ঢাকা শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

সাইফের ক্ল্যাসিক ব্যাটিংয়ের গল্প

স্পোর্টস রিপোর্টার
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৫, ১২:৫৪ এএম

এশিয়া কাপে শীর্ষ রান সংগ্রাহকদের মধ্যে সাইফ হাসানও একজন। ভারতের অভিষেক শর্মার পরই বাংলাদেশের এই ওপেনার সবচেয়ে বেশি সংগ্রহ করেছেন। অভিষেক ৫ ম্যাচ করেন ২৪৮ রান। দুটি ফিফটির ইনিংস রয়েছে তার। ছক্কা হাঁকিয়েছেন ১৭টি। আর মাত্র তিন ম্যাচ খেলেই সাইফের নামের পাশে জমা পড়েছে ১৬০ রান। দুটি ষাটোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেছেন সাইফ। তিন ম্যাচে তার রান যথাক্রমে ৬৯, ৬১ ও ৩০। রান তোলার ক্ষেত্রে ছক্কা হাঁকানোতেও পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের ওপেনার।

১০টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে ৩০ রান করে নজর কাড়েন সাইফ। এরপর বাকি দুই ম্যাচে একাদশে জায়গা পেতে তার আর সমস্যা হয়নি। আস্থার প্রতিদান বেশ ভালোভাবেই দিচ্ছেন সাইফ। এত দিন ধরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যে মানের একজন ওপেনার খুঁজছিল বাংলাদেশ, সাইফের মাধ্যমে ওপেনিংয়ে একটা সমাধান মিলছে। সাইফ নিজেকে আধুনিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের একজন প্রকৃত ব্যাটসম্যান হিসেবেই গড়ে তুলেছেন। মাঠের চারদিকে শট খেলার অসাধারণ দক্ষতা রয়েছে তার। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে যে ইনিংসটি খেলেছেন, সেটি আরেকটি প্রমাণ।

বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ‘পোস্টার বয়’ হিসেবেই নিজেকে মেলে ধরছেন ২৬ বছর বয়সি সাইফ। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে তার ব্যাটই হাসল। অন্যদের ব্যর্থতায় সাইফের ৬৯ রানের ইনিংসটি বৃথা গেছে। নাগালের মধ্যে পেয়েও ভারতকে হারানো গেল না। তবে এশিয়া কাপের মঞ্চে যে সাইফকে দেখা যাচ্ছে, তার পেছনের গল্প কিন্তু কঠোর পরিশ্রম আর সংগ্রামের। এশিয়া কাপের আগে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে চার বছরে মাত্র আটটি ম্যাচ খেলেছেন। তা-ও দুই বছর পর পর। ২০২১ সালে অভিষেকের বছর দুই ম্যাচ খেলেন। মাঝে দুই বছর বিরতির পর ২০২৩ সালে ফিরে তিন ম্যাচ খেলেন। সেটিও আবার মূল জাতীয় দলে নয়, এশিয়াডের দলের হয়ে। মূল জাতীয় দলে তার প্রত্যাবর্তন গত মাসে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সিরিজে।

এশিয়া কাপের আগে এই ছিল সাইফের ক্যারিয়ারের গল্প। টেস্ট ওপেনার হিসেবে ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হয়েছিল সাইফের। মাত্র ছয় ম্যাচেই আটকে আছে তার টেস্ট ক্যারিয়ার। তবে দীর্ঘদিন জাতীয় দলের বাইরে থেকে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। আর ছিলেন সুযোগের সন্ধানে। এবার সুযোগ পেয়েই ক্রিকেটের বড় মঞ্চে নিজেকে মেলে ধরলেন সাইফ। এই ক্রিকেটারের রূপান্তর আলোচনায় আসে মূলত নেদারল্যান্ডস সিরিজে। গত আগস্টে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ১৯ বলে তার বিস্ফোরক ৩৬ রানের অপরাজিত ইনিংসটি ছিল বেশ আলোচিত। তখন সাইফ বলেছিলেন, লেগ সাইডে শটের রেঞ্জ বাড়াচ্ছেন। পাওয়ার হিটিং কোচ জুলিয়ান উডের অধীনে শটের সম্ভারও তিনি বাড়িয়েছেন। সেই প্রমাণ ব্যাট হাতে দিচ্ছেন এশিয়া কাপে।

বাঁহাতি স্পিনারকে এগিয়ে এসে ছক্কা মেরেছেন। পুল করেছেন, কাভারের ওপর দিয়ে খেলেছেন। ‘ফ্লিক’ করে মারা চোখজুড়ানো ছক্কা দেখা যাচ্ছে তার ব্যাটে। এবার তার ফেরাটা সম্পূর্ণ আলাদা। নিজেকে সাজিয়েছেন নতুন আঙ্গিকে। পরিণত হয়েছেন এক টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং অলরাউন্ডারে। উদ্বোধনীতে মারকাটারি ব্যাটিং তো করতেই পারেন, আবার প্রয়োজনে বল হাতেও রাখতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তার হাতে রয়েছে চোখধাঁধানো সব শট। স্ট্রাইক রোটেট করার দক্ষতা এবং ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো ছক্কা মারার সামর্থ্য। আর এই বদলে যাওয়া সাইফকে দেখে মুগ্ধ বাংলাদেশ দলের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনও। এই কোচ বলেছিলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছয়-সাত ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ার পর ফিরে আসা অনেক কঠিন কাজ।

এটা সাইফের ক্রেডিট।’ ক্রিকেটে সাইফের আদর্শ ভারতের তারকা ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা। দুজনেই মারতে পারেন চোখধাঁধানো ছক্কা, চাপে থাকা ম্যাচে ঘুরিয়ে দিতে পারেন খেলার গতিপথ। এই ফিরে আসা কেবল ফর্মে ফেরা নয়, এটা এক মানসিক রূপান্তরও বটে। কোচ সালাহউদ্দিনের মতে, ‘সাফল্য কত দিন ধরে করে যাচ্ছে এটা জরুরি। অনেকেই চেষ্টা করে। অনেকের ধৈর্য ছয় মাস, এক বছর থাকে। ওর চার বছর ছিল।’ সাইফের এই ফিরে আসা নিয়ে কথা হচ্ছে, প্রশংসাও হচ্ছে। তবে সামনে তার আরও চ্যালেঞ্জ নেওয়ার বাকি।