শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫, ০১:১৮ এএম

নগর বনে কাশফুলের কাব্য

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫, ০১:১৮ এএম

নগর বনে কাশফুলের কাব্য

‘সবে তো এই বর্ষা গেল শরত এলো মাত্র, এরই মধ্যে শুভ্র কাশে ভরল তোমার গাত্র।’ কবি নির্মলেন্দু গুণের এই কবিতার মতো দেখতে দেখতেই কাজল মেঘের ব্যস্ততা কেটে গেছে, আকাশে এখন শুভ্রতার হাতছানি আর বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে কাশবনের মিহি ঘ্রাণ। এক সময় গ্রাম-বাংলার প্রায় প্রতিটি মাঠ-ঘাটেই দেখা মিলত কাশফুলের। শরতের আগমনী বার্তা জানাত এই সাদা শুভ্র ফুলগুলো। কিন্তু নগরায়ণের চাপে সেই মাঠ আর খোলা প্রান্তর আজ হারিয়ে যাচ্ছে। ইট-পাথরের শহরে, কংক্রিটের দেওয়ালে আমরা যখন প্রকৃতির রূপ ভুলতে বসেছি, তখনো ঢাকার আশপাশে কয়েকটি জায়গায় দেখা মেলে এই অনিন্দ্য সুন্দর কাশবনের। কর্মব্যস্ত জীবনে একটুখানি অবসর কাটাতে ঘুরে আসতে পারেন এসব জায়গায়, আর হৃদয়ের ডায়েরিতে লিখতে পারেন নগর বনে কাশফুলের কাব্য। খোঁজ জানাচ্ছেন আরফান হোসাইন রাফি।

দিয়াবাড়ি

উত্তরার দিয়াবাড়ি এখন কাশফুলপ্রেমীদের তীর্থভূমি। বিশাল খোলা জায়গা, দূরে আকাশ ছুঁতে থাকা মেট্রোরেল লাইনের কাজ আর তার পাশে বিস্তীর্ণ মাঠ, শরৎ এলেই এখানে সাদা কাশফুলে ভরে ওঠে। ভোরে কিংবা বিকেলে যখন সূর্যের আলো ফুলের সাদা রঙে খেলা করে, তখন মনে হয় যেন মেঘ নেমে এসেছে মাটিতে। শুধু কাশফুল নয়, আরও আছে নানা আয়োজন। মাঠের চারপাশে রয়েছে ফুড কোর্ট, যেখানে হাঁসের মাংস, গরুর কালাভুনা, সামুদ্রিক মাছ, চটপটি-ফুচকা থেকে শুরু করে মৌসুমি পিঠার সম্ভারও পাওয়া যায়। ঘুরতে ঘুরতে ক্ষুধা লাগলে এসব খাবারের দোকান ভরিয়ে তুলতে পারে জিভের স্বাদ। শিশুদের জন্য আছে নাগরদোলা, জাম্পিং গ্রাউন্ড, এমনকি ভাসমান রেস্তোরাঁও। আর ঘোরাঘুরি শেষে বউবাজার থেকে কিনতে পারেন স্থানীয় কৃষকের আনা টাটকা ফলমূল, সবজি ও দুধ।

যেভাবে যাবেন:

ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে উত্তরা হাউস বিল্ডিংয়ে নেমে সোনারগাঁও জনপথ ধরে মাসকট প্লাজার সামনে রিকশা বা লেগুনায় দিয়াবাড়ি পৌঁছানো যায়। আবার মেট্রো রেলের উত্তরা সেন্টার বা উত্তরা ১ নম্বর স্টেশন থেকে নেমে হেঁটেই কাশবনের দেখা মিলবে।

নরসিংদীর নাগরিয়াকান্দি 

ঢাকার নিকটবর্তী জেলা নরসিংদীর নাগরিয়াকান্দি শরতে কাশফুল দেখার অন্যতম বিখ্যাত স্থান। বিস্তীর্ণ মেঘনা নদীর তীর, নদীর ওপর সেতু আর আশপাশের খোলা জায়গাজুড়ে যখন শুভ্র কাশ দুলতে থাকে, তখন মনে হয় যেন সাদা ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে। শীতকালে এখানে সূর্যমুখী ফুল ফোটে, আর শরতে সেই জায়গা দখল করে নেয় কাশফুলের দল। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে। নদীর বাতাসে চুল উড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাশবনের দিকে তাকালে যে প্রশান্তি পাওয়া যায়, তা অন্য কোথাও মিলবে না।

যেভাবে যাবেন:

গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ি বা কুড়িল থেকে ৭০-১০০ টাকায় নরসিংদী পৌঁছানো যায়। সেখান থেকে রিকশা বা অটোরিকশায় মাত্র ২০-৩০ টাকায় নাগরিয়াকান্দি যাওয়া সম্ভব।

৩০০ ফিট সড়ক

রাজধানীর কুড়িল থেকে শুরু হওয়া ৩০০ ফিট সড়ক শুধু আধুনিক সড়কই নয়, শরতের দিনে এখানে কাশবনের দৃশ্যও মন ছুঁয়ে যায়। রাস্তার দুপাশে ফুড কোর্ট, আড্ডার জায়গা আর পাশে বালু নদ মিলে এটি এখন এক জনপ্রিয় গন্তব্য। বিকেলের দিকে কাশফুলের মাঝে হেঁটে বেড়ানো, আবার রাতে ফুড কোর্টে আড্ডা, দুই-ই পাওয়া যায় এখানে। তবে এখানে বিশেষ আকর্ষণ হলো নীলা মার্কেট। হাঁসের মাংসের খ্যাতির কারণে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসেন এই বাজারে। এ ছাড়াও বারবিকিউ, নানা রকম চা আর বালু নদে নৌকা ভ্রমণ আপনাকে এনে দেবে বাড়তি আনন্দ।

যেভাবে যাবেন:

ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে কুড়িল চৌরাস্তায় এসে সিএনজি, বাস বা বাইকে সহজেই পৌঁছে যাবেন ৩০০ ফিট সড়কে।

আফতাবনগর 

হাতিরঝিল বা রামপুরা ব্রিজ থেকে উত্তর দিকে সামান্য এগোলেই আফতাবনগর। এখানে শরতের দিনে খোলা মাঠে কাশফুল ফোটে, যা শহরের মাঝেই এনে দেয় অন্যরকম শান্তি। ফুচকা, চটপটি, পানিপুরি, চা, কফি আর চানাচুর মাখা ভ্রাম্যমাণ দোকানের এসব খাবার এখানে ঘুরতে আসা মানুষদের বাড়তি টান দেয়। বিকেলের আড্ডা কিংবা ছবি তোলার জন্য জায়গাটি এখন বেশ জনপ্রিয়।

যেভাবে যাবেন:

হাতিরঝিল বা রামপুরা ব্রিজ থেকে রিকশা বা অটোরিকশায় সহজেই কাশবনে পৌঁছানো যায়।

বসিলা ও মধুসিটি

কেরানীগঞ্জের বসিলা আর মধুসিটি আবাসন প্রকল্পে শরতের দিনে সাদা কাশফুলে ঢেকে যায় চারপাশ। বিশেষ করে মধুসিটির প্রবেশপথে ঢুকলেই মনে হবে সাদা রঙের মেলা বসেছে। এখানে শিশুদের জন্য ছোট্ট পার্ক রয়েছে, সঙ্গে আছে খাবারের দোকানও। পরিবার নিয়ে বেড়ানোর জন্য জায়গাটি বেশ উপযুক্ত।

যেভাবে যাবেন:

মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ থেকে সিএনজি ভাড়া ৩০-৪০ টাকা। অটোরিকশা রিজার্ভ করলে খরচ হবে প্রায় ১৫০ টাকা।

মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ

মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের পাশেই কাশবন ছড়িয়ে আছে। বিকেলের দিকে এখানে গেলে নদীর হাওয়া আর কাশফুলের মায়া আপনাকে ছুঁয়ে যাবে। নিরিবিলি জায়গা হওয়ায় অনেকেই একান্ত সময় কাটাতে আসেন এখানে।

যেভাবে যাবেন:

ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে বাসে করে মোহাম্মদপুর বাসস্টেশন আসতে হবে। সেখান থেকে ৩০-৫০ টাকা রিকশা ভাড়ায়  মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ যাওয়া যায়। 

মিরপুরের বৃন্দাবন 

মিরপুর ১২ নম্বর ডিওএইচএস সংলগ্ন বৃন্দাবন মাঠ এখন কাশফুলপ্রেমীদের ভিড়ে জমজমাট। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষ আসেন এখানে ছবি তুলতে। অনেক ভ্রাম্যমাণ ফটোগ্রাফারও থাকেন, যারা মাত্র ১০-২০ টাকায় ছবি তুলে দেন। কাশফুলের সাদা সমুদ্রের মাঝে দাঁড়িয়ে ছবি তুললে মনে হবে মেঘের ভেতরে আছেন। এ ছাড়াও এখানে নাগরদোলা, ফুচকা-চটপটি আর নানা ধরনের স্ট্রিট ফুডের আয়োজন আছে। তবে সন্ধ্যার পর জায়গাটি নিরিবিলি হয়ে যায়, তাই সন্ধ্যার আগেই ফেরা ভালো।

যেভাবে যাবেন:

মিরপুর ডিওএইচএস সংলগ্ন সরু ঢালু পথ ও বাঁশের সাঁকো পার হয়েই কাশবনে পৌঁছাতে হয়। চাইলে দিয়াবাড়ি থেকেও এখানে আসা যায়।

বিশেষ পরামর্শ

- বিকেল বেলায় কাশফুলের সৌন্দর্য সবচেয়ে ভালো উপভোগ করা যায়।
-ছবি তুলতে গিয়ে পরিবেশ নষ্ট করবেন না, ফুল ভেঙে ফেলবেন না।
-জায়গাগুলোতে ভিড় থাকলেও সবার প্রতি সম্মান দেখিয়ে ঘুরবেন।
- নিরিবিলি জায়গায় সন্ধ্যার পর অবস্থান না করাই ভালো।


 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!