প্রকৃতির প্রতি অগাধ ভালোবাসা আর সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই ছোটবেলা থেকেই ভিন্নধর্মী এক যাত্রা শুরু করেছিলেন মাহমুদুল ইসলাম মামুন।
সবাই যখন ক্যারিয়ার আর অর্থের পেছনে ছুটছেন, তখন মামুন গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে পলিথিন কুড়িয়ে তাতে চারা লাগান, বই বিতরণ করেন, পাঠশালা চালান। এ কারণে তাকে অনেকেই ‘পাগল’ বলে সম্বোধন করতেন।
পঞ্চগড়ের তেতুঁলিয়া উপজেলার আজিজ নগরের সন্তান মামুন। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছোট। বাংলা বিষয়ে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেও সাধারণ জীবন বেছে নিয়েছেন।
রাস্তার ধারে পড়ে থাকা পলিথিন কুড়িয়ে এনে তাতে মাটি, সার ও বীজ দিয়ে গাছের চারা তৈরি করেন। পরে নিজের জংধরা সাইকেলে করে সেই গাছ ও বই পৌঁছে দেন শিশুদের হাতে। পাঠশালায় বই পড়ানো, গাছ দেওয়া এবং পরিবেশ রক্ষায় মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে।
এ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৪ সালের জাতীয় পরিবেশ পদক অর্জন করেছেন তিনি। তার এই অর্জনে গর্বিত তার মা মাহমুদা বেগম। প্রথমে ছেলের কর্মকাণ্ডে আপত্তি করলেও পরে পাশে দাঁড়ান তিনিও।

মামুন জানান, কাজ করতে গিয়ে তাকে অনেকেই পাগল বলেছে, হাস্যরস করেছে। কিন্তু তাতে থেমে যাননি তিনি। পশু-পাখি পালন করে, খাসি বিক্রি করে বই কেনেন, গাছ তৈরি করেন। মানুষের সেবা আর প্রকৃতির জন্য কাজ করাকেই জীবনের মূল লক্ষ্য হিসেবে নিয়েছেন তিনি।
স্থানীয়রা বলেন, মামুন গাছ দেয়, বই দেয়, ছোটদের পড়ায়—সত্যিকারের এক ভালো মানুষ। বাচ্চারা ‘মামুন ভাই আসছে’ বলে চিৎকার করে আনন্দে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী জানান, মামুনের মতো মানুষরা সমাজের জন্য আশার আলো। তার কাজ অনুকরণীয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে একটি বাইসাইকেল উপহার দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ এবং জেলা জামায়াতের আমির মো. ইকবাল হোসেন।
দীর্ঘ দুই দশক ধরে সমাজ ও পরিবেশের জন্য স্রোতের বিপরীতে কাজ করে যাওয়া এই মানুষটির স্বীকৃতি এখন অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে অনেকের জন্য।
আপনার মতামত লিখুন :