গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে মৌলভীবাজারে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিজয় শোভাযাত্রা, সমাবেশ ও মতবিনিময় সভা। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পালন করা হয়।
কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপি, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ছাত্রশিবির ও স্বেচ্ছাসেবক দল নিজ নিজ কর্মসূচির মাধ্যমে দেশ নিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য ও নির্বাচন সংক্রান্ত দাবি তুলে ধরেন।
সেইসঙ্গে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ৩৬ জুলাই যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়। নিচে দলভিত্তিক আলাদা প্রতিবেদনে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:
মৌলভীবাজারে বিএনপির শোভাযাত্রায় জনতার ঢল
মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতন ও ছাত্র-জনতার বিজয়ের বর্ষপূর্তি’ উপলক্ষে মৌলভীবাজার সদর ও পৌর বিএনপির আয়োজনে বিজয় শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মুজিবুর রহমান মজনুর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মারুফ আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বিজয় শোভাযাত্রা-পরবর্তী সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক পৌর মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূন এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আব্দুর রহিম রিপন।
সভায় ফয়জুল করিম ময়ূন বলেছেন, ‘আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম চলছিল। গত বছরের এই দিনে ফ্যাসিস্ট হাসিনার কবল থেকে আমরা দেশবাসী মুক্ত হয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য একটাই—নিরপেক্ষ নির্বাচন। এই নির্বাচনের অপেক্ষায় সারাদেশের মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা।’
তিনি বলেন, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য রাজপথে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী রক্ত ঝরিয়েছে। অনেকেই খুন, গুম ও হত্যার শিকার হয়েছে। লাখ লাখ নেতাকর্মী মিথ্যা মামলায় নির্যাতনের শিকার হয়েছে।’
ফয়জুল করিম ময়ূন বলেন, ‘আজকের এই সদর উপজেলা ও পৌর বিএনপির বিশাল বিজয় মিছিল-পরবর্তী সভা থেকে আমরা সরকারকে বলছি—আর টালবাহানা নয়, আর দেরি নয়, কালক্ষেপণ নয়। অবিলম্বে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন। ‘সংস্কার, সংস্কার’ বলে সময় পিছিয়ে দেওয়া যাবে না। বিচার, সংস্কার, নির্বাচন—সব একসাথে চলবে। সরকার যতটুকু পারে করবে, বাকিটা করবে নির্বাচিত সরকার।’
এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মৌলভী আব্দুল ওয়ালী সিদ্দিকী, আলহাজ্ব এম এ মুকিত, অ্যাডভোকেট সুনীল কুমার দাশ, মো. ফখরুল ইসলাম, বকসী মিসবাহউর রহমান, অ্যাডভোকেট বকসী যুবায়ের আহমদ, মনোয়ার আহমেদ রহমান, শ্যামলী সূত্রধর, সদর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাদিকুর রহমান সাদিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সফিউর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজল মাহমুদ, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মমশাদ আহমদ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার মজুমদার ইমন প্রমুখ।
শোভাযাত্রায় সদর উপজেলা বিএনপির ১২টি ইউনিয়নের ১৩টি ইউনিটের কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। ঢাকঢোল ও বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী মুহুর্মুহ স্লোগানে পুরো রাজপথ প্রকম্পিত করে তোলে তারা।
মৌলভীবাজারে ছাত্রশিবিরের র্যালি: জুলাই জাগরণ, নব উদ্যমে বিনির্মাণ জুলাই
৩৬ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘জুলাই জাগরণ, নব উদ্যমে বিনির্মাণ’ শীর্ষক র্যালি করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির মৌলভীবাজার শহর ও জেলা শাখা।
দুপুরে মৌলভীবাজার শহরের প্রেসক্লাব মোড় থেকে র্যালিটি বের হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কুসুমবাগ পয়েন্টে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।
জেলা সেক্রেটারি মহসিন আহমদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শহর শাখার সভাপতি তারেক আজিজ, জেলা সভাপতি এম ফরিদ উদ্দিন ও শহর সেক্রেটারি কাজী দাইয়ান আহমদ।
সমাবেশে তারেক আজিজ বলেন, ‘যদি এ দেশের ছাত্রসমাজ জেগে থাকে, তাহলে যতই ফ্যাসিবাদের দোসররা লুকিয়ে চিপায়-চাপায় ঘুরাফেরা করুক, তারা দিনের আলোতে আর আসতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। আমরা জাতির ছাত্রসমাজকে বলতে চাই, সত্যিকার অর্থে যদি এই জাতির দুঃখ মোচন করতে হয়, তবে ছাত্রসমাজই তা পারবে।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই ছিল মজলুমদের দ্বারা সংগঠিত একটি সফল গণ-অভ্যুত্থান, যা জালিমের প্রাসাদ কাঁপিয়ে দিয়েছিল। আমরা আর কোনো জালিম দেখতে চাই না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ছাত্র-জনতার ঘোষণাপত্র হোক। শেখ হাসিনার লীগের আধিপত্য আমরা মেনে নেব না। আজ ফ্যাসিবাদের দোসররা বুক ফুলিয়ে হাঁটছে, আর আমার শহীদ ভাইয়েরা কবরে শুয়ে আছে—আমরা তা হতে দেবো না।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে খেলাফত মজলিসের সমাবেশ ও গণমিছিল
মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব চত্বরে খেলাফত মজলিস মৌলভীবাজার জেলা শাখার উদ্যোগে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি’ উপলক্ষে সমাবেশ ও গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশ শেষে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মিছিলটি কুসুমবাগ পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়।
খেলাফত মজলিস জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মুহিবুল ইসলাম ও শহর শাখার সাধারণ সম্পাদক হাসান আহমদ চৌধুরীর যৌথ পরিচালনায় এবং জেলা সভাপতি মাওলানা ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও মধ্যপ্রাচ্য জোন পরিচালক, মৌলভীবাজার-০৩ (সদর-রাজনগর) আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মাওলানা আহমেদ বিলাল।
বিশেষ অতিথি ছিলেন মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসনের সংসদ সদস্যপ্রার্থী মাওলানা লোকমান আহমদ, মৌলভীবাজার-৪ আসনের প্রার্থী মাওলানা নুরুল মুত্তাকিন জুনাইদ এবং মৌলভীবাজার-২ আসনের প্রার্থী সাইফুর রহমান খোকন।
বক্তব্য রাখেন শহর শাখার সভাপতি কাজী মাওলানা হারুনুর রশীদ, জেলার উপদেষ্টা মাওলানা আব্দুল আলী, মাওলানা আব্দুল হাই, রাজনগর উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা কাওছার আহমদ তালুকদার, শহর শাখার সহ-সভাপতি মাওলানা সৈয়দ মাজদুদ আহমদ রাফিদ, সদর উপজেলার সহ-সভাপতি মাওলানা জুনাইদ আহমেদ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস মৌলভীবাজার শহর সভাপতি আব্দুল্লাহ আল নোমান, জেলা সভাপতি রাফি উদ্দিন মাবরুর, খেলাফত মজলিস শ্রীমঙ্গল উপজেলা সভাপতি মাওলানা আয়াত আলী, সদর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইসমাইল আহমদ, সদর উত্তর সভাপতি মুফতি ইব্রাহীম খলিল, শ্রমিক মজলিস জেলা সভাপতি এম এ রহিম নোমানী, শমসেরনগর থানা সভাপতি মাওলানা শাহ লুতফুর রশীদ, কুলাউড়া উপজেলা শাখার সেক্রেটারি মাওলানা মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ।
মৌলভীবাজারে ৩৬ জুলাই যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত
মৌলভীবাজারে যথাযোগ্য মর্যাদা ও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে ৩৬ জুলাই। সকালে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নবনির্মিত শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ৩৬ জুলাইয়ের বীরদের স্মরণে শহীদ বেদিতে ফুল দিতে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের ঢল নামে।
প্রথমে জেলা প্রশাসনের পক্ষে প্রশাসক মো. ঈসরাইল হোসেন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে পুলিশ সুপার এম. কে. এইচ. জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। এরপর একে একে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, প্রেসক্লাবসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পরে নিহত ও আহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন টাউন কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা শামসুল ইসলাম।
এদিকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজন করা হয় বিজয়ের কনসার্টসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ ছাড়াও বিভিন্ন মসজিদ ও মন্দিরে ৩৬ জুলাইয়ের শহীদদের স্মরণে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হয়।
মৌলভীবাজারে স্বেচ্ছাসেবক দলের মতবিনিময়
স্বেচ্ছাসেবক দল মৌলভীবাজার জেলার তৃণমূল নেতৃবৃন্দের সাথে কেন্দ্রীয় কমিটির এক মতবিনিময় সভা সোমবার রাতে মৌলভীবাজার পৌরসভার হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ও সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের সদস্য নিয়াজ মখদুম মাসুম বিল্লাহ। সভা পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় শিল্পবিষয়ক সম্পাদক নুরুল আলম বিপ্লব।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. ইয়াছিন আলী, সহ-সভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসির আহমেদ শাহীন এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম মিজান।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আহমেদ আহাদ। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইসহাক আহমদ চৌধুরী মামনুন, আব্দুল হান্নান, নজরুল ইসলাম, গাজী জাবেদ, নুরুল ইসলাম, আমিরুল ইসলাম সাহেদ, আব্দুল মুমিন, দেলোয়ার হোসেন, মনসুর আহমেদ, মামুনুর রশিদ, সাফিউর রহমান জুসেফ, লিটন মিয়া, রুমান আহমেদ প্রমুখ।
উপজেলা ও পৌর ইউনিট থেকে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা আহ্বায়ক জামান আহমেদ সুমন, পৌর সদস্যসচিব সাইফুল ইসলাম সুহেল, কুলাউড়া উপজেলা আহ্বায়ক রেজাউল ভূঁইয়া খোকন, সদস্য সচিব গিয়াস মোল্লা, কুলাউড়া পৌর আহ্বায়ক মুহিদুল আলম মুহিব, বড়লেখা উপজেলা আহ্বায়ক রায়হান মুজিব, সদস্য সচিব আব্দুল মালিক, কুলাউড়া পৌর সদস্য সচিব ইমন, জুড়ী উপজেলা আহ্বায়ক দিবাকর দাস, সদস্যসচিব সাইফুর রহমান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা আহ্বায়ক বেলাল আহমেদ, সদস্য সচিব তৈয়ব আহমেদ, শ্রীমঙ্গল পৌর সদস্যসচিব জয়নাল আহমেদ, কমলগঞ্জ উপজেলা আহ্বায়ক জমির হোসেন এবং সদস্যসচিব রিয়াজুর রহমান রিজন প্রমুখ।
সভায় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারকরণ এবং আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :