ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে বাংলাদেশ টেবিল টেনিস মিশ্র বিভাগে রৌপ্য পদক পেয়েছে। খৈ খৈ মারমা ও জাভেদ আহমেদকে নিয়ে গতকাল বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনে সংবাদ সম্মেলন করে টেবিল টেনিস ফেডারেশন। সেখানে দুই পদকজয়ী খেলোয়াড় সাফল্যের গল্প, সম্ভাবনা ও চাহিদার কথা বলেছেন। পাশাপাশি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আহমেদ সনেটও পরিকল্পনা ও সংকটের চিত্র তুলে ধরেছেন। সাবেক টিটি খেলোয়াড় ও বিকেএসপির কোচ মোস্তফা বিল্লাহ ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে টিটির সঙ্গে জড়িত মোস্তফা খৈ খৈ ও জাভেদের অর্জনকে ঐতিহাসিক আখ্যায়িত করে বলেন, ‘বাংলাদেশের টেবিল টেনিসের ৫৩ বছর বয়সে এত বড় রেজাল্ট কখনো আসেনি। খেলোয়াড়েরা অত্যন্ত আন্তরিক ছিল এবং সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেছে। এতেই এই ফল এসেছে।’ অলিম্পিক, এশিয়ান কিংবা কমনওয়েলথের মতো বড় ও অধিক মর্যাদাপূর্ণ গেমস না হলেও ইসলামিক গেমসও গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্রীড়া আসর।
সেই গেমসে বাংলাদেশ রৌপ্য পদক পেয়েছে, যা টিটিতো বটেই, ক্রীড়াঙ্গনের জন্যও বড় অর্জন। সম্প্রতি এশিয়ান আরচারি রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক পাওয়া আরচারদের ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ১০ লাখ করে আর্থিক পুরস্কার প্রদান করেছেন। এশিয়া কাপ খেলার সম্ভাবনা শেষ হওয়ার পরও ভারতকে হারিয়ে ফুটবল দল পেয়েছে ২ কোটি টাকার ঘোষণা। অথচ টিটির এমন সাফল্যের পরও নেই মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ঘোষণা। এর পরও আশা ছাড়ছেন না ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আহমেদ সনেট, ‘এনএসসি, অলিম্পিক ও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পুরস্কার বা সংবর্ধনা পাওয়ার সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি। আমরা আশাবাদী, তারা টেবিল টেনিসের এই কৃতী সাফল্য অর্জনকারীদের অবশ্যই সম্মানিত করবেন।’
দক্ষিণ এশিয়ার গ-ি পেরিয়ে মহাদেশীয় পর্যায়ে রৌপ্য পদক অর্জন করায় টেবিল টেনিস ফেডারেশন খৈ খৈ মারমা ও জাভেদ আহমেদকে ১ লাখ টাকা আর্থিক পুরস্কার প্রদান করবে। টেবিল টেনিসের ঐতিহাসিক সাফল্যের পরও এত স্বল্প পরিমাণ অর্থ নিয়ে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের ব্যাখ্যা, ‘ক্রিকেট, ফুটবল ফেডারেশনের মতো অর্থ থাকলে আমরা আরও অনেক বেশি দিতাম। আর্থিক সংকটের মধ্যেও আমরা তাদের ১ লাখ টাকা করে প্রদান করছি।’ টেবিল টেনিসে পুরুষ খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম সিনিয়র জাভেদ আহমেদ। গত কয়েক বছর বিভিন্ন আন্দোলন ও অধিকার আদায়ে বেশি সোচ্চার ছিলেন। নতুন কমিটি আসার পরও সিলেকশন না র্যাঙ্কিং, তা নিয়েও বেশ সংকটময় সময় পার করেছেন জাভেদ। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বাংলাদেশের টেবিল টেনিসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ অর্জনের পর জাভেদের প্রতিক্রিয়া, ‘আমাদের এই অর্জন এক দিনে আসেনি। বিগত দিনের পরিশ্রম ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই এই ফলাফল। দেশের হয়ে আমরা সব সময় ইতিবাচক ফলাফলের চেষ্টা করি, কখনো ক্লিক করে আবার করে না। এবার আমাদের পারফরম্যান্স, চেষ্টা, ভাগ্যসহ সবকিছুই কাজ করেছে, এ জন্য পদক।’
নারী টেবিল টেনিস মানেই গত এক দশক সোনাম সুলতানা সোমা কিংবা সাদিয়া রহমান মৌ। এ দুজনকে ছাপিয়ে খৈ খৈ মারমা ইসলামিক গেমসে পদক জিতেছেন। তার স্বপ্নের পরিধিতে সরাসরি অলিম্পিক খেলা, ‘গত ইসলামিক গেমসে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত খেলেছিল। এবার আমাদের লক্ষ্য ছিল অন্তত কোয়ার্টার পর্যন্ত যাওয়া, এরপর সম্ভব হলে এগিয়ে যাওয়া। কোয়ার্টার প্রতিপক্ষ পাওয়ার পর জাভেদ ভাই বলল চান্স আছে। চেষ্টা করলাম হয়ে গেল। আমি চাই একদিন আমরা অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করে খেলব। হোক সেটা সিঙ্গেল, ডাবল কিংবা টিম ইভেন্টে।’ বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রীড়া আসর অলিম্পিক। গলফার সিদ্দিকুর রহমান, আরচার রোমান সানা ও সাগর ইসলাম ছাড়া বাংলাদেশের অন্য কোনো ক্রীড়াবিদ অলিম্পিকে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি। খৈ খৈ মারমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন অনেক কঠিন হলেও অসম্ভব কিছু মনে করছেন না জাভেদ আহমেদ, ‘আমরা আরও সুযোগ-সুবিধা পেলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এরকম সাফল্য নিয়মিত আনতে পারব। জাতীয় দলে যারা খেলে, তাদের অন্তত মাসিক বেতন বা আর্থিক আয়ের একটা নিশ্চয়তা থাকা দরকার। পরিবার বা ব্যয় নিয়ে যদি দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়, তাহলে তো খেলা কঠিন।’
জাভেদ ইসলামিক গেমসে পদক জিতলেও তিনি পূর্ণাঙ্গভাবে অনুশীলন করতে পারেননি। কারণ দিনের একটা সময় তাকে কোচিং করিয়েও আর্থিক স্বাবলম্বীতা অর্জন করতে হয়েছে। এ নিয়ে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা অবশ্যই চাই খেলেয়াড়দের আর্থিক সচ্ছলতা। ফেডারেশনের সেই সামর্থ্য নেই, এ জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, অলিম্পিক ও সরকার এবং অন্য স্পনসরদের সহায়তা প্রয়োজন। জাভেদ ও খৈ খৈয়ের এই সাফল্যের পর আশা করি তারা টেবিল টেনিসের প্রতি আরও আগ্রহী হবেন। আমরা ইরানি ও ভারতীয় কোচের সঙ্গে আলোচনা করছি। আর্থিক কারণে খানিকটা চিন্তায় রয়েছি, এর পরও একজন কোচ আনবই। ভেন্যুর সমস্যা রয়েছে, ডিসেম্বরে ১৫ থেকে বাকি সময় ব্যাডমিন্টন ব্যবহার করবে। ফলে তখন কোনো খেলা করা যাবে না।’
টেবিল টেনিস ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে অনুশীলন ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ হয়েছে কয়েকটি। যদিও অ্যাডহক কমিটির প্রধান কাজ দ্রুত সময়ে নির্বাচন আয়োজন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সম্প্রতি সব ফেডারেশনকে (ফুটবল, ক্রিকেট বাদে) নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার চিঠি নিয়েছে। এ নিয়ে টেবিল টেনিস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের ব্যাখ্যা,‘বিগত কয়েক বছর লিগ ও ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ হয়নি। এ দুটো প্রতিযোগিতা আয়োজন করব দ্রুত সময়ের মধ্যে। এরপর নির্বাচনের উদ্যোগ নেব।’

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন