নুর মোহাম্মদ আকাশ সরকার। বয়স মাত্র ২২ বছর। মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে ২০২৪ সালের অক্টোবরে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। সেখানে জিয়াদ এলাকার একটি পেট্রোল পাম্পে কাজ শুরু করেন তিনি। কিন্তু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় সেই কর্মস্থলেই প্রাণ হারান আকাশ।
ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো তার মরদেহ দেশে আনতে পারেনি পরিবার।
আকাশ কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার অন্তর্গত আন্দিকোট ইউনিয়নের সোনারামপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও সাহিদা বেগম দম্পতির সন্তান।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, আকাশের মরদেহ এখনো সৌদি আরবের জিয়াদ এলাকার একটি হাসপাতালে সংরক্ষিত রয়েছে। কিন্তু আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে মরদেহটি দেশে আনার ব্যবস্থা করতে পারছেন না তারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শোকে মুহ্যমান মা সাহিদা বেগম ছেলের ছবি ও ব্যবহৃত কাপড় জড়িয়ে ধরে আহাজারি করছেন। বারবার বলছেন, ‘আমার আকাশ কষ্ট দূর করতে বিদেশ গেছিল। আমারে রাইখা চইলা গেছে। আপনারা আমার কলিজার লাশটা আইনা দেন। আমি তারে বুকে জড়ায়া মাটিতে শুইয়ে বুক ঠান্ডা করমু।’
আকাশের বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নয় মাস আগে আমার ছেলে বিদেশ যায়, ছয় মাস হলো সে মারা গেছে। এতদিনেও তার লাশ আনতে পারি নাই। সরকারের কাছে অনুরোধ, আমার ছেলের লাশটা দেশে আনার ব্যবস্থা করুন।’
আন্দিকোট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নোয়াব আলী সরকার বলেন, ‘ছয় মাস আগে সৌদি আরবের একটি পেট্রোল পাম্পে আগুনে পুড়ে আকাশ মারা যায়। কিন্তু আজও লাশ দেশে আনা সম্ভব হয়নি। পরিবারের পক্ষে মরদেহ আনার খরচ বহন করা সম্ভব নয়। তাই সরকারি খরচে মরদেহটি দেশে ফিরিয়ে আনার অনুরোধ করছি।’
এ বিষয়ে মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি আগে জানতাম না। আজ জানলাম। পরিবার লিখিতভাবে আবেদন করলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
কুমিল্লা প্রবাসী কল্যাণ সংস্থার সহকারী পরিচালক আলী হোসেন বলেন, ‘সরকারি খরচে মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। মরদেহের সঙ্গে দাফনের জন্য ৩৫ হাজার টাকা এবং পরবর্তীতে পরিবার ৩ লাখ টাকা অনুদান পাবে। পরিবার যেন দ্রুত আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে।’
এদিকে, ছয় মাস ধরে প্রিয় সন্তানের মরদেহ ফেরত না পাওয়ায় আকাশের দিশাহারা পরিবার এখন শুধু সরকারের সাহায্যের অপেক্ষায়।
আপনার মতামত লিখুন :