শনিবার, ০৩ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সিলেট ব্যুরো ও জৈন্তাপুর প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: মে ৩, ২০২৫, ০৫:৩৮ এএম

তামাবিলে চমক ‘টাকা ৪৫০’

সিলেট ব্যুরো ও জৈন্তাপুর প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: মে ৩, ২০২৫, ০৫:৩৮ এএম

তামাবিলে চমক ‘টাকা ৪৫০’

সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর। ছবি: সংগৃহীত

সারা দেশে সব বদলেছে ৫ আগস্টের পর। বদলেছে সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দরও। সেখানে আগে যারা নিয়ন্ত্রণে ছিলেন, খানিকটা পরিবর্তন হয়েছে মুখের। তবে মুখোশ পাল্টে ঠিকই নিজেদের জায়গা অক্ষুণ্ণ রাখতে সক্ষম হয়েছেন তারা। আগের ফ্যাসিস্ট সরকারি দলের নেতাকর্মী হলেও সুরত পাল্টে সেই ডেবিলরা এখনো আছেন। কেউ কেউ আপন পরিচয়ে আছেন দাপটের সাথে। এখনো তারা নিয়ন্ত্রণ করছেন সিলেটের সর্ববৃহৎ এবং একই সাথে আমদানি-রপ্তানির একমাত্র স্থলবন্দর তামাবিল। তারাই ট্রাকপ্রতি চাঁদার পরিমাণ ঠিক করেন।

আমদানি-রপ্তানিতে কারা বেশি সুবিধা নেবেন, কাদের কাদের আমদানি করা পণ্যবাহী ট্রাকের ওজন বেশি হলেও ছাড় পাবেন, তার সিদ্ধান্ত দেন তারাই। আর এ ক্ষেত্রে ট্রাকপ্রতি আদায় করা হয় ৪৫০ টাকা।

তবে এসব তারা একা করেন না। তাদের মাথার ওপরে ছায়া আছে। তাদের সাথে আছেন কাস্টমস, স্থলবন্দর এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তা। তাদের ছায়ার আশীর্বাদেই তারা হয়ে উঠেছেন বন্দরের ‘বেসরকারি নিয়ন্ত্রক’! কিছুদিন আগে তারা স্থলবন্দরে পণ্য ওঠানামা করতে আসা ট্রাকের জন্য নতুন চাঁদার হার নির্ধারণ করেছেন। বর্তমানে ট্রাকপ্রতি চাঁদা নেওয়া হচ্ছে ৪৫০ টাকা করে।

বন্দরের নিজস্ব কাস্টমস্ ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএনএফ) এজেন্টের সহায়তায় গাড়িপ্রতি এই চাঁদা আদায় করা হচ্ছে এমন অভিযোগ উঠেছে স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী সমিতি থেকে। সমিতির কয়েকজন প্রভাশালী নেতা এই চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গায়ে আওয়ামী লীগ পরিচয় থাকায় ৫ আগস্টের পর যারা নীরব ছিলেন।

ওই সময় সীমান্ত বন্ধ থাকায় বন্ধ ছিল ট্রাক থেকে চাঁদা উঠানোও। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে আবার শুরু হয়েছে আমদানি-রপ্তানি। এরপরই তারা আবার ফিরে এসেছেন স্বমহিমায়। মূলত বন্দর ও কাস্টমসের অসাধু কর্মকর্তারাই টাকা হাতিয়ে নিতে তাদের ফিরিয়ে এনেছেন। নতুন হারে চাঁদার বিষয়টি এখন সীমান্ত এলাকায় ব্যাপকভাবে আলোচিত।
 
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, এই চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল করিম রাসেল এবং ওমর ফারুক। তারা সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ও সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইমরান আহমেদ নিকটজন বলে পরিচিত। গেল সরকারের সময়ে মন্ত্রী ইমরান আহমেদের হয়ে তামাবিল নিয়ন্ত্রণ করতেন তারাই। কিছুদিন বিরতি দিয়ে তারাই আবার মাঠে সক্রিয় হয়েছেন। তবে আগে পুরো তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে বৈধ ও অবৈধ পথে আসা ট্রাক, চোরাচালান পণ্য তারা একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে রাখলেও সেই জায়গার অনেকটাই এখন তাদের হাতছাড়া। বন্দরের ট্রাক থেকে চাঁদা তোলার বিষয়টিই এখন তারা দেখভাল করছেন।

চাঁদাবাজির ক্ষেত্র ছোট হয়ে আসায় তারা নতুন হার নির্ধারণ করেছেন। এই চাঁদার ভাগ তারা কাস্টমস, স্থলবন্দর ও পুলিশ ছাড়াও স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কিছু নেতাদের কাছেও পাঠিয়ে থাকেন। গুঞ্জন আছে, ‘মুখ বন্ধ’ রাখার শর্তে স্থানীয় ও সিলেটের কিছু ‘সাংবাদিক’ও সেখান থেকে ভাগ পেয়ে থাকেন। 

সূত্র মতে, তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কয়লা-পাথর আমদানি করা হয়। এগুলো কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত পরিমাপের ভিত্তিতে খালাস করা হয়। এখানে সুবিধা দিতে সিএনএফের সদস্যরা অসাধু উপায়ের আশ্রয় নেন। অর্থের বিনময়ে এ সময় তারা ওজনে হেরফের করেন। যারা অর্থ খরচ করতে পারেন না বা চান না, তাদের নানা অজুহাত সৃষ্টি করে হয়রানি করা হয়।

তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এখানে দুই ভাগে চাঁদা আদায় করা হয়। প্রথম ভাগে সব সময় নগদে এই সুবিধা দেওয়া হয় না। আগেই সিগন্যাল থাকে কোন ট্রাক বিনা বাধায় ওজন স্তর পার হয়ে ভেতরে প্রবেশ করবে এবং কোন ট্রাককে মেপে তারপর প্রবেশ করতে দেওয়া হবে।

এখান থেকে ছাড়া পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দ্বিতীয় ধাপের মুখোমুখি হতে হয় ট্রাকগুলোকে। ওখানটা পার হতে হয় নগদে। বন্দরেরই সিএনএফ এজেন্টদের মাধ্যমে ৪-৫ জন সহকারীর সহায়তায় ট্রাকপ্রতি আদায় করা হয় ৪৫০ টাকা চাঁদা। বলা হয়, এগুলো সমিতির ফান্ডের টাকা। তবে টাকা শেষমেশ সমিতির ফান্ডে যায় না বলে জানান নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক এক সদস্য। তিনি বলেন, ৪৫০ টাকা দিয়েও হয়রানি হতে হয় ট্রাকচালকদের।

এই টাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে বন্দরে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি মহরম আলী চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, সমিতির অফিস খরচ বাবদ প্রতি গাড়ি ৪৫০ টাকা সংগ্রহ করা হয়।

‘টাকা কী করা হচ্ছে’ জানতে চাইলে তিনি সে বিষয়ে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী জানান, ব্যবসায়ীর স্বার্থের কথা বলে সবাই কিন্তু ব্যবসায়ীদের চুষে ফেলছেন তারা। 
এদিকে ব্যবসায়ী ছাড়াও স্থানীয়রা এই চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করতে গেলে চক্রটি নানাভাবে তাদের হুমকি-ধমকি দেয়।

সম্প্রতি বিষয়টি আলোচনায় উঠে এলে গত বুধবার স্থানীয় সাংবাদিকরা স্থলবন্দরে গেলে চক্রের সদস্যরা তাদের নাজেহাল করে।

 এ সময় আব্দুল করিম রাসেল সাংবাদিকদের বলেন, এখন থেকে কাস্টমস ও বন্দর এলাকায় সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে হলে আগে তার অনুমতি নিতে হবে।

স্থলবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা ইয়াকুব জাহিদ ছুটিতে থেকে মোবাইল ফোনে বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের সঠিক পরিমাপের ভিত্তিতে আমাদের কাছে কারপাস আসার পরই আমরা ক্লিয়ারেন্স দিই। এর বাইরে আমাদের কিছু জানা নেই। করারও নেই। 

তামাবিল স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) মোস্তাফিজুর রহমান গাড়িপ্রতি টাকা আদায়ের বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান। তিনি বলেন, আমাদের কোনো কর্মকর্তা এখানে জড়িত নেই। থাকলে অবশ্যই আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!