সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার শ্রীপুর এলাকার রাংপানিতে অভিযান চালিয়ে প্রায় ২০ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করেছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত টাস্কফোর্স। উদ্ধার করা পাথর প্রতিস্থাপন করা হয়েছে নদীতে। পাশাপাশি জব্দকৃত ২৮ হাজার ঘনফুট বালু উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) সকাল থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমা।
অভিযানে আরও অংশ নেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), থানা পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। রাংপানির নিরাপত্তার দায়িত্ব এখন বিজিবির ওপর অর্পণ করা হয়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের নো ম্যানস্ ল্যান্ড এলাকা থেকে দীর্ঘদিন ধরে চোরাকারবারিরা পাথর ও বালু সংগ্রহ করে রাংপানিতে মজুদ করছিল। এ কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ। সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবিকে আরও কঠোর নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে শ্রীপুর এলাকার রাংপানি নদী ও পাহাড়ে শুরু হয় অবৈধভাবে পাথর কাটার মহোৎসব। রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় ও স্থানীয়ভাবে চিহ্নিত একটি গোষ্ঠী নদী ও পাহাড়ের মূল্যবান পাথর লুট করতে থাকে। এতে পরিবেশের পাশাপাশি পর্যটন আকর্ষণও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মেঘালয়ের জৈন্তা পাহাড়ের রংহংকং জলপ্রপাত থেকে উৎপত্তি হওয়া রাংপানি নদী এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম নিদর্শন। নদীর তীর ঘেঁষে রয়েছে খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী গ্রাম মোকামপুঞ্জি, যা স্থানীয়ভাবে ‘পুঞ্জি’ নামে পরিচিত। বহু বছর ধরে এটি পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
একসময় ঢাকাই চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের স্থান হিসেবেও রাংপানি পরিচিত ছিল। আশি ও নব্বইয়ের দশকে শাবনাজ-নাঈম অভিনীত ‘চাঁদনী’সহ বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের দৃশ্য শ্রীপুর এলাকায় ধারণ করা হয়। এই ছবিগুলোর মাধ্যমে দেশব্যাপী রাংপানির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে বিজিবি কঠোর নজরদারিতে সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। সিলেট ব্যাটালিয়নের (৪৮ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাজমুল জানান, ‘বর্তমানে রাংপানি নদীর বাংলাদেশ অংশে কোনো পাথর অবশিষ্ট নেই। পূর্বে এখানে পাথর কোয়ারি থাকলেও তা সম্পূর্ণভাবে খালি হয়ে গেছে। এখন সেখানে শুধুমাত্র পানি রয়েছে।’
প্রশাসন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর একযোগে অভিযানের ফলে রাংপানি এলাকায় পাথর লুট বন্ধ হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষা ও পর্যটন সম্ভাবনা পুনরুদ্ধারে প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সচেতন মহল।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন