শুক্রবার, ৩০ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আহাদ তালুকদার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল)

প্রকাশিত: মে ২৮, ২০২৫, ০৯:২৯ পিএম

চাকরি ছেড়ে সফল খামারি বরিশালের শামিম

আহাদ তালুকদার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল)

প্রকাশিত: মে ২৮, ২০২৫, ০৯:২৯ পিএম

আগৈলঝাড়ার রাইয়ান ডেইরি অ্যান্ড ফ্যাটেনিং ফার্মে ষাঁড়ের সঙ্গে শামিম শিকদার। ছবি-রূপালী বাংলাদেশ

আগৈলঝাড়ার রাইয়ান ডেইরি অ্যান্ড ফ্যাটেনিং ফার্মে ষাঁড়ের সঙ্গে শামিম শিকদার। ছবি-রূপালী বাংলাদেশ

ঢাকায় একটি বেসকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করতেন। চাকরি করে সুবিধা হচ্ছিল না। পরে চাকরি ছেড়ে গ্রামে চলে আসেন। গ্রামে এসে খামার করার সিদ্ধান্ত নেন। তাতেই পাল্টাতে শুরু করে জীবন। এখন একজন সফল খামারি শামিম শিকদার।

জানা গেছে, তিনি ২০টি গাভী ও ষাঁড় কিনে খামার শুরু করেন। সেই খামারে এখন গরু ২৮০টি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পুকুরে মাছ চাষ। সমন্বিত সেই খামার থেকে খরচ বাদে এখন তার মাসে আয় প্রায় ৪ লাখ টাকা। তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক বেকার যুবক খামার করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

শামিম শিকদার বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের বাসাইল গ্রামের মো. সেকেন্দার আলী শিকদারে ছেলে। শামিম বাড়ির একর জমিতে গড়ে তুলেছেন সমন্বিত খামার। খামারের নাম দিয়েছেন ‘বাসাইল রাইয়ান ডেইরি অ্যান্ড ফ্যাটেনিং ফার্ম’। 

তার খামারে দেশি-বিদেশি জাতের ৫০টি গাভী, ২৩০টি ষাঁড় এবং এক একরের দুটি পুকুরে মাছের খামার রয়েছে। ৪ একর জমিতে গরুর খাবারের জন্য করা হয় ঘাস চাষ। এসব দেখাশোনা করতে খামারে সারা বছর বেতনভুক্ত ১০ জন শ্রমিক কাজ করেন।

শামিম শিকদারের খামারে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে সবুজের সমারোহ। দুই পুকুরের মাঝখানে গরু রাখার দুটি শেড ও একটি দোতলা দালান। দুটি শেডে বিদেশি জাতের গাভী ও বাছুর এবং দালানের ১ম ও ২য় তলায় ষাঁড় রাখা হয়েছে। কোরবানিতে বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে আকর্ষণীয় ষাঁড়।

শামিম শিকদার বলেন, ‘আমি চাকরি ছেড়ে দিয়ে ২০১২ সালে গ্রামে চলে আসি। আমি ওই সালেই ২০টি গরু নিয়ে এক একর জমির ওপরে প্রথম একটি ঘরে খামার তৈরি করি। এরপরে ধীরে ধীরে আরও দুটি ঘর ও একটি দোতলা দালান তৈরি করি।’

তিনি বলেন, ‘ওই দালানের ১ম ও ২য় তলায় গরু পালন করি। বর্তমানে আমার খামারে গাভী ও ষাঁড় মিলে ২৮০ টি গরু আছে। এক একর জমির ওপরে খামার ও গরুর খাবারের জন্য চার একর জমিতে ঘাস চাষ করি। আমার ইচ্ছা এই খামারটিতে এক হাজার গরু পালন করা।’

শামিম বলেন, ‘খামারে দুই কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে। ১০ জন স্থায়ী কর্মচারী কাজ করছে। খরচ বাদে বছরে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। এসি রুমে বসে চাকরি করে যে শান্তি পাইনি, এখন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে খামার করে তার চেয়ে কয়েক গুণ তৃপ্তি পাচ্ছি। আমার ইচ্ছা খামারে যেন ৫০ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়। সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।’

তিনি বলেন, ‘খামারে প্রতিদিন ৩ শ লিটার দুধ পাই। আমি এই দুধ বাজারজাত করতে পারছি না। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের মাধ্যমে আড়ং বা মিল্কভিটা থাকত তাহলে নির্বিঘ্নে দুধ বিক্রি করতে পারতাম এবং লাভবান হতাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন উৎপাদিত বেশিরভাগ দুধ নষ্ট হচ্ছে। খামারে ষাট হাজার থেকে শুরু করে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত মূল্যের গরু আছে। দুধ ও গরু বিক্রির সুবিধা পেলে খামার করে লাভবান হওয়া যায়। দেশে নতুন খামার করতে মানুষ আগ্রহী হতো।’

রাইয়ান ডেইরি অ্যান্ড ফ্যাটেনিং ফার্ম ম্যানেজার মো. রাকিবুল ইসলাম রনি বলেন, ‘এখানে দশজন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমাদের দশটি পরিবার এই ফার্মের কারণে ভালো আছি। এর থেকে সুখের আর কী আছে। দেশে এমন প্রতিষ্ঠান হলে বেকারত্ব দূর হতো। দেশের বাইরে থেকে গরু না এলে খামারিরা লাভবান হবে। দেশে খামারের সংখ্যা আরও বাড়বে।’

স্থানীয় মেজবা শিকদার, মিঠু শিকদার, কালাম মোল্লা, অপূর্ব লাল সরকার, মো. সাইফুল মোল্লা জানান, খামার করে শামিম শিকদার শুধু নিজের ভাগ্যই বদল করেননি, অন্য যুবকদেরও পরামর্শ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। অনেকেই শামিমের পরামর্শে খামার করে সুখে সংসার করছেন। এখন এলাকার অনেকেই তার কাছ থেকে গরু পালন করার পদ্ধতি ও কৌশল শিখছেন।

আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. পলাশ সরকার বলেন, ‘দেশে নতুন নতুন খামার সৃষ্টির লক্ষ্যে উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিয়ে থাকি। মানুষকে খাওয়াবেন, মানুষ বেইমানি করবে। কিন্তু পশুপাখি কখনো বেইমানি করে না। তার ফিডব্যাক শামিম নিজে পেয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘শামিম সমন্বিত খামার গড়ে সফল হয়েছেন। তাকে দেখে অনেকেই খামার গড়তে উৎসাহিত হচ্ছেন। দুধ বিক্রির বিষয়ে আমি মিল্কভিটাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সঙ্গে এবং খামারিদের সমন্বয়ে একটি ব্যবস্থা নেব।’

Link copied!