২০০৫ সালের এক বৃহস্পতিবার সকাল। ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে গাজীপুরে মেজো মেয়ের বাসায় বেড়াতে বের হন ৪৫ বছর বয়সের সালাউদ্দিন ফরাজি। তারপর থেকেই তিনি নিখোঁজ। বহু খোঁজাখুঁজি, থানায় জিডি, আত্মীয়-স্বজনের কাছে যোগাযোগ—সবকিছুই করে তার পরিবার। কিন্তু কোনো কূলকিনারা মেলেনি।
অবশেষে দীর্ঘ ২০ বছর পর খোঁজ মিলেছে ৬৫ বছরের বৃদ্ধ সালাউদ্দিন ফরাজির। ফিরে এলেছেন নিজ গ্রামে তার পরিবারের কাছে। বৃদ্ধ বয়সে হলেও তার ফিরে আসায় কান্না ও আনন্দে ভেঙে পড়েছে পুরো পরিবার।
সালাউদ্দিন ফরাজির বাড়ি ভোলা চরফ্যাশনের শশীভূষণ থানার নংলাপাতা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত জয়নাল ফরাজির ছেলে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, কর্মের জন্য স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে রাজধানী ঢাকায় যান সালাউদ্দিন। তিনি সেখানে রিকশা চালিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ যোগাতেন। ২০০৫ সালের এক বৃহস্পতিবার সালাউদ্দিন মেজো মেয়ের বাসা গাজীপুরে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে বের হন। তখন থেকেই তিনি নিখোঁজ।
তার সন্ধান চেয়ে পরিবারের লোকজন বহু চেষ্টা করেও আর খোঁজ পাননি। পরিবারের লোকজন ধরেই নিয়েছিলেন, হয়তো তিনি আর জীবিত নেই। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে দীর্ঘ ২০ বছর পর বাড়ি ফিরলেন সালাউদ্দিন ফরাজি। বৃদ্ধ বয়সে হলেও সালাউদ্দিন ফরাজিকে ফিরে পেয়ে খুশি তার পরিবারের সদস্যরা।
তার বড় মেয়ে রেখা রূপালী বাংলাদেশকে জানান, তার বাবা নিখোঁজের সময় তিনি এক সন্তানের জননী। মেজো বোনকে বিয়ে দেওয়ার পর তারা গাজীপুরে বসবাস শুরু করেন। ২০০৫ সালের বৃহস্পতিবার তার বাবা মেজো বোনের বাসায় বেড়াতে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে বের হন। তারপর থেকেই তার বাবা নিখোঁজ হন।
তিনি আরও বলেন, অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তারা তাকে আর ফিরে পাননি। তারা ভেবে নিয়েছিলেন, হয়তো তাদের বাবা আর বেঁচে নেই। গত ১৬ জুলাই মায়া ব্রিজ এলাকায় কিছু লোক তার বাবাকে ঘোরাফেরা করতে দেখেন। স্থানীয়রা ভেবে নিয়েছেন, উনিই সালাউদ্দিন ফরাজি। পরে স্থানীয়রা তাদের খবর দিলে তারা তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান।
সালাউদ্দিন ফরাজির মেয়ে রূপালী বাংলাদেশকে আরও জানান, তার বাবা বর্তমানে কথা বলতে পারছেন না। একধরনের মানসিক প্রতিবন্ধী। তিনি চান, তার বাবা যেন বাকিটা সময় পরিবারের সঙ্গেই কাটাতে পারেন। তবে তিনি তাদের বাবা কি না—এ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। তাই থানায় জিডি করেছেন। তবে পুলিশ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করবে, তিনি তাদের বাবা কি না।
সালাউদ্দিন ফরাজির স্ত্রী মাসুমা রূপালী বাংলাদেশকে জানান, তার স্বামী নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে ছেলে-সন্তানদের নিয়ে বহু কষ্টে দিন পার করেছেন। খেয়ে-না-খেয়ে সন্তানদের আগলে রেখেছেন তিনি। তার স্বামী যখন নিখোঁজ হন, তখন তিনি আগেই দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট এক মেয়ে ও দুই ছেলেকে বাসায় রেখে অন্যের বাসায় কাজ করেছেন। পরে সন্তানরাও কর্মে নেমে পড়েছেন।
তিনি বলেন, ‘স্বামীর অপেক্ষায় ছিলাম দীর্ঘ ২০ বছর। ভেবেছি, স্বামী বেঁচে থাকলে কোনো এক সময় ফিরবেন। আবার মনে হয়েছে, বেঁচে নেই। বাকি সময়টা স্বামীকে নিয়ে জীবন পার করতে চাই।’
শশীভূষণ থানার ওসি তারিক হাসান রাসেল রূপালী বাংলাদেশকে জানান, সালাউদ্দিন ফরাজির মেয়ে রেখা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তবে তিনি তাদের পরিবারের সদস্য কি না, তা শনাক্ত করার জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে।