা। মোস্তাফিজের বোলিং নৈপুণ্যের দিন আরেকটি রেকর্ড হয়েছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের বিপক্ষে অলআউট হলো পাকিস্তান দল।