সাগর থেকে মিঠা পানিতে ছুটে আসা ইলিশের নিরাপদ প্রজনন রক্ষায় সরকার ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন পদ্মা-মেঘনায় ইলিশসহ সব ধরণের মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সরকারের এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের অন্যতম অভয়াশ্রম হচ্ছে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার। কিন্তু গত এক সপ্তাহে অভিযান বাস্তাবয়ন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জেলেরা ইলিশ ধরবেন ওয়াদা দিলেও এখন তা মানছে না। আইন অমান্য করে প্রকাশ্যে ইলিশ ধরছে। গত এক সপ্তাহে অর্ধশতাধিক জেলে আটক হয়েছে।
মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের পূর্বে উপকূলীয় জেলে পাড়াগুলোতে প্রশাসনের সচেতনতামূলক সভা ও প্রচার কার্যক্রম অব্যাহত ছিলো। এখনো জেলেদের সচেতন করা হচ্ছে। কিন্তু মানার ক্ষেত্রে জেলেরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
জেলার মতলব উত্তর উপজেলা মোহনপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. কামরুজ্জামান বলেন, জেলো খুবই মারমুখী হয়ে উঠেছে। তারা গত ১৭ অক্টোবর রাতে মেঘনা নদীর আমিরবাদ এলাকায় টাস্কাফোর্সের অভিযানের প্রস্তুতিকালে শতাধিক জেলে ট্রলার নিয়ে এসে হামলা চালায়। এতে নৌ পুলিশসহ অন্তত ১০জন আহত হয়।
আহতরা হলেন-মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কার্যালয়ের ক্ষেত্র সহকারী মোহাম্মদ আতিকুর রহমান ও মোশারফ হোসেন, স্পীডবোটের চালক রনি মিয়া, নৌকার মাঝি আলী আকবর, মাঝির সহকারী আবদুল ছাত্তার ও মো. কাউছার, মোহনপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সদস্য ইমরান হোসেন, মো. রাসেল, কামাল হোসেন ও জসিম উদ্দিন।
এই ঘটনায় ওই রাতেই মতলব উত্তর থানায় ৯০জনকে অজ্ঞাতানামা আসামী করে ক্ষেত্র সহকারী মোহাম্মদ আতিকুর রহমান মামলা করেছেন।
জেলা মৎস্য বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, গত ১ সপ্তাহের অভিযানে জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স দিন ও রাতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এসব অভিযানে নেতৃত্বে দিচ্ছেন জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও উপজেলার কর্মকর্তারা। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় এই পর্যন্ত অর্ধশতাধিক জেলেকে জেল ও জরিমানা করা হয়েছে। জব্দ হয়েছে ইলিশ, মাছ ধরার নৌকা ও অবৈধ কারেন্টজাল।
নৌ-পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, নৌ-পুলিশের সবগুলো ইউনিট মা ইলিশ রক্ষায় সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় ৩ নভেম্বর পর্যন্ত এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। এই বিষয়ে কোন ছাড় দেয়া হবে না।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেঘনা নদীর পূর্বাঞ্চলে টাস্কফোর্সের অভিযানের কার্যক্রম সক্রিয় থাকায় নদীতে নামতে সাহস পাচ্ছে না জেলেরা। কিন্তু মুন্সীগঞ্জ ও মেঘনা নদীর পশ্চিমের চরাঞ্চলের জেলেরা খুবই বেপরোয়া। তারা সুযোগ পেলেই মা ইলিশ শিকার করছে। জেলা টাস্কফোর্সের সিদ্ধান্তের আলোকে এসব এলাকার জেলেদের নৌকার ইঞ্জিন খুলে রাখার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ইলিশ রক্ষা হলে জেলেরাই লাভবান হবেন। তাদেরকেই এই ইলিশ রক্ষা করতে হবে। এসব বিষয়গুলো জেলেদের কাছে গিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। কিন্তু অভয়াশ্রম এলাকার অধিকাংশ জেলো ইলিশ আহরণ থেকে বিরত থাকার ওয়াদা দিলেও সাড়া মিলেনি রাজরাজেশ্বর জেলে পল্লী থেকে।
জেলা প্রশাসক বলেন, রাজরাজেশ্বর এলাকার জেলেরা ইলিশ ধরবে না মর্মে সাড়া দেয়নি।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, মা ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকা নিবন্ধিত ৪৩ হাজার জেলেকে ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ২৫ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। ইলিশ রক্ষায় আমরা টাস্কফোর্সের অভিযান অব্যাহত রেখেছি। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অভয়াশ্রম এলাকায় ইলিশ শিকার করলে আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন