ঢাকা রবিবার, ০৪ মে, ২০২৫

২৩ বছরেও ফেরেনি প্রিয়জন, অপেক্ষায় শত পরিবার

পটুয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ৩, ২০২৫, ০৩:৩৫ পিএম
২০০২ সালের ৩ মে মধ্যরাতে ঢাকা থেকে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীগামী ‘এমভি সালাউদ্দিন-২’ লঞ্চটি ভয়াবহ ঝড়ে মেঘনা নদীতে ডুবে যায়। ছবি: সংগৃহীত

মেঘনা নদীর বুকে ২০০২ সালের ৩ মে ঢাকা থেকে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ ‘এমভি সালাউদ্দিন-২’ ভয়াবহ ঝড়ে ডুবে যায়। লঞ্চে থাকা প্রায় ৩৫০-৪০০ জন যাত্রীর মধ্যে সরকারি ধারণা অনুযায়ী ১৬০ জনের মৃত্যু হয়। 

দীর্ঘ ২৩ বছর পেরিয়ে গেলেও পটুয়াখালীর বিভিন্ন নদীর পাড়ে এসে ভিড় জমায় হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর জন্য স্বজনেরা। কারো হাতে প্রিয়জনের ছবি, কারো চোখে অস্ফুট কান্না, তারা যেন আজও অপেক্ষা করছেন প্রিয়জন ফিরে আসবে বলে।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১৬০ জনের প্রাণহানি ঘটে, তবে স্থানীয় সূত্রে এই সংখ্যা আরও বেশি বলে জানা যায়। তাদের মতে, নিখোঁজ এখনো অনেকেই, সেসব মরদেহ এখনো উদ্ধার করা হয়নি। তাই প্রতি বছর ৩ মে তেতুলিয়া, আগুনমুখা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে প্রিয়জনের জন্য দোয়া করে স্বজনেরা।

বেঁচে যাওয়া যাত্রী মো. মাসুম মাহমুদ বলেন, তখন আমার বয়স ১২-১৩ বছর, ঠিক কোন ক্লাসে পড়তাম মনে নেই। আজ থেকে ২৩ বছর আগে, ৩ মে, নারায়ণগঞ্জ থেকে লঞ্চে করে গ্রামের পথে ফিরছিলাম। তখন আমি ডায়রিয়ায় ভুগে হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। বিকেলে দুলাভাই আমাকে আরও তিনজনের সঙ্গে লঞ্চে তুলে দেন।

তিনি বলেন, লঞ্চে ঘুমিয়ে ছিলাম, হঠাৎ চিৎকারে ঘুম ভেঙে দেখি লঞ্চ কাত হয়ে যাচ্ছে, পানি ঢুকছে। কিছু বোঝার আগেই পানিতে পড়ে যাই। অলৌকিকভাবে লঞ্চের ভেতর থেকে বের হতে পারি। অন্ধকারে সাঁতরাতে থাকি, দিক না বুঝে। হালকা শরীর আর আল্লাহর রহমতে টিকে ছিলাম। দূরে একটা লঞ্চের আলো দেখে সেদিকে সাঁতরাই। কাছি ফেলে  তারা আমাদের উদ্ধার করেছিল।

তিনি আরও বলেন, আমার সঙ্গে থাকা তিনজনের মধ্যে দুজনকে সেখানে পাই, একজন মারা যায়। আজও সেই দিনটার কথা ভাবলে বুক কেঁপে ওঠে, আল্লাহ না বাঁচালে আজ হয়তো বেঁচে থাকতাম না।
 
এ ঘটনা নিয়ে স্থানীয়রা বলছেন, সালাউদ্দিন-২ লঞ্চডুবি কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি অব্যবস্থাপনা, অবহেলা এবং জবাবদিহিতার চরম অভাবের একটি অশনি সংকেত। নিহতদের প্রতি আমাদের অন্তর থেকে শ্রদ্ধা। আল্লাহ যেন তাদের শহীদের মর্যাদা দান করেন।

এদিকে  এ দুর্ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটি নিরাপত্তার ঘাটতির বিষয়টি তুলে ধরে বলে, লঞ্চটি অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই এবং জীর্ণ ছিল। তবে দুদশক পেরিয়ে গেলেও এই দুর্ঘটনার জন্য আজও কারো শাস্তি হয়নি।