নানা অনিয়ম-অবহেলায় চলছে রাজশাহী পুঠিয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা একেবারেই ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে যেতে হচ্ছে প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। সেখানে তারা আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে পুরোপুরি রোগমুক্ত হতে পারছেন না।
রোগীদের জন্য বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নেই হাসপাতালে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগী এবং রোগীর স্বজনরা সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে একাধিকবার পানির বিষয়ে অভিযোগ দিলেও বিশুদ্ধ পানি সংকটের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
দেখা গেছে, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ঢাকা-রাজশাহীর মহাসড়কের পার্শ্বে অবস্থিত। এটি ৫০ শয্যাবিশিষ্ট একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানে প্রতিদিন বহির্বিভাগে একাধিক উপজেলার শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন।
কিন্তু চিকিৎসকরা দুপুর ১২টার পর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো রোগী দেখেন না। আবার কেউ কেউ কর্মরত অবস্থায় উপজেলার বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা দিতে দেখা গেছে। বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকের নারী-পুরুষ দালালদের টানাহেঁচড়ায় রোগীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন।
ভালুকগাছি ইউনিয়ন থেকে আসা আসমাউল ও নাটোর সদর উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘হাসপাতালে আমার পরিবারেরর এক সদস্য ভর্তি হয়ে আছে। এখানে শুনতে পাচ্ছি, হাসপাতালে ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে কোনোরকম বিশুদ্ধ পানি, খাবারের ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে আমরা ঢাকা-রাজশাহী মহাসকের নিকটে এবং হাসপাতালে প্রধান গেটের সামনে থাকা একটি টিউবওয়েল থেকে পানি এনে পান করছি।’
রোগী হাফিজ হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালের ওষুধ, খাবার ও পানি সংকটের কথা ডাক্তার-নার্সদের অনেকবার বলেছি, কিন্ত তারা রোগীদের কথা শোনেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নিজেই বিভিন্ন অজুহাতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়মিত অফিসে আসেন না। শুধু তার কারণেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনিয়ম-দুর্নীতি ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে। এখন সবাই হাসপাতাল থেকে ব্যক্তিগত আয় করার চেষ্টা করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে ২৮ জন চিকিৎসক কর্মরত থাকার বিধান রয়েছে। কিন্ত আমরা কয়েকজন মিলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সব রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে।’
দায়িত্বরত এক নার্স বলেন, ‘চাকরি হারানোর ভয়ে আমরা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বিরুদ্ধে কথা বলতে পারি না।’
এদিকে, প্রাইভেট ক্লিনিকের মহিলা দালাল বলেছেন, ‘আমাদের ক্লিনিক ও প্যাথলজির মালিকরা নিয়মিত হাসপাতালের স্যারদের মাসোহারা দিয়ে থাকেন। তাই প্রতিদিন সকালে হাসপাতালের এসে রোগীদের প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যায়।’
আ. রহিম নামের এক রোগী বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসলে ডাক্তারা বেশির ভাগ রোগ নির্ণয় করার জন্য প্রাইভেট ক্লিনিক কিংবা প্যাথলজিতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. জনাব আলী মুন্সী হাসপাতালে থাকার নিয়ম থাকলে তিনি থাকেন না।’
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল হাসান শাওনের সঙ্গে স্বাক্ষাৎ করার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে পাওয়া যায়নি। ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বারবার ফোন কেটে দেন।
রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন ডা. এসআইএম রাজিউল করিম বলেন, ‘পানি সংকটের ব্যাপারে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ইচ্ছে করলেই তাৎক্ষণিক সমাধান করতে পারে। টিএচইও বিরুদ্ধের অভিযোগ এবং হাসপাতালে বিষয়গুলি সমাধান করা হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :