একটি দল ক্ষমতায় আসার জন্য ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, তাদের বক্তব্য ছিল—‘ছাত্রদের আন্দোলনের সঙ্গে আমরা সম্পৃক্ত নই।’
‘ছাত্রদের এ আন্দোলনে যদি তারা সম্পৃক্ত না হতো, আজকের এই অবস্থান তৈরি হতো না। ক্ষমতার মসনদে যাওয়ার স্বপ্নও কখনো বাস্তবায়ন হতো না।’
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় ইসলামী যুব আন্দোলনের নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে লক্ষ্মীপুরের দক্ষিণ তেমুহনী এলাকায় আয়োজিত যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মাহবুবুর রহমান।
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের শক্তি আমরা দেখেছি। তাদের নেত্রীর বাসা ট্রাক দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছিল। সেই ট্রাকগুলো সরানোরও শক্তি তাদের ছিল না। নেত্রী যখন জেলখানায় ছিলেন, চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার আন্দোলনও তারা করতে পারেননি।’
‘আজ যখন তারা আলো দেখেছে, পূব আকাশে সূর্য উদিত হয়েছে, ৫ আগস্টের পরে তারা যেন স্বাধীন সোনার বাংলা পেয়ে গেছে! জুলাই সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন না হলে এবং ফ্যাসিস্টের বিচার না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না। ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না।’
অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘যে ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম ছিল তাকে সরানোর জন্য সরকারি গেজেট অনুযায়ী আমাদের ১৪০০ ভাই জীবন দিয়েছেন, হাজার হাজার পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। বিভেদ নয়, ঐক্য চাই। সমঝোতার মাধ্যমে জাতীয় সরকারের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা বলেছিলেন, জাতীয় সরকার গঠন করবেন। জাতীয় নির্বাচন ছাড়া জাতীয় সরকার কীভাবে গঠিত হবে? আমরা এক মেরুতে, আপনারা আরেক মেরুতে অবস্থান করছেন। এইভাবে নির্বাচন হলে আপনারা আপনাদের আখের গোছাবেন। ৪০ শতাংশ বা ৩০ শতাংশ ভোট নিয়ে সরকার গঠন করবেন, আর ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ ভোট নিয়ে আমরা রাস্তায় ঘুরে বেড়াব—এটাই কি গণতন্ত্র?’
পিআর পদ্ধতি নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘পৃথিবীর ৯১টি দেশে পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) সিস্টেম চালু আছে। পিআরে ভয় পাচ্ছেন কেন? যদি জনগণ আপনাদের ভোট দেয়, তাহলে ভয় কীসের? জনগণের সমর্থন নিয়েই ক্ষমতায় যাবেন।’
‘পিআর সিস্টেম চালু হলে বোঝা যাবে, কে আসলেই জনগণের ভোটে নির্বাচিত। সবাই মিলে জাতীয় সরকার গঠন করব। পিআরের নাম শুনলেই যেন আপনাদের গায়ে চুলকানি শুরু হয়! স্বাধীনতার পর থেকে কখনোই আপনারা ৫০ শতাংশ ভোট পাননি। আর পিআর ব্যবস্থা চালু হলে, জীবনে ৫০ শতাংশ ভোট পাবেন না।’
মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘তাদের (বিএনপি) বক্তব্য হলো—পিআর নাকি নতুন করে আমদানি হয়েছে। অথচ ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরাসহ তারাও অংশগ্রহণ করেছে। আমাদের আমির সে সময় জাতির উদ্দেশ্যে স্পষ্টভাবে পিআর ব্যবস্থার কথা বলেছিলেন।’
‘‘২০০৮ সাল থেকেই ক্রমাগতভাবে পিআর নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এখন ২০২৫ সালে এসে বলছেন—‘পিআর মাথায় দেয়, না গায়ে দেয়?’ সময় এসেছে—গায়ে দেওয়ার। এ দেশের জনগণ এখন পিআর বোঝে। ঠেলাগাড়ি চালানো মানুষ বোঝে, রিকশাওয়ালা বোঝে, একজন শ্রমিক বোঝে—শুধু আপনারাই বোঝেন না। আপনারা অন্ধ হয়ে গেছেন।’’
ইসলামী যুব আন্দোলনের জেলা কমিটির সভাপতি মোখলেছুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি শোরাফ উদ্দিন স্বপনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আতিকুর রহমান মুজাহিদ।
বিশেষ অতিথি ছিলেন ইসলামী আন্দোলন জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দেলাওয়ার হোসাইন ও সেক্রেটারি জহির উদ্দিন প্রমুখ।
আপনার মতামত লিখুন :