গায়েহলুদের অনুষ্ঠান বলে ডেকে নিয়ে রাজধানীর জাফরাবাদে এক তরুণ আলোকচিত্রীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত নুর ইসলাম (২৬) প্রায় এক যুগ ধরে বিয়ে ও সামাজিক অনুষ্ঠানে ছবি তোলার কাজ করতেন।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় জাফরাবাদের দুর্গামন্দির গলির পাশে তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ ও স্বজনরা জানায়, হত্যাকাণ্ডের আগে এক ব্যক্তি একটি গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে ছবি তোলার কথা বলে নুর ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অগ্রিম ৫০০ টাকা পাঠানো হয় তার মোবাইল ব্যাংক হিসাবে। এ টাকা পেয়েই তিনি সেখানে যান। পরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জানা যায়, পরিকল্পিতভাবেই তাকে সেখানে ডেকে আনা হয়েছিল।
নুর ইসলামের বড় ভাই ওসমান গনি জানান, শুক্রবার দুপুরে ভাইয়ের সঙ্গে শেষবার কথা হয়। তিনি বলেন, ‘ভাই জানায়, আজ জাফরাবাদে একটি গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে ছবি তুলতে যাচ্ছে। পরে রাত সাড়ে ৮টার পর থেকে ফোন বন্ধ পাই। পরে খবর পাই হাসপাতালের মর্গে ভাইয়ের মরদেহ।’
নুর ইসলামের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাঁ কান শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল, ঘাড় ও কাঁধে ছিল ধারালো অস্ত্রের গভীর জখম।
ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অন্তত পাঁচ থেকে ছয়জনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম।
তিনি বলেন, ‘গায়েহলুদের অনুষ্ঠান বলে ডেকে আনা হয়। এটি যে পরিকল্পিত হত্যা, সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত। হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’
হাজারীবাগ থানার ওসি মো. সাইফুল ইসলাম জানান, নিহতের বড় ভাই বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলা অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে করা হয়েছে।
বরিশালের আগৈলঝাড়ার সুজনকাঠী গ্রামের ছেলে নুর ইসলাম। চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম। বড় ভাইয়ের হাত ধরে ঢাকায় আসেন মাত্র ১০ বছর বয়সে। প্রথমে একটি ছাপাখানায় কাজ করতেন। পরে বয়স ১৫ বছর হওয়ার পর শখের বসেই আলোকচিত্রের কাজ শেখেন এবং ধানমন্ডির শংকর এলাকায় একটি মেসে থেকে পেশা হিসেবে আলোকচিত্র গ্রহণ শুরু করেন।
মাসে মাসে গ্রামে মা-বাবাকে টাকা পাঠাতেন নুর। দুই ভাই মিলে প্রতি ঈদে বাড়ি যেতেন। এবার আর যাওয়া হলো না।
স্বজন ও এলাকাবাসীর মতে, যারা শুধু একটি ক্যামেরা ও কিছু টাকার জন্য এমন নৃশংসতা চালাতে পারে, তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা জরুরি।
আপনার মতামত লিখুন :