কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তফা কামালের গাফিলতিতে পৌর সদরসহ তিনটি ইউনিয়নের ৫ হাজার ২৬০ শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পায়নি। এতে অভিভাবকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা প্রতিদিনই বিদ্যালয়ে গিয়ে সমস্যার সমাধান চাচ্ছেন।
অভিযোগের বিষয়ে মোস্তফা কামাল জানান, উপবৃত্তি কার্যক্রমের জন্য চালু হওয়া নতুন সফটওয়্যারটি ধীরগতির হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীর নাম আইপিএমআইএস-এর তালিকা থেকে বাদ পড়ে গেছে।
জানা গেছে, সরকার প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ছয় মাস অন্তর ৯০০ টাকা এবং তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ১,৮০০ টাকা করে উপবৃত্তি প্রদান করে। এই অর্থ সাধারণত শিক্ষার্থীর মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে যুক্ত 'নগদ' মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়।
চলতি বছরের ১৫ থেকে ১৮ জুনের মধ্যে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ছবিসহ তালিকা নতুন সফটওয়্যারে হালনাগাদ করা হয়। তবে পাকুন্দিয়া পৌরসভা, মির্জাপুর ও হোসেন্দী ক্লাস্টারের মোট ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নাম বাদ পড়ে যায়। ওই তিন ক্লাস্টারের দায়িত্বে ছিলেন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল।
মির্জাপুর ক্লাস্টারের এক পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের দেওয়া উপবৃত্তির টাকা দিয়েই ছেলের পড়ালেখার খরচ চালাই। এ বছর না পাওয়ায় খুব বিপদে পড়েছি।’ একই ক্লাস্টারের আরেক অভিভাবক সোলাইমান বলেন, ‘আমি দিনমজুর। সরকারের উপবৃত্তির টাকা আমাদের অনেক উপকারে আসে। না পেয়ে হতাশ হয়েছি।’
এ বিষয়ে কয়েকজন প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের তালিকা অনলাইনে পূরণ করে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তফা কামালের মেইলে পাঠান। কিন্তু তিনি তা যথাসময়ে যাচাই করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে পাঠাননি।
এ বিষয়ে মোস্তফা কামাল জানান, তালিকা জমা দেওয়ার শেষ সময়ের মধ্যে তিনি প্রশিক্ষণে ছিলেন। সেই সঙ্গে সার্ভার সমস্যার কারণে আইডি, পাসওয়ার্ড, ক্যাপচা ও ওটিপি নিয়ে জটিলতায় পড়েন। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে নয়, বরং প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে তালিকা পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে দাবি করেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ দৌলত হোসেন ভূঁইয়া বলেন, সহকারী কর্মকর্তারা যখনই তার আইডিতে তালিকা পাঠিয়েছেন, তিনি সঙ্গে সঙ্গেই তা অনুমোদন দিয়েছেন। তবে এই তিন ক্লাস্টারের তালিকা তার আইডিতে আসেনি। কেন এমনটা হয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, সারাদেশে এবার প্রায় ১৭ লাখ শিক্ষার্থী উপবৃত্তি সংক্রান্ত জটিলতায় পড়েছে। বাদ পড়া শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আগামী সেপ্টেম্বর মাসে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
আপনার মতামত লিখুন :