ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা পুলিশের বিরুদ্ধে গণপূর্ত বিভাগের মালিকানাধীন জায়গায় থাকা প্রায় ৭০ বছর পুরোনো একটি সেগুন গাছ নিলামে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত ১৭ আগস্ট গাছটি কেটে ফেলেন নিলামে পাওয়া ঠিকাদার। এ নিয়ে সরকারি দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হয়েছে। যদিও, জায়গাটি নিজেদের বলে দাবি পুলিশের । বর্তমানে জায়গাটি ডাম্পিং স্টেশন হিসেবে ব্যবহার করছে জেলা পুলিশ।
যদিও, গাছ বিক্রির নিলামে গণপূর্তের জায়গাটি নিজেদের বলে উল্লেখ করে পুলিশ। প্রকাশ্য নিলামে গাছটি ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭৫০ টাকায় বিক্রি করা হলেও প্রকৃতপক্ষে গাছটির মূল্য আরও বেশি বলে দাবি গণপূর্ত বিভাগের।
গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলা শহরের মেড়ুরা মৌজার খতিয়ান নং-৫, এসএ নং-১৭৭১ এবং বিএস নং-৪৭০৬ এর ২ দশমিক ১২৫০ একর জায়গাটি এল. এ. কেস-১০৯/৬১-৬২ মূলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া গণপূর্ত বিভাগের মালিকানাধীন। জায়গাটিতে গণপূর্ত বিভাগের গোডাউন রয়েছে।
বিএস খতিয়ান প্রকাশের আগ পর্যন্ত জায়গাটির খাজনা পরিশোধ ছাড়াও এখনো পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল ও পৌরকর পরিশোধ করে আসছে গণপূর্ত বিভাগ। আরএস ও সিএস খতিয়ানে জায়গাটি গণপূর্ত বিভাগের নামে রেকর্ড হলেও ভুলবশত বিএস খতিয়ানে জায়গাটি জেলা পুলিশের নামে রেকর্ডভুক্ত করা হয় বলে দাবি গণপূর্তের।
এ নিয়ে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল কোর্টে মামলা করেছে গণপূর্ত বিভাগ (মামলা নং- ৯১১/২০১৯)। এ অবস্থায় গত ২১ জুলাই ওই জায়গায় থাকা একটি সেগুন গাছ বিক্রির জন্য পত্রিকায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেয় জেলা পুলিশ।
তারও আগে গত ২২ মার্চ জায়গাটি বিভিন্ন মামলার আলামতের গাড়ি ও জব্দকৃত যানবাহন সংরক্ষণে ব্যবহার করার কথা জানিয়ে গণপূর্ত বিভাগকে চিঠি দেয় জেলা পুলিশের শহর ও যানবাহন পুলিশ পরিদর্শক (প্রশাসন) মীর আনোয়ার হোসেন। পুলিশ সুপারের মাধ্যমে পাওয়া ওই চিঠির জবাবে মামলা চলমান থাকার পাশাপাশি জায়গাটি সরকারি প্রকল্পের জন্য ব্যবহার হবে উল্লেখ করে যানবাহন সংরক্ষণে ব্যবহার করা যাবে না বলে জানায় গণপূর্ত বিভাগ।
এ অবস্থায় গাছ বিক্রির জন্য গত ২১ জুলাই পত্রিকায় প্রকাশ্য নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেয় জেলা পুলিশ। এ বিজ্ঞপ্তি দেখে পুলিশ সুপারকে চিঠি দিয়ে নিলাম বন্ধ করতে বলে গণপূর্ত বিভাগ। এরই মধ্যে গত ৬ আগস্ট প্রকাশ্য নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। নিলামে গাছটির জন্য সর্বোচ্চ ডাক উঠেছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। পরবর্তীতে ১১ আগস্ট গাছ কাটার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। চিঠিতে কাজ না হওয়ায় গাছ কাটার দিন সশরীরে গিয়ে বাধা দেন গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সা’দ মোহাম্মদ আন্দালিব। পরবর্তীতে তিনি ঘটনাস্থল থেকে চলে আসার পর ঠিকাদার গাছটি কেটে ফেলেন। আয়কর ও ভ্যাটসহ গাছটি বিক্রি হয় ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭৫০ টাকায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সা’দ মোহাম্মদ আন্দালিব বলেন, আরএস ও সিএস খতিয়ানে জায়গাটি গণপূর্ত বিভাগের নামে লিপিবদ্ধ রয়েছে। ভুলবশত বিএস খতিয়ানে পুলিশের নামে লিপিবদ্ধ হয়েছে। এ নিয়ে মামলা চলমান। আমরা আশা করছি, চূড়ান্ত রায় আমাদের পক্ষে আসবে। যেহেতু জায়গাটি খালি ছিল, সেজন্য জেলা প্রশাসকের অনুরোধে মৌখিকভাবে জায়গাটি ব্যবহারের জন্য পুলিশকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে জায়গাটিতে সমন্বিত জেলা কার্যালয় স্থাপনের জন্য একটি প্রকল্পের প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো আছে। প্রকল্পটি সহসাই পাস হবে বলে আশা করি। আর প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই ছেড়ে দিবে শর্তে জায়গাটি পুলিশকে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, এটা ভূমি ব্যবস্থাপনা জেলা প্রশাসক করেন। ওনার সাথে কথা বলতে পারেন। তাহলে ক্লিয়ার হবেন। আমি তো একটা পক্ষ তাই না! আমি তো বলব যে এটা আমার জায়গা।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, গণপূর্তের দাবি অনুয়ায়ী ভু্লবশত সর্বশেষ রেকর্ডে পুলিশের নাম এসেছে- এটা নিয়ে মামলা চলমান। রায় না আসা পর্যন্ত আপাতত পুলিশই জায়গাটির মালিক। তবে পূর্বের রেকর্ডগুলোতে প্রমাণিত হয় যে এটি গণপূর্তের ছিল। রেকর্ড সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ মালিকানা দাবি করতেই পারে। ফলে তাদের প্রয়োজনে গাছ কাটতেই পারে।

 
                             
                                    
 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
       -20251031160223.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন