মধ্যরাতে বোরকা পরে মাইক্রোবাসে চড়ে রাজধানীর ধানমন্ডির একটি ভাড়া বাসায় গোপনে ওঠেন মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। ঢাকার ধানমন্ডি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বর্তমানে চার দিনের রিমান্ডে রয়েছেন তিনি।
সরকার পরিবর্তনের প্রায় ১০ মাস পর মমতাজ গ্রেপ্তার হওয়ায় রাজনৈতিক ও জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, এতদিন তিনি কোথায় ছিলেন, কীভাবে আত্মগোপনে ছিলেন এই সাবেক সংসদ সদস্য।
মমতাজের আপন ভাই এবারত হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে টানা ৩ মাস সিংগাইরের চরদুর্গাপুর এলাকায় তার বাড়িতেই ছিলেন মমতাজ। এই ৩ মাসে একদিনও তিনি ওই বাড়ির বাইরে বের হননি।
তিনি জানান, ‘আমার স্ত্রী, সন্তান ছাড়া পাশের বাড়ির কেউ জানত না যে শিল্পী আপা এখানে আছেন। তিনি সবার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রাখেন, কেউ প্রয়োজন হলে আমার মাধ্যমেই যোগাযোগ করতেন।’
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, বাড়ির চারপাশ ছিল সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত এবং কোনো আগন্তুক এলেই জানিয়ে দেওয়া হতো, বাড়িতে কেউ নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে বেশ আয়েশেই সময় কাটান মমতাজ।
ভাই এবারত হোসেন জানান, মমতাজের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী নিপার মাধ্যমে তার নামে ধানমন্ডিতে একটি বাসা ভাড়া নেওয়া হয়। এরপর এক মধ্যরাতে বোরকা পরে গ্রামের বাড়ি থেকে বের হয়ে কাকডাকা আগে কালো গ্লাসের একটি মাইক্রোবাসে করে সরাসরি ঢাকায় চলে যান মমতাজ। বাসায় ওঠার পুরো প্রক্রিয়া নিপা তত্ত্বাবধান করেন।
নিপার স্বামী বিদেশে থাকায় মমতাজের যাবতীয় দেখাশোনা করতেন নিপা। আর আর্থিক সহায়তা দিতেন মমতাজের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) জুয়েল।
মমতাজের তৃতীয় স্বামী ডা. এসএম মঈন হাসান জানান, আত্মগোপনের একপর্যায়ে মমতাজ কিছুদিন মানিকগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. রমজান আলীর মেয়ে রুনুর মোহাম্মদপুরের বাসায়ও ছিলেন। তবে এ বিষয়ে রমজানের ঘনিষ্ঠ সানোয়ার হোসেন এই তথ্যকে মিথ্যা দাবি করেছেন।
ডা. মঈন আরও বলেন, মমতাজের নামে মহাখালী ডিওএইচএসে একটি পাঁচতলা বাড়ি রয়েছে, যা বর্তমানে পিএস জুয়েল দখল করে রেখেছে। জুয়েলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তিনি আরও জানান, গত তিন বছর ধরে মমতাজের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই।
সিংগাইর থানার ওসি জেওএম তৌফিক আজম জানান, তিনি মাত্র দুই মাস আগে এই থানায় যোগদান করেছেন। মমতাজের আত্মগোপনের বিষয়ে তিনি অবগত নন।