অপেক্ষার পালা শেষ। আজ পর্দা উঠছে তিরে এশিয়ান আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপের। গত কদিন ধরে টঙ্গী ও জাতীয় স্টেডিয়ামে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা আরচাররা নিজেদের প্রস্তুত করে নেন। এবার শুরু হচ্ছে চূড়ান্ত লড়াই। রিকার্ভ ও কম্পাউন্ড মিলিয়ে ১০ ইভেন্টের পদকের লড়াইয়ে ৩০টি দেশের মোট ২০৯ জন আরচার অংশ নিচ্ছেন এবার। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী আরচারও অংশ নিচ্ছেন, রিকার্ভে ৫৪ জন এবং কম্পাউন্ডে ৩৮ জন মিলিয়ে মোট ৯২ জন। এ ছাড়া ৮০ জন অফিসিয়াল ও ১৭ জন অতিথিও অংশ হচ্ছেন এশিয়ান আরচারির সর্বোচ্চ আসরের এবারের আয়োজনে। ৮ নভেম্বর প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে শেষ হবে ১৪ নভেম্বর। জাতীয় স্টেডিয়াম ও আর্মি স্টেডিয়ামÑ এ দুই ভেন্যুতে হবে প্রতিযোগিতা।
এই চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজক হতে অবশ্য বাংলাদেশকে পোড়াতে হয়েছিল অনেক কাঠখড়। ভারত ও চীন ছিল আয়োজক স্বত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী। ভারত ‘ছাড়’ দিলে চীন ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। ভোটাভুটিতে ১৪-১০ ব্যবধানে জেতে বাংলাদেশ। তাতে নিশ্চিত হয় ২০১৭ ও ২০২১ সালের পর তৃতীয়বারের মতো এই আসরের আয়োজক হিসেবে বাংলাদেশের নাম। সেই থেকে শুরু হয় বাংলাদেশ আরচারি ফেডারেশনের নতুন চ্যালেঞ্জও। বিভিন্ন দেশের আরচারদের, কর্মকর্তাদের ঢাকায় আনা, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে থাকার ব্যবস্থা করা, প্রস্তুতির ভেন্যু নির্ধারণ, আরচারদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করাসহ নানা চ্যালেঞ্জ দাঁড়ায় ফেডারেশনের সামনে। সরকারের সহযোগিতা, সিটি গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় বাধাগুলো উৎরে যায় আরচারি ফেডারেশন। চ্যালেঞ্জ ছিল আরও। বিশেষ করে নানা সংঘাতে বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইয়েমেনের মতো দেশগুলোর আরচারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হয়। ফিলিস্তিন থেকে অংশ নিচ্ছেন চারজন আরচার। এর মধ্যে এক মেয়েÑ রাশা ইয়াহিয়া আহমেদ। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা থেকে উঠে আসা রাফা বর্তমানে লেখাপড়া করছেন ওমানের মাসকটের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে, চাকরি করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। তিন বছর আগে তির-ধনুক হাতে তুলে নেওয়া এই আরচার বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসায়, আরচারি ফেডারেশনের আয়োজনে মুগ্ধতার কথা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের আরচারিপ্রেমীদের চোখ অবশ্য থাকবে নিজেদের তারকা আব্দুর রহমান আলিফ, সাগর ইসলাম, বন্যা আক্তারদের দিকে। ২০২১ সালের আসরে একটি রুপা ও দুটি ব্রোঞ্জ পেয়েছিল বাংলাদেশ। তিনটি পদকই ছিল দলগত ইভেন্ট থেকে পাওয়া। রিকার্ভ মিশ্র থেকে এসেছিল রুপার পদক। ২০২৩ সালের সবশেষ থাইল্যান্ডের আসরে অবশ্য খালি হাতে ফিরতে হয় দলকে। এবার সেই হতাশার বলয় থেকে বাংলাদেশকে বের করে আনতে চান আরচাররা। রিকার্ভ ইভেন্টের সাগর ইসলাম (আারচারির র্যাঙ্কিংয়ে ৭৫তম) বলেন, ‘আমাদের দেশের মাঠে এবারের প্রতিযোগিতা। স্বাভাবিকভাবে অনেক কিছু আমাদের পক্ষে থাকবে। এখানকার সবকিছুই আমাদের জানা। এই প্রতিযোগিতার জন্য আমরা বছরজুড়ে ক্যাম্পে কঠোর পরিশ্রম করেছি। আশা করি, পরিশ্রমের ফল আমরা পাব। দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারব।’ বাংলাদেশের আরচার কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখ বলেন, ‘আরচারদের প্রতি আমার আস্থা আছে। ব্যাংককের গত আসরে আমরা কোনো পদক পাইনি। এ নিয়ে হতাশা আছে ওদের মধ্যে। ব্যাংককের গত আসরে আমরা কোনো পদক পাইনি। এ নিয়ে হতাশা আছে ওদের মধ্যে। এবার ভালো ফল করতে ওরা উন্মুখ হয়ে আছে।’
আরচারি ফেডারেশন অবশ্য খেলোয়াড়দের ওপর প্রত্যাশার চাপ দিতে রাজি নয়। ফেডারেশনের সদস্য ও লোকাল অর্গানাইজিং কমিটির চেয়ারম্যান কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপল যেমন বললেন, ‘এবারের আসরে আমাদের সাফল্যের ধারা যেন থাকে, এ জন্য আপনারা দোয়া করবেন। এর আগে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে আমরা অনেক পদক পেয়েছি। সোনা ৪৩টির বেশি, রুপা ও ব্রোঞ্জ ৫০টির বেশি আছে আমাদের অর্জনের শোকেসে। আমরা অবশ্যই চাইব এবার বাংলাদেশ সাফল্য পাক। যদি সেমিফাইনাল পর্যন্ত যেতে পারি, যদি সেমিফাইনাল টপকাতে পারি, তাহলে আমরা আশা করি, ফাইনালেও ভালো করব।’ উদ্বোধনী দিনে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে হবে আরচারির কংগ্রেস ও নির্বাচনও। এবার সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন বাংলাদেশ আরচারি ফেডারেশনের সদস্য কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপল।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন