শুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৫, ১০:২৭ এএম

দরজায় লিখে দিলেন ‘ধর্ষক হিটু শেখের বাড়ি’

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৫, ১০:২৭ এএম

দরজায় লিখে দিলেন ‘ধর্ষক হিটু শেখের বাড়ি’

ছবি: সংগৃহীত

মাগুরায় শিশু ধর্ষণের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত হিটু শেখের বাড়ির দরজায় এলাকাবাসী লিখে দিয়েছেন ‘ধর্ষক হিটু শেখের বাড়ি’। ওই গ্রামের মানুষকে তার বাড়ির কথা জিজ্ঞাসা করতেই সবাই এক সুরে বলে উঠবেন, হিটু শেখের বাড়ি? ধর্ষকের বাড়ি? বাড়ির কাছে গিয়ে দেখা গেল দরজায় লেখা ‘ধর্ষকের বাড়ি’।

রাজমিস্ত্রি হিটু শেখের এমন করুণ পরিণতি হওয়ার কারণ হিসেবে স্থানীয়রা বলছেন তার গর্হিত অপরাধের ফল। গত বুধবার (৫ মার্চ) রাতে নিজ পুত্রবধূর আট বছর বয়সি বোনকে ধর্ষণ করে হিটু শেখ। শুধু ধর্ষণ নয়; ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশুটিকে হত্যাচেষ্টাও চালায় সে।

গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ধর্ষক হিটু শেখের বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখা গেল, সারি সারি তিনটি রুমই তালাবদ্ধ। প্রতিবেশীরা জানালেন, চারজনকে গ্রেপ্তার করার পর এ বাড়ি এখন ফাঁকা। শুধু হিটু শেখের বৃদ্ধ মা বাড়িতে থাকছেন। তবে এদিন বৃদ্ধাকেও বাড়িতে পাওয়া যায়নি। গরুর গোয়ালঘরের এক কোণে একটা খাটে রাত যাপন করেন রোকেয়া বেগম (৭৫)।

বাড়ির দরজায় কেন ধর্ষকের বাড়ি লেখা? এলাকাবাসী জানায়, হিটুর বিরুদ্ধে এ রকম অপকর্মের অভিযোগ বেশ পুরোনো। গত বছর রমজান মাসের দুপুরে নিজ বাড়িতে গোসল করছিলেন স্থানীয় এক গৃহবধূ। এ সময় ওই বাড়িতে ছিলেন না অন্য কেউ। সুযোগ বুঝে পেছন থেকে গিয়ে গোসলরত ওই গৃহবধূকে জড়িয়ে ধরে হিটু। গৃহবধূ চিৎকার করলে হিটু এলাকা ছেড়ে পালায়। এর প্রায় দিন পনেরো পর মাগুরা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর সাকিবুল হাসানের উপস্থিতিতে সামাজিক সালিশের পর এলাকায় ফেরে সে। সালিশে ভুক্তভোগী নারী সবার সামনে হিটুকে জুতাপেটাও করেন।

নজরুল নামের আরেক প্রতিবেশী জানান, হিটু রাজমিস্ত্রি। বেশ চুপচাপ স্বভাবের; এলাকায় কারও সঙ্গে তেমন মেশে না। পাড়া-প্রতিবেশী গৃহবধূদের সঙ্গে শ্লীলতাহানি করা তার পুরোনো স্বভাব। হিটু শেখ এ ধরনের কাজ করেছে, কিন্তু তার পরিবার এসব বিষয় ধামাচাপা দিয়ে এসেছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, হিটু শেখের স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সংসার। মেয়েকে বিয়ে দেওয়ায় শ্বশুরবাড়িতে থাকে। বড় ছেলেকে বিয়ে না দিলেও ছোট ছেলে রাতুলকে চার মাস আগে বিয়ে দেয়। বিয়ের পর ছেলের বউকে মাঝেমধ্যে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিল হিটু। বিষয়টি পরিবারের অন্য সদস্যরা জানতেন। এ নিয়ে ঝগড়াও হয়েছে। সর্বশেষ চলতি মাসের প্রথম দিকে ঝগড়া করে বাবার বাড়িতে যান ভুক্তভোগী শিশুটির বড় বোন। বাবার বাড়িতে শ্বশুরের অপকর্মের কথা জানিয়ে আর শ্বশুরবাড়িতে যাবেন না বলে জানান। এরপর পরিবার ও স্বামীর অনুরোধে ৪ মার্চ ছোট বোনকে সঙ্গে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে আসেন। এরপর গত বুধবার রাতে খাবার খেয়ে বড় বোন ও তার স্বামীর সঙ্গে একই কক্ষে ঘুমায় শিশুটি। রাত আড়াইটার দিকে বড় বোন ঘুম থেকে জেগে দেখেন, ছোট বোন পাশে নেই; মেঝেতে পড়ে আছে। কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে বোনকে জানায়, রাতে দুলাভাইয়ের বাবা (বোনের শ্বশুর) তাকে ধর্ষণ করে। সে চিৎকার করতে গেলে তার গলা চেপে ধরা হয়। পরে তাকে বোনের কক্ষের মেঝেতে ফেলে রেখে যায়। এ ঘটনায় শিশুটির ভগ্নিপতি সজীব হোসেন (১৮) ও বোনের শ্বশুর হিটু মিয়া (৪২), সজীব শেখের ভাই রাতুল শেখ (১৭) ও তাদের মা জাবেদা বেগমকে (৪০) রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, ঘটনার রাতে কোনো চিৎকার বা হট্টগোল হয়নি। সকাল ১০টার দিকে শিশুটি যখন অজ্ঞান হয়ে পড়ে, তখন শিশুটির বোন কান্নাকাটি করতে থাকে। কান্নাকাটি শুনেই তারা হিটুর বাড়িতে গিয়ে দেখেন, শিশুটির বোনের শাশুড়ি জাবেদা বেগম শিশুটিকে তেল মালিশ করছে। এরপর একটি ভ্যান ডেকে পার্শ্ববর্তী মাদ্রাসার হুজুরের কাছে নিয়ে যায়। শিশুটির শারীরিক অবস্থা দেখে দ্রুত তাদের হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন ওই হুজুর। এর পর তারা মাগুরা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়।

হাসপাতালের রেজিস্টার অনুযায়ী এদিন বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে শিশুটিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে সেখানেও মিথ্যার আশ্রয়। হাসপাতালে শিশুটির বোনের শাশুড়ি তথ্য গোপন করে চিকিৎসককে বলে, শিশুটি খিঁচুনিতে আক্রান্ত হয়েছে। চিকিৎসক ও অন্যরা বিষয়টি টের পেলে শাশুড়ি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়।

মাগুরা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সুভাস চন্দ্র হালদার বলেন, শিশুটিকে নিয়ে আমাদের কাছে তথ্য গোপন করা হয়। পরে শিশুটির বোন আসে। এরপর পুলিশকে জানায় এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।

হিটুদের পরের বাড়িটি ওলিয়ার রহমানের। ওলিয়ারের স্ত্রী রেশমাসহ কয়েকজন জানান, রাতের ঘটনাটি জানাজানি হয় পরদিন হাসপাতালে নেওয়ার পর। হিটুর ছেলের বউরে জিনে ধরেছে– এমন অপবাদ দিয়েছে। মাঠের ভেতরে বাড়ি, একা একা থাকতে ভয় পায়, এ জন্য তার ছোট বোনকে নিয়ে আসে।

এদিকে হিটু শেখের পাশবিক নির্যাতনে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে শিশুটি। আট বছর বয়সি শিশুকে কীভাবে ধর্ষণ করল, কক্ষে বোন ও দুলাভাইয়ের সঙ্গে দরজা বন্ধ করে ঘুমালে দরজা খুলল কে, ধর্ষকের সঙ্গে আর কেউ কি জড়িত–সবার মনে এখন কয়েকটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

শিশুটির মা বলেন, তার স্বামী কৃষক। ৯ মাস আগে গ্রামে একটা মারধরের ঘটনায় স্বামীর মাথায় লাঠির আঘাত লাগে। এর পর থেকে তিনি গুরুতর অসুস্থ। মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে।

শিশুটির মা আরও জানান, স্বামীর অসুস্থতা ও অনটনের কারণে বড় মেয়েকে গত নভেম্বরে বিয়ে দেন। মেয়ের বয়স ১৪ বছর। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। এর পরের মেয়েটির বয়স ৯ বছর। সবচেয়ে ছোটটি ছেলে; বয়স আড়াই বছর।

তিনি বলেন, মেয়ে বোনের বাসায় যেতে চাইছিল না। জোর করে পাঠাইছিলাম। যদি না পাঠাতাম, তাহলে এই অবস্থা হতো না। বড় মেয়ে তার শ্বশুরের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আগেও করেছিল। ঘটনার আগের দিন মেয়ে ওর বড় বোনের কাছে বলেছিল, বোনের শ্বশুর তাকে খারাপভাবে স্পর্শ করেছে। এটি নিয়ে মেয়ে তার স্বামীকে বলে উল্টো মারধরের শিকার হয়।

মা বলেন, শ্বশুর-জামাতা দু’জনের চরিত্রই খারাপ। এটি আগে জানলে তিনি বিয়ে দিতেন না। হাসপাতালে এখন মেয়ের সঙ্গে তিনিই থাকছেন। মেয়ের সুস্থতার জন্য তিনি সবার কাছে দোয়া চান। ধর্ষকদের যেন সর্বোচ্চ সাজা হয়, সেটি নিশ্চিত করার দাবি জানান।

এদিকে শিশুটির আইনি সহায়তায় জন্য মাগুরা বিএনপির পক্ষ থেকে একটি আইনজীবী প্যানেল গঠন করা হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় মাগুরা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহেদ হাসান টগরের নেতৃত্বে প্যানেল গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে শিশুটির ধর্ষকদের পক্ষে কোনো আইনজীবীকে আইনি সহায়তা না দিতে আইনজীবীদের নোটিশ পাঠিয়েছে মাগুরা আইনজীবী সমিতি।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আইনজীবী প্যানেলের নেতা অ্যাডভোকেট শাহেদ হাসান টগর বলেন, ইতোমধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। ভুক্তভোগী শিশু ও তার ভগ্নিপতির বাড়ি পরিদর্শন করেছি। এ মামলায় বিবাদীপক্ষের কেউ যাতে লড়াই না করে, তার জন্য মাগুরার সব আইনজীবীকে জানিয়ে দিয়েছি।

মাগুরা থানার ওসি আয়ুব আলী বলেন, মাগুরা পুলিশ সুপার ও সেনাবাহিনী হিটু শেখের বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছে। বাড়িটি এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে আছে।

মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিরাজুল ইসলাম বলেন, শিশুটি ঢাকায় চিকিৎসাধীন। তার মা সেখানে আছেন। মামলার চার আসামি আগে থেকেই পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। মামলায় শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়েছে। আদালতের আদেশে মূল অভিযুক্ত ভুক্তভোগী শিশুর বোনের শ্বশুরকে সাত দিন; স্বামী, শাশুড়ি ও ভাশুর প্রত্যেকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে আছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আশা করি, দ্রুত রহস্য উদ্ঘাটন হবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!