ঢাকা শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

স্বপ্ন যেখানে সত্যি হয়

ছুটি প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ১২:৫৮ এএম

‘চল পাহাড় যাব পাহাড় যাব, জুম ঘরে ঘুম দেব খুব।’ ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে সাম্প্রতিক জনপ্রিয় হওয়া কুঁড়েঘর ব্যান্ডের এই গানের মতো ক্লান্ত নাগরিক কোলাহলে নিশ্চয়ই আপনার মনও উচাটন করছে আর স্বপ্ন দেখছে ঘন গাছের ফাঁকে লুকিয়ে থাকা মেঘ, জুম ঘর এবং বৃষ্টির নরম শীতলতায় কিছুদিন হারিয়ে যেতে। কিন্তু দুর্গম পথ, সীমিত যোগাযোগ ব্যবস্থা আর সুযোগ-সুবিধার অভাবে সবকিছু হয়ে যেন হয়ে উঠছে না। ফলে সমতল ভূমির সন্তান হয়েও অনেকের কাছেই পাহাড় এখনো এক অদেখা রহস্য। তবে এখন সময় বদলেছে, বদলেছে ভ্রমণের ধরন। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, নিরাপদ পথ আর পাহাড়ি অঞ্চলে নতুন পর্যটনকেন্দ্র গড়ে ওঠায় পাহাড় আজ আর অচেনা বা ভীতিকর নয়। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য এখন হাতের নাগালেই পাওয়া যায়।

আগে যেখানে দুর্গম পাহাড় পাড়ি দিতে হতো দিনের পরদিন, সেখানে এখন অল্প সময়ে পৌঁছে যাওয়া যায় পাহাড়ের কোলে। পরিবার, বন্ধু বা সহকর্মীদের সঙ্গে হঠাৎ করেই প্ল্যান করে বেরিয়ে পড়া যায় সবুজের খোঁজে। সেই পাহাড় এখন যেমন রোমাঞ্চকর, তেমন আরামদায়কও। তেমনই এক আশ্চর্য ভ্রমণগন্তব্য হচ্ছে বান্দরবানের আলীকদমে অবস্থিত ‘মেঘচূড়া হিল রিট্রিট’। এই পাহাড়চূড়ায় দাঁড়িয়ে মুহূর্তেই মনে হবে, স্বপ্ন যেন এখানে সত্যি হতে চলেছে। পাহাড়ের গায়ে লেপটে থাকা মেঘ, ভোরের নরম আলোয় সবুজ বনানীর আবেশ, আর কখনো বা বৃষ্টিভেজা আকাশ মিলে যেন আঁকছে এক জীবন্ত ক্যানভাস। এখানকার চারদিকে ছড়িয়ে থাকা আঁকাবাঁকা অচেনা পথ, নির্জনতার নীরবতা আর অনাবিল শান্তি ভ্রমণকারীর হৃদয় ছুঁয়ে যায় গভীরভাবে। সবুজ পাহাড়ের বুকচিরে বয়ে চলা সর্পিলাকার মাতামুহুরী নদী এখানকার সৌন্দর্যে যোগ করে অন্য রকম মাত্রা। কখনো নদীর কোলাহল, কখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টির স্নিগ্ধতায় প্রতি মুহূর্তে প্রকৃতি যেন নতুন রূপে ধরা দেয়।

ভোরে মেঘের চাদরে ঢাকা পাহাড়, দুপুরে সোনালি রোদ, আর বিকেলে কুয়াশা- এই তিন রূপেই মেঘচূড়া ভ্রমণকারীর জন্য রেখে দেয় ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা। যারা আগে কখনো পাহাড়ে ওঠেনি, তাদের জন্য এ এক রূপকথার স্বপ্নরাজ্য; আবার যারা পাহাড় ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি এক অন্তহীন টান। যারা শহরের কোলাহল থেকে কিছুদিনের জন্য মুক্তি চান, প্রকৃতির সান্নিধ্যে গিয়ে হারিয়ে যেতে চান, তাদের জন্য মেঘচূড়া হতে পারে এক অনন্য গন্তব্য।

এখানে কয়েকটা দিন কাটালে মনে হবে সময় যেন থেমে গেছে, প্রকৃতির কোলে নিজেকে সঁপে দিয়ে জীবনের চাপ, দুঃশ্চিন্তা ও যান্ত্রিকতা ভুলে যাওয়া যাচ্ছে খুব সহজেই। তাই যান্ত্রিক এই শহর ছেড়ে অল্প দিনের অবকাশে ঘুরে আসতে পারেন মেঘচুড়ায়, আর মন খুলে গাইতে পারেন ‘চল পাহাড় যাব পাহাড় যাব, জুম ঘরে ঘুম দেব খুব, মন চাইছে ভীষণ করে বৃষ্টি নামুক পাহাড়ে’

যেভাবে যাবেন

মেঘচূড়ায় যেতে হলে প্রথমে পৌঁছাতে হবে বান্দরবানের আলীকদমে। ঢাকা থেকে সরাসরি আলীকদমগামী এসি-ননএসি উন্নতমানের বাস সার্ভিস (শ্যামলি, হানিফ ইত্যাদি) পাওয়া যায়। বাসভেদে ভাড়া পড়বে ৮৫০-১১০০ টাকা পর্যন্ত। সরাসরি বাস ছাড়াও বিকল্পভাবে ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী বাসে উঠে চকরিয়া বাজারে নামতে পারেন। সেখানকার নতুন বাস টার্মিনাল থেকে লোকাল বাস বা চান্দের গাড়িতে করে আলীকদম পৌঁছানো যায়। এরপর বাইক বা ট্রেকিংয়ের মাধ্যমে পৌঁছাতে হবে মেঘচূড়ায়। তবে ভ্রমণের সময় আর্মি ক্যাম্পে চেকিংয়ের জন্য অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি ফটোকপি সঙ্গে রাখা জরুরি।

থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা

মেঘচূড়ায় ভ্রমণকারীদের জন্য রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা উপভোগের মতো ব্যবস্থা। এখানে রয়েছে ২টি প্রিমিয়াম নন-এটাচ কটেজ, ৭টি জুমঘর এবং একটি ক্যাম্পিং সাইট।

প্রিমিয়াম কটেজ: 

উন্নত মানের এই কটেজে সর্বনি¤œ ৫ জনের জন্য জনপ্রতি খরচ পড়বে ১৫০০ টাকা, যার মধ্যে প্রতিদিন ৪ বেলার খাবার অন্তর্ভুক্ত।

জুমঘর:

মেঘচূড়ায় জুমঘরে থাকার জন্য  জনপ্রতি ১২০০ টাকায় ৪ বেলা খাবারসহ (সর্বনি¤œ ৫ জন) থাকার সুযোগ রয়েছে।

ক্যাম্পিং/তাবু

প্রিমিয়াম কটেজ কিংবা জুমঘর ছাড়াও এখানে ক্যাম্পিং করার সুযোগ রয়েছে। ক্যাম্পিং করতে জনপ্রতি ১১০০ টাকায় এক রাত থাকা এবং ৪ বেলা খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে (সর্বনি¤œ ২ জন)।

খাবারের মেন্যু

খাবারের মেন্যুতেও রয়েছে বৈচিত্র্য, দুপুরে ভাত, ডাল, ভর্তা ও মুরগির মাংস; সন্ধ্যায় মুড়ি মাখা; আর রাতে বারবিকিউ, পরোটা ও ডিম খিচুড়ি। চেক-ইন সকাল ১০টায় এবং চেক-আউট পরদিন সকাল ১০টায় করতে হবে।

অন্যান্য সুবিধা 

মেঘচূড়ায় ভ্রমণকারীদের আরাম নিশ্চিত করতে রাখা হয়েছে কিছু অতিরিক্ত সুবিধা। এখানে রয়েছে টাইলস করা কমন ওয়াশরুম (পুরুষ ও নারীর জন্য আলাদা), সার্বক্ষণিক বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা এবং সন্ধ্যার পর জেনারেটরের মাধ্যমে প্রায় ৩ ঘণ্টা ফোন চার্জের সুবিধা। এ ছাড়া রাতে বারবিকিউর আগে ক্যাম্প ফায়ারের আয়োজন ভ্রমণকে করে তোলে আরও প্রাণবন্ত ও উপভোগ্য।