সাতক্ষীরা জেলার তালা ও কলারোয়া এবং যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী কপোতাক্ষ নদের ওপর নির্মিত বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে পড়ায় তিন উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। স্রোতের টানে উজান থেকে ভেসে আসা শ্যাওলা ও কচুরিপানার চাপে ভেঙে যায় এই সাঁকোটি। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অন্তত ২৫টি গ্রামের মানুষের চলাচল।
দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি, শেখপুরা, রেজাকাটি, বগা, মহাদেবপুর এবং তালা ও কলারোয়ার সারসা, সরুলিয়া, সেনেরগাতি, ধানদিয়াসহ প্রায় ২৫টি গ্রামের হাজারো মানুষ ওই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করতেন। সাঁকোটি ছিল মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মস্থান সাগরদাঁড়িতে যাওয়ার একমাত্র পথ।
স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি টানা ভারী বর্ষণের কারণে নদীতে স্রোত বেড়ে যায় এবং নদীতে জমে থাকা কচুরিপানার চাপে গত ১৬ জুলাই সাঁকোটি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। এখন মানুষজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জমাট বাঁধা শ্যাওলার ওপর দিয়ে পারাপার করছেন, কেউ কেউ নৌকা ভাড়া করে যাতায়াত করছেন।
সাগরদাঁড়ি বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজ্জাক আহমেদ রাজু জানান, ‘চলতি বছরের শুরুতে মধুকবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে স্থানীয়দের স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকোটি মেরামত করা হয়েছিল। কিন্তু উজান থেকে নেমে আসা শ্যাওলা ও কচুরিপানার চাপে সেটি আবারও ভেঙে পড়ে।’
সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আকরাম হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই এলাকাবাসী সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। এরই মধ্যে সেতু নির্মাণের জন্য কারিগরি প্রতিবেদন তৈরি করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে, কিন্তু কোনো অগ্রগতি হয়নি।’
বিষয়টি নিয়ে কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রেকসোনা খাতুন বলেন, ‘সাঁকোটি ভেঙে পড়ার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। আমি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছি।’
সারসা গ্রামের বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘ব্রিজ না থাকায় আমাদের চলাচলে চরম কষ্ট হচ্ছে। অনেকে শ্যাওলার ওপর দিয়ে হেঁটে পার হচ্ছেন, ফলে পা পিছলে পড়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।’
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রী, রোগী ও কৃষকদের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সাগরদাঁড়ির কলেজ, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এটি প্রধান যাতায়াতপথ। এছাড়া সপ্তাহে তিন দিন হাট বসে সাগরদাঁড়িতে, যেখানে ওপারের কৃষকরা ফসল নিয়ে আসেন। পর্যটকরাও নিয়মিত ভিড় করেন কবির জন্মভিটায়।
স্থানীয়দের একটাই দাবি- দ্রুত একটি বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ এবং টেকসই একটি সেতু নির্মাণ। তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন যেন আর যেন এমন দুর্ভোগে না পড়তে হয়।



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন