গাইবান্ধার সাঘাটায় পুলিশের তাড়া খেয়ে পুকুরে ডুবে শিবির নেতা সিজু মিয়াকে সাঘাটা থানায় ডেকে নিয়ে মৃত্যুর ঘটনার বিচার চেয়ে বৃহস্পতিবার সাঘাটার আমলী আদালতে ওসি বাদশা আলম, কয়েকজন এসআইসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের মাতা মোছা. রিক্তা বেগম বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে এই মামলার আরজি দাখিল করেন। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ মামলার আইনজীবী সৈয়দ আল আসাদ ও জাহিদ হোসেন খান জানান, আমরা বাদীর পক্ষে সাঘাটার আমলী আদালতে মামলার আর্জি দাখিল করেছি। বিচারক পাপড়ী বড়ুয়া মামলাটি বিবেচনায় নিয়ে তদন্তের জন্য সিআইডির উপর দায়িত্ব দিয়েছেন।
চলতি বছরের ২৪ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই যুবক সাঘাটা থানায় ঢুকে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেন্ট্রি সিরাজুল ইসলামের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তার চিৎকারে এসআই মহসিন আলী এগিয়ে এলে তাকে ছুরিকাঘাত করে যুবক সিজু মিয়া। এ সময় স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের ধাওয়া খেয়ে যুবক পালিয়ে যাওয়ার সময় পুকুরে লাফ দেয়। এ সময় তাকে পানিতেই লাঠি দিয়ে গুতো ও আঘাত করলে তিনি পানিতে ডুবে যায়। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য সারারাত পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন ঘিরে রাখে পুকুরের চারপাশ।
দীর্ঘ সময়েও যুবক পুকুর থেকে উঠে না আসায় তারা ফায়ার সার্ভিসকে খবর না দিয়ে পুকুর ঘিরে রাতভর অপেক্ষা করেন পুলিশ। পরদিন সকালে থানা পুলিশ সাঘাটা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে পুকুর থেকে ওই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে।
ঘটনার দিন নিহত সিজু মিয়ার মা রিক্তা বেগম হত্যা মামলা করার জন্য সাঘাটা থানায় গেলে পুলিশ কৌশলে তাকে ডেকে নিয়ে তার ছেলের অপমৃত্যু হয়েছে বলে স্বাক্ষর গ্রহণ করে নেয়। এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে গাইবান্ধায় এসপি অফিস ঘেরাও, বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হলে স্থানীয় প্রশাসনের টনক নড়ে। পরে বিচারের আশ্বাসে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা লোক দেখানো তদন্ত টিম গঠন করে। তদন্ত টিমের সুপারিশে শাস্তি হিসাবে সাঘাটা থানার এসআই রাকিব হোসেনকে গাইবান্ধা পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়।
মামলার বিবরণে বলা হয়, নিহতের শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে বাদী নিহতের মা দাবি করে আইনজীবীদের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার বিকালে এই মামলা আদালতে বাদীপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ আল আসাদ, মো. জাহিদ হোসেন খানের মাধ্যমে সাঘাটার আমলী আদালতে দাখিল করেন।
মামলায় অন্য অভিযুক্তরা হলেন-সাঘাটা থানায় কর্মরত এএসআই রাকিবুল ইসলাম, এসআই মশিউর, এসআই মো. মহসিন আলী, মোহাম্মদ হামিদুল ইসলাম, আজাদুল ইসলাম, নয়ন চন্দ্র, জয়চন্দ্র, এএসআই আহসান হাবীব, ধর্ম চন্দ্র বর্মণ, এসআই উজ্জল, ডিউটি অফিসার এএসআই লিটন মিয়া, সাব্বির, ইউসুফ আলী ও মোমিনুল ইসলামসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন