ঢাকা রবিবার, ০৪ মে, ২০২৫

কোল্ড স্টোরেজে পর্যাপ্ত আলু, তবু নিয়ন্ত্রণের বাইরে বাজার

রেজাউল করিম মানিক, রংপুর
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২৪, ০৫:৩০ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রংপুর: শশ্যভান্ডার খ্যাত উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক আলু চাষ হলেও বর্তমানে আলুরবাজার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের বাহিরে। রংপুরে আট জেলায় উৎপাদন পরবর্তী দাম কিছুটা সহনীয় থাকলেও বর্তমানে শক্তিশালী সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকায় আলুর বাজারমুল্য ক্রমেই বাড়ছে। আধপচা আলুও মিলছে না ৫০ টাকা কেজিতে। এতে অন্যতম এই সবজির চাহিদা পূরণে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ ভোক্তাদের।

কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে চলতি মৌসুমে রংপুর অঞ্চলে ১ লাখ ৬০২ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ১৬ লাখ ১১ হাজার ৩৫৪ মেট্রিকটন। যা গত বছরের তুলায় ৩ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে বেশি আলু চাষ হয়েছে। উৎপাদিত আলু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। তবে আলু সংরক্ষণের জন্য কৃষকরা নিকটস্থ হিমাগারে চুক্তিবদ্ধ হন। ভোক্তাদের দাবি উত্তরাঞ্চলে যে পরিমাণ আলু চাষাবাদ ও সংরক্ষণ করা হয় তা সারাবছরেও শেষ হবার কথা নয়। কিন্তু আলু উৎপাদন পরবর্তীতে হিমাগারে (কোল্ড স্টোরেজ) সংরক্ষণ ব্যয় বৃদ্ধি ও অদৃশ্য সিন্ডিকেটের কারণে আলুর বিক্রিমুল্য বৃদ্ধি পায়। যা সাধারণ ভোক্তাদের সাংসারিক ব্যয়ে প্রভাব ফেলে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ৭৬টি কোল্ড স্টোরেজ (হিমাগার) রয়েছে। এসব স্টোরেজে ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ৪ লাখ ৩৭ হাজার ৩৩৭ মেট্রিক টন। যা চাহিদার চেয়ে বেশি সংরক্ষণ করা হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। কিন্তু বাজারে ভোক্তাদের চাহিদার চেয়ে যোগান কম দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে আলুর মূল্য পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

রংপুর, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধার বিভিন্ন হিমাগার ঘুরে দেখা গেছে এখনো আলুর পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। লালমনিরহাটের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার গোসালা বাজার। গোসালা বাজারে আড়তদার মজনু মিয়া বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীদের নিকট বেশি আলু বিক্রি করা হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তিনি আলুর সরবরাহ কম থাকাকে উপস্থাপন করেন।

মজুদ থাকলে দাম কেনো বাড়ছে এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লালমনিরহাটের এক হিমাগার ও আলুর পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, হিমাগারের ব্যয় বাড়ার অজুহাতকে দোষারোপ করে একটি চক্র আলুর দাম বাড়াচ্ছে। সিন্ডিকেটটি বজারে সরবরাহ কম দেখাতে কাজ করছে। ওই ব্যবসায়ীর দাবি সঠিক নজরদারি করা গেলে সকল সিন্ডিকেট ভেঙ্গে যাবে।

রংপুর সিটি বাজারের পাইকারি আলু বিক্রেতা মাহফুজ আলম বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ আলু রয়েছে স্টোরগুলোতে। তারা দাম ছাড়ছে না। স্টোরেই প্রতি কেজি আলুর দাম পড়ছে ৪৬ টাকা। সেই আলু রিকশায় আনা-নেওয়া খরচসহ ১টাকা বেশি দরে বিক্রি করলেও ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্ত খুচরা পর্যায়ে ৫৫-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, আপনারই বলুন তো ৫০ কেজি আলুর বস্তা ভাড়া কেমন করে ৩৮০ টাকা হয়। রংপুর সিটির আলুর পাইকারি বাজারে কথা হয়, মমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের নিত্যদিনের প্রয়োজন হয় আলুর। কিন্তু এটার দাম কেন এত হবে। এই আলুই তো রংপুরে উৎপাদন হয়। আমরা চাই আলুর দাম কমুক।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, এবছর কৃষকের কাছ থেকেই বেশি দামে আলু বাজারে এসেছে। হিমাগারে রাখা আলুর দামও বেশি পড়ছে। বিদ্যুতের দাম বেশি, পরিবহণ মজুরিসহ অন্যান্য খরচ বেড়েছে। গত বছর আলুর যে সংকট হয়েছিল, তা কাটিয়ে ওঠার জন্য বাড়তি যে উৎপাদন দরকার ছিল সেটা হয়নি।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রংপুরের সহকারী পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজার মনিটরিং এ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কাজ করছে। শীঘ্রই আলু সংরক্ষণাগারে অভিযন পরিচালনা করা হবে। বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরী থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।