চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সুজাতপুর বাজার থেকে বেগমপুর হয়ে উত্তর লুধুয়া পর্যন্ত সরকারি রাস্তার দুই পাশে ৫ শতাধিক গাছ নিধনের অভিযোগ উঠেছে। বনবিভাগের অনুমতি ছাড়াই স্থানীয় লোকজন গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে বনবিভাগ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) একে অপরকে দায়ী করছে।
সরকারি গাছ নিধনের ঘটনায় মতলব উত্তরে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। বনবিভাগ ও এলজিইডির দায়িত্বহীনতার কারণে সরকারি সম্পদ নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এ বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল।
রাস্তার পাশে থাকা গাছগুলো কেটে নেওয়ার পেছনে এলজিইডির একটি নোটিশ ও মাইকিংয়ের বিষয়কে কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি, উপজেলা প্রকৌশলীর অফিস থেকে প্রচারিত নোটিশে বলা হয়েছে, রাস্তা প্রশস্তকরণের লক্ষ্যে দুই পাশের গাছ ও স্থাপনা অপসারণ করতে হবে। একপাশে ১০ ফুট, অপরপাশে ১০ ফুট পর্যন্ত গাছ কাটা হবে। ব্যক্তি মালিকানাধীন গাছ মালিকরা নিজেরাই কেটে নিতে পারবেন, অন্যথায় সরকারি নিলামে বিক্রি হবে। ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
নোটিশে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল যে, সরকারি গাছ সরকারি নিলামের মাধ্যমে অপসারণ করা হবে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, নোটিশকে ভিত্তি করে তারা গাছ কেটে নিচ্ছেন।
সরকারি নোটিশ ও চিঠিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজের জন্য ১ সেপ্টেম্বর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে বন বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়। এতে লুধুয়া আমতলা বাজার-ইসলামাবাদ ইউপি অফিস (নন্দলালপুর) সড়কের উভয় পাশে থাকা গাছ জরুরি ভিত্তিতে অপসারণের অনুরোধ করা হয়। কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় আনুষ্ঠানিক নিলাম বা বন বিভাগের সরাসরি পদক্ষেপ ছাড়াই স্থানীয়রা গাছ কেটে নেওয়ায় পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারিভাবে যে গাছগুলো রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে বিক্রি হওয়ার কথা, সেগুলো এখন ব্যক্তি মালিকানায় চলে যাচ্ছে। অথচ দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তরগুলো এ নিয়ে পরস্পরকে দায়ী করছে।
উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল আনোয়ার দাবি করেছেন, ‘তাদের দপ্তর থেকে কোনো মাইকিং বা সাইনবোর্ড দেওয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘রাস্তার গাছ অপসারণের জন্য বনবিভাগকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান যদি মাইকিং করে থাকে, সেটি আমার জানা নেই।’
এ ছাড়া তিনি ১৫ সেপ্টেম্বর আক্কাছ কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করেন। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এলজিইডির নাম ব্যবহার করে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে সাধারণ মানুষকে সরকারি গাছ কাটতে উৎসাহিত করেছে। এতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং এলজিইডির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চুক্তি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়।
বনবিভাগ জানিয়েছে, সরকারি গাছ অপসারণের কোনো অনুমতি তাদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। বরং এলজিইডি দাবি করছে, তারা গাছ কাটার জন্য বনবিভাগকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি জানান, ‘বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সরকারি গাছ অবৈধভাবে কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে।’
উল্লেখ্য, সরকারি রাস্তার গাছ কাটার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধান আইন হলো বন আইন, ১৯২৭ এবং বৃক্ষ সংরক্ষণ বিল ২০১২, যা সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। এই আইনগুলো অনুযায়ী, সরকারের অনুমতি ছাড়া বনভূমি, রাস্তার পাশের বা পাবলিক প্লেসের গাছ কাটা একটি অপরাধ এবং এর জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে কারাদণ্ড ও জরিমানা। গাছ কাটার জন্য বন বিভাগের কাছে লিখিত আবেদন করতে হয় এবং বন বিভাগ বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষই গাছ কাটার অনুমতি দিতে পারে।

 
                             
                                    

 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
       -20251031160223.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন