ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বহালের দাবিতে এবার দ্বিতীয় দফায় সকাল-সন্ধ্যা টানা ৩ দিনের অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। রোববার থেকে বিরতিহীনভাবে সব সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেবেন তারা।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ম.ম. সিদ্দিক মিয়া এবং হামিরদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ খোকন মিয়া এ ঘোষণা দেন।
এ সময় উপজেলার ১২ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পৌরসভার প্রতিনিধিসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন ফরিদপুর-৪ আসনের আওতাধীন ভাঙ্গা উপজেলার দুটি ইউনিয়ন আলগী ও হামিরদীকে ফরিদপুর-২ আসনের (নগরকান্দা-সালথা) সঙ্গে যুক্ত করে। এ খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়।
৫ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এলাকাবাসী ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ও ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কে অবরোধ করে। পরে ভাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন তিন দিনের সময় চাওয়ায় অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়। তবে প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না পেয়ে আলগী ও হামিরদীর বাসিন্দারা ৯ সেপ্টেম্বর থেকে লাগাতার অবরোধ শুরু করেন। এতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কমপক্ষে ২৩ জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সাধারণ যাত্রী, ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবী মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করে।
দ্বিতীয় দিন থেকে তাদের আন্দোলনে যোগ দেয় ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপি, নিক্সন চৌধুরীর সমর্থকরা, কাজী জাফরুল্লাহ সমর্থকরা, ইসলামী আন্দোলন, জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও অরাজনৈতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের সাধারণ জনগণ।
সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে গাছের গুঁড়ি, বৈদ্যুতিক খুঁটি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ চালানো হয়। ৪র্থ দিন থেকে খুলনা-ঢাকা রেলপথও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এর মধ্যে হাবিবুর রহমান নামে এক ভাঙ্গা বাজার ব্যবসায়ী আন্দোলনে এসে প্রচন্ড গরমের তাপে হিটস্ট্রোকে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়।
এরপর জুমার দিন ও সাপ্তাহিক ছুটির দিন বিবেচনা করে আন্দোলনকারীরা দুই দিনের জন্য অবরোধ স্থগিত করেন। তবে তারা জানিয়ে দিয়েছেন, একদফা এক দাবি আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফের ফরিদপুর-৪ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা না হলে ১৪ সেপ্টেম্বর রোববার থেকে বিরতিহীনভাবে রাত-দিন মিলিয়ে সব সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।
এ বিষয়ে আলগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ম. ম. সিদ্দিক মিয়া দৈনিক রুপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে দাবি জানাচ্ছি। আমাদের একদফা এক দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সব সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ বন্ধ থাকবে। জীবন বাজি রেখেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবুও আমরা ভাঙ্গা ছেড়ে অন্য কোথাও যাব না।
এ বিষয়ে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, অবরোধ তুলে নিতে আমরা দুই ইউনিয়নের মানুষের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছি। তাদের সিদ্ধান্ত ও বক্তব্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিকেল থেকে পুলিশি টহল জোরদার এবং এলাকায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেখা যায় বলে জানান স্থানীয়রা।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন