রবিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২৫, ১১:৫৯ এএম

বিলুপ্তির পথে মাদুর শিল্প, হাল ছাড়েননি শিল্পীরা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২৫, ১১:৫৯ এএম

মাদুর বুনেই সংসার চলে মঞ্জুরি রানীর।   ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

মাদুর বুনেই সংসার চলে মঞ্জুরি রানীর। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

একসময় সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলা মাদুর তৈরির জন্য ব্যাপক পরিচিত ছিল। বাতুয়াডাঙ্গা, মাদরা ও কলাগাছি গ্রামের প্রতিটি উঠোনে চলত মাদুর বোনার ব্যস্ততা। মাদুর তৈরির এই শিল্প ছিল এখানকার নারীদের প্রধান অবলম্বন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই চিত্র এখন শুধুই স্মৃতির অংশ। হারিয়ে যাচ্ছে মাদুর শিল্প- তবে পুরোপুরি নয়। এখনো কিছু মানুষ এই ঐতিহ্য ধরে রাখার সংগ্রাম করে চলেছেন।

সরেজমিনে তালা উপজেলার বাতুয়াডাঙ্গা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গৃহবধূ মঞ্জুরি রানী সরকার এখনো মাদুর বোনার কাজে লিপ্ত। স্বামী পিযুষ সরকারকে সঙ্গে নিয়ে মাদুর বুনেই চলে তাদের সংসার। নেই জমিজমা, নেই সরকারি সহায়তা- তবুও থেমে নেই তাদের শ্রম ও আশা।

মঞ্জুরি রানী বলেন, ‘এই মাদুরই আমাদের জীবন। যেদিন মাদুর বুনি না, সেদিন মনে হয় ক্ষুধাটা যেন আরও বেশি লাগে। একটা মাদুর বানাতে এক দিন সময় লাগে। ছোট মাদুর বিক্রি করি ৩০০ টাকায়, বড়টা যায় ৪০০ টাকায়। খরচ বাদ দিলে হাতে তেমন কিছুই থাকে না।’

বর্তমানে তালার একটি বেসরকারি সংস্থা মুক্তি ফাউন্ডেশন কিছুটা সহযোগিতা করছে। তারা মাদুর তৈরির কারিগরদের মূলধন দিয়ে থাকেন, যাতে তারা আবারও কাজ শুরু করতে পারেন। তবে বাজার চাহিদার অভাব এবং সস্তা রেক্সিন বা প্লাস্টিক ম্যাটের কারণে মাদুরের কদর কমে গেছে। ফলে এই শিল্পের ভবিষ্যৎ হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত।

পিযুষ সরকার বলেন, ‘দলুয়া, খলিষখালী, পাটকেলঘাটা, তালা হাটে মাদুর বিক্রি করি। অনেক সময় বিক্রি হয়, আবার অনেক সময় সব নিয়ে ফিরে আসতে হয়। একসময় ২০০-৩০০ পরিবার এই পেশায় ছিল, এখন কমে দাঁড়িয়েছে ২০-৩০টিতে।’

মাদুর তৈরির প্রধান উপকরণ ‘মেলে’ চাষও এখন প্রায় বন্ধ। আগে বর্ষায় মেলে লাগানো হতো আর শুকনো মৌসুমে তা কেটে ঘরে তুলে মাদুর বোনা হতো। খরচ কম, সময়ও কম- তবু জলবায়ু পরিবর্তন, অনিয়মিত বৃষ্টি ও নদীভাঙনের কারণে এই চাষ বিলুপ্তির পথে।

খেশরা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ কামরুল ইসলাম লাল্টু বলেন, ‘আবহাওয়ার পরিবর্তনের প্রভাবে মেলে চাষ বন্ধ হয়ে গেছে। একে টিকিয়ে রাখতে হলে বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন। না হলে এই ঐতিহ্য চিরতরে হারিয়ে যাবে।’

মুক্তি ফাউন্ডেশনের পরিচালক গোবিন্দ ঘোষ জানান, ‘মাদুরশিল্প টিকিয়ে রাখতে ৫০টি পরিবারকে ৩০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রো টেকনোলজি বিভাগের সহায়তায় মেলে চাষে ৫০টি প্রদর্শনী প্লট তৈরি করা হয়েছে, প্রতিটি প্লটের জন্য দেওয়া হয় ১৫ হাজার টাকা।’

এ বিষয়ে স্থানীয় কলেজ শিক্ষক কৃষ্ণ কুমার মণ্ডল বলেন, ‘মাদুরের কাঁচামাল আমদানি না করে স্থানীয়ভাবে মেলে চাষে উৎসাহ দিতে হবে। সহজশর্তে ঋণ, প্রশিক্ষণ ও বিপণনের সুযোগ এবং অনলাইন ও আধুনিক বাজার ব্যবস্থায় যুক্ত করতে পারলে এই শিল্পে আবারও প্রাণ ফিরতে পারে।’

তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন বলেন, ‘আগে এই অঞ্চলে ব্যাপক হারে মেলে চাষ হতো। এখন তা প্রায় বিলুপ্ত। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অনেক কৃষক আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তবে পরিকল্পিত সহায়তা পেলে আবারও মেলে চাষ ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’

Shera Lather
Link copied!