ইতিহাস জানলে জানা যায় অনেক কিছুই। অতীতের সেই সময়ে হয়তো আমরা ছিলাম না। তাই বলে সে সময়ের কিছুই জানতে পারব না, এমন তো নয়। সে সময়ের সবকিছুই তো আর ধ্বংস হয়ে যায়নি; কিছু কিছু স্থাপনা এখনো টিকে রয়েছে। যেখানে গেলে ইতিহাস ছুঁয়ে দেখা যায়। এমন একটি স্থাপনা হলো গাজীপুরের কালিয়াকৈরের শ্রীফলতলী জমিদার বাড়ি। যদিও স্থানীয়দের উচ্চারণে আজ শ্রীফলতলী হয়ে গেছে ছিবলতলী। তবে নামে কী আর আসে যায়!
তালিবাবাদ পরগনার নয় আনা মালিকানা নিয়ে গড়ে উঠেছিল শ্রীফলতলী এস্টেট। যা একসময় ছিল এলাকার প্রশাসন, সংস্কৃতি এবং জমিদারি কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দু। এই জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন করেন খোদা নেওয়াজ খানের কনিষ্ঠ পুত্র রহিম নেওয়াজ খান চৌধুরী। তার নানাবিধ উদ্যোগ এবং নিষ্ঠার কারণেই জমিদারির বিস্তার ছড়িয়ে পড়ে ময়মনসিংহ, নরসিংদি থেকে সাটুরিয়া পর্যন্ত। জমিদারি পরিচালনার সময় তিনি নিজের কাচারি বাড়ির পাশাপাশি আধারিয়া বাড়ির বাগানবাড়িকেও অফিস হিসেবে ব্যবহার করতেন। স্থানীয় ইতিহাস অনুসারে, তার উদ্যোগেই প্রায় এক শতাব্দী আগে তালিবাবাদ পরগনা সাভার থেকে পৃথক হয়ে কালিয়াকৈর নামে নতুন থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে শুধু জমিদারিই নয়, পুরো অঞ্চলের প্রশাসনিক পরিচয়ে তার অবদান অমলিন হয়ে আছে।
শ্রীফলতলী জমিদার বাড়ি অন্য জমিদার বাড়ির মতোই দুই ভাগে বিভক্ত। দুই ভাগ হলো, বড় তরফ এবং ছোট তরফ। আজকের দিনে বড় তরফে ভ্রমণপ্রেমীরা কোনো অনুমতি ছাড়াই প্রবেশ করতে পারেন। পুরোনো স্থাপনা ও সময়ের ক্ষয়ে যাওয়া অলঙ্করণে পা ফেললে মনে হয় যেন অতীতের অন্দরমহল এখনো নিঃশব্দে গল্প বলে যাচ্ছে। তবে ভবনের দরজাগুলো বর্তমানে তালাবদ্ধ, বাইরে থেকেই ঘুরে ঘুরে দেখতে হয়।
ছোট তরফে এখনো বাস করছেন জমিদার পরিবারের উত্তরাধিকারীরা। চাইলে অনুমতি নিয়ে সেখানে প্রবেশ করা যায়। এ ছাড়া এই বাড়ি শুটিং স্পট হিসেবেও ভাড়া পাওয়া যায়। বড় তরফ আর ছোট তরফের মাঝেই রয়েছে জমিদার বাড়ির প্রাচীন মসজিদ, যা সময়ের সঙ্গে সম্প্রসারিত হয়ে আজও ব্যবহৃত হচ্ছে। জমিদার বাড়ির পেছনের অংশে কিছু পরিবার বসবাস করলেও পুরো পরিবেশেই রয়েছেই এক ধরনের প্রশান্ত নীরবতা। পুরোনো গাছপালা মিলিয়ে এক ধরনের শান্ত, স্মৃতিকাতর আবহ তৈরি করে। শহরের ব্যস্ততা থেকে একটু দূরে এসে এই বাড়ির সামনে দাঁড়ালে বোঝা যায়, অতীত কখনো পুরোপুরি হারিয়ে যায় না। ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখার জন্য কখনো কখনো এমন পুরোনো বাড়িগুলোই যথেষ্ট।
শ্রীফলতলী জমিদার বাড়ি শুধু ভ্রমণগন্তব্য নয়; এটি ইতিহাসের একটি খোলা বই, যেখানে চাইলে একটু সময় নিয়ে পাতা উল্টে দেখা যায় আমাদের অতীতের ভুবন।
ঢাকা থেকে চাইলে অল্প সময়ে এসে ঘুরে দেখতে পারেন এই জমিদার বাড়িটি। বেশকিছু বাস চলাচল করে ঢাকা থেকে। এ ছাড়া গাজিপুরে কিছু ভালো থাকার জায়গাও রয়েছে, তাই রাত যাপন নিয়েও করতে হবে না চিন্তা।

