জীবননগর বাজারের বিশিষ্ট স্টুডিও ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম। পশু পাখিদের ছবি তুলতে অনেক পছন্দ করেন। তাই নিজের ব্যবসার পাশাপাশি ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি করেন। জহুরুল ইসলাম জীবননগর পৌর সভার বসুতিপাড়ার মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে তিনি পেশায় একজন স্টোডিও ব্যবসায়ী এবং জাতীয় দৈনিক কালেরকন্ঠ পত্রিকার জীবননগর উপজেলা প্রতিনিধি। তার এই পথচলা, স্বপ্ন, ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছবি তোলা ও লেখা লেখি। বেড়ানো, প্রকৃতি দেখা, ছবি তোলা। বিশেষ শখ ফটোগ্রাফি। প্রকৃতির ছবি, ফুলের ছবি আর পাখির ছবি। মুলত ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফিটা অন্যরকম নেশার মতো।
ছোটবেলা থেকে ছবির প্রতি একটা বিশেষ আকৃষ্টতা ছিলো। আব্বা বিভিন্ন পত্রিকা পড়তেন। পত্রিকার ভালো ছবিগুলো কেটে কেটে বইয়ের ভিতর রেখে দেওয়ার অভ্যেসটা ছিলো। এরপর বাজারে যখন ভিউকাড বিক্রি শুরু হলো তখন সুন্দর সুন্দর প্রকৃতির ছবি, পাখির ছবি, ফুলের ছবিগুলোয় কিনতাম। তখন থেকেই ভাবনা হতো সুন্দর সুন্দর পাখির এতো ক্লোজ ছবি কিভাবে তোলা হয় আমিও যদি এমন ছবি তুলতে পারতাম।

আমি তখন খুব ছোট। আমার মামার ষ্টুডিও ছিলো। সেখানে মাঝে মাঝে যাওয়া হতো। এর পর ১৯৮৯ সালের দিকে আমার বড় ভাই ষ্টুডিও ব্যবসা শুরু করে (রুপান্তর ষ্টুডিও, জীবননগর, চুয়াডাঙ্গা)। আমি তখন সবেমাত্র ক্লাস সেভেনে পড়ি। যখন এইটে উঠলাম তখন থেকে বাজারে যাতায়াত শুরু হলো বড় ভাইকে দুপুরের খাবার আনার মাধ্যমে। মাঝে মাঝে বড় ভাই যখন খুব ব্যস্ত থাকতো তখন সাদাকালো ছবি প্রিন্টের পর ধোঁয়ার কাজ দিতো। তখন থেকেই সাদাকালো ফিল্ম ক্যামেরা, ইয়াসিকার কালার ফিল্মের ক্যামেরাতে হাতে খড়ি হয়। একটা সময় আসলো সেই ষ্টুডিওর ব্যবসাটায় হয়ে গেলো আমার পড়াশুনার পাশাপাশি পেশা হিসেবে। আমি তখন সবেমাত্র কলেজের গন্ডিতে পা রেখেছি তখন ষ্টুডিও ব্যবসার সকল ভারাপনটায় আমার ওপর। দিনে দিনে বেসিক ক্যামেরাগুলো পার করে এসএলআর ডিএসএলআর ক্যামেরায় ছবি তোলা। ১৯৯০ সালের দিক থেকে বিভিন্ন সাংবাদিকদের নিউজের ছবি সরবরাহের দায়িত্বটা আমার ওপরই ছিলো। সাংবাদিক বড় ভাই জীবন, এমআরবাবু, আবু সাঈদ মুকু, শামসুল আলম, ওয়ালিউল ইসলাম রঞ্জু, আনোয়ারুল ইসলাম, কামাল সিদ্দিকি বাবু ভাইদের নিউজ সংশ্লিষ্ট ছবিগুলো তোলা আর সরবরাহ করা শুরু হয়। সেই সাথে আমিও প্রিন্ট মিডিয়ার সাথে যুক্ত হয়ে যায়। যেখানে ঘটনা সেখানেই আমার পদচারণা শুরু হয়। দেখতে দেখতে পেশা আর নেশার ফটোগ্রাফিটা চলে ২০১০ সাল পযন্ত। এর পর আমার পেশা পরিবর্তন। ঐ সালেই শুরু হয় প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবসা। ফটোগ্রাফিটা মোবাইল ফোনে চললেও ক্যামেরার সাথে আর সখ্যতা ছিলো না।

ছবি তোলার নেশাটা মন থেকে কখনই হারায়নি। শখের ছবি তোলার জন্যে একটা ক্যামেরা কিনবো কিনবো করতে করতে হয়ে ওঠে না। অবশেষে ২০২২ সালে আমার গিন্নি আমাকে ক্যাননের ২০০০ডি মডেলের একটা ডিএসএলআর ক্যামেরা গিফট করেন। সাথে ছিলো ১৮-৫৫ মিমি লেন্স। গিন্নির শখের ছাদবাগানের বিভিন্ন ফুলের ছবি আর প্রকৃতির ছবি তুলে বেড়ায় অবসর সময়ে। ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফির নেশাটা চলে আসে স্ত্রীর ছাদবাগান থেকেই। ফুলের ছবি তুলতে গিয়ে প্রথম ছবি তুলি মৌটুসি পাখির। এ পাখিটা বাগানের ফুলের মধু খেতে আসে। আমার লেন্স দিয়ে কাছাকাছি গিয়ে ছবি তুলেতে গেলেই সে চলে যায়। সেই পুরনো ইচ্ছেরা জেগে ওঠে। এক সপ্তাহ ছবি তোলার মাঝেই কিনে ফেলি ক্যাননের ৭৫-৩০০ মিমি এর একটা পুরনো জুম লেন্স। পাখির ছবি তোলা শুরু হয়ে গেলো। লেন্সটা পুরনো হওয়াতে অটোফোকাস কাজ করতো না। কিছুদিন পর সিগমার ৭০-৩০০ জুম এর একটা নতুন লেন্স কিনি। দারুণ দারুণ ছবি তুলতে পারছি বলে মনে হচ্ছে। অনেক খুশি। এর পর ক্যামেরা, জুম লেন্স সর্ম্পকে আরো অবহিত হতে থাকি। ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি করতে হলে আসলে সুপার টেলিফটো জুম লেন্সের বিকল্প নেই। কিন্তু ১৫০-৬০০ মিমি টেলিফটো জুম লেন্সের দামটাও অনেক। প্রায় দেড় লক্ষ টাকার মতো, যা কেনা অনেক দেরী।

আমার ষ্টুডিওতে আমার সকল বন্ধুরায় বসতো। বন্ধুদের সবাই সাদাকালো ছবি প্রিন্ট করা, ছবি তোলা সবই পারতো তারা। তারা খুব ভালো জানতো ছবির প্রতি আমার আবেগ আর ভালোবাসা। বন্ধু আনোয়ার আর কুতুব বাবুর সাথেই আমার ছবিগুলো শেয়ার করতে থাকি। ফেসবুকেও আপলোড শুরু হয়। আমার এই বিভাগে ছবি তোলার জন্য সুপার টেলিফটো লেন্সের প্রয়োজন সেটা পুরণ করে দেই বন্ধু কুতুব উদ্দীন বাবু। ইউএসএ থেকে সিগমার ১৫০-৬০০ মিমি জুম লেন্স কিনে এনে গিফট করে আমাকে। এবার শুরু হলো ওয়াইল্ড লাইফের সত্যিকার ভুবনে পা রাখা।

আল্লাহর সৃষ্টি যে কত সুন্দর, কত সুন্দর সৃষ্টি ফুল, পাখি। ছবির প্রতি এমন আকর্ষণ না থাকলে হয়ত অধরা হয়ে থাকতো। প্রকৃতির সুন্দর সৃষ্টি দেখি। সেগুলো অনেককে দেখার জন্যে ফেসবুকেও শেয়ার করি যা অন্যরকম ভালো লাগা। এখন অনেক বয়স হয়েছে। এ বয়সে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি খুব দরকার। এ ফটোগ্রাফি থেকে আমি অনেক প্রফুল্ল থাকি। আমি মনে করি আমার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ফটোগ্রাফি অনেক ভূমিকা রাখছে। সর্বোপরি যে কোন অনিষ্ট সময়ের সাথে মেশার সুযোগ দেয় না। দিনের যে কোন অবসর সময়টায় আমি কাজে লাগায় ফটোগ্রাফিতে। বিশেষ দিন শুক্রবারটার পুরো দিনটায় কেটে যায় বন-বাদাড়ে বা বিলে ঝিলে।