চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার একটি গ্রামীণ সড়কের সংস্কারকাজ শুরুর এক দিন পরেই হাত দিয়ে সামান্য টান দিলেই উঠে যাচ্ছে পিচ ঢালাইয়ের আস্তরণ। এতে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং সংস্কারকাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে চকঝগড় হাইস্কুল মোড় থেকে কল্যাণপুর মোড় পর্যন্ত ২ হাজার ৫০০ মিটার সড়কের সংস্কারকাজ পায় মেসার্স অনিক এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর স্বত্বাধিকারী গোলাম নাদিম এবং পরিচালনায় আছেন গোলাম কিবরিয়া টনিক। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ২ হাজার ২৫০ মিটার রাস্তার কাজ শেষ করেছে।
তবে গত সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) স্থানীয়রা সংস্কার কাজে নানা অনিয়ম তুলে ধরে কাজ বন্ধ করে দেন। সদর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. আজহারুল ইসলাম এবং উপসহকারী প্রকৌশলী আবু সায়েম ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তাদের সামনেই হাত দিয়ে টান দিলে উঠে আসে রাস্তার পিচ। এতে স্থানীয়দের সঙ্গে প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের বাগবিতণ্ডা হয় এবং বাকি ২৫০ মিটার কাজ না করেই কাজ বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে এবং রাস্তার ধুলাবালি না সরিয়েই পিচ ঢালাইয়ের কারণে রাস্তার এই অবস্থা। তারা জানান, টানা কয়েকদিনের বৃষ্টির পর জমে থাকা পানি সরানোর আগেই কাজ শুরু করা হয়েছে, যা সড়কের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, কিছুদিনের মধ্যেই রাস্তাটি আবার চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, তারা শিডিউল অনুযায়ী শতভাগ নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছে।
তাদের অভিযোগ, কিছু ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে রাস্তার পিচ উঠিয়ে দিয়েছেন, এতে তারা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন বলেন, চকঝগড় মোড় থেকে চৈতন্যপুর পর্যন্ত রাস্তাটি অনেকদিন ভাঙা ছিল। অনেক আবেদন করার পর কাজ শুরু হয়। কিন্তু এখন দেখছি, পিচ হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে আসছে। আমরা এমন কাজ চাই না। ভালো কোনো ঠিকাদার দিয়ে যেন কাজটা করা হয়, সেটাই দাবি।
আরেক স্থানীয় আতিকুর রহমান বলেন, রাস্তায় ৪ নম্বর ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। ধুলা পরিষ্কার না করেই পিচ ঢালাই করেছে। এমনকি বৃষ্টির পানির মধ্যেই কাজ করেছে তারা। আমরা চাই রাস্তাটি ভালোভাবে মেরামত করা হোক।
পথচারী মাইনুল ইসলাম বলেন, এই রাস্তায় দুই নম্বরি কাজ হয়েছে। ওপর থেকে শুধু পিচ ঢেলে দিয়েছে। ধুলা ও আবর্জনার উপরেই কাজ করা হয়েছে। তাই আমরা এলাকাবাসী বাধা দিয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়েছে। আমরা চাই রাস্তাটি ভালোভাবে করা হোক।
স্থানীয় বাসিন্দা সাদিকুল ইসলাম বলেন, রাস্তাটি ভালোভাবে পরিষ্কার না করে শুধু ধুলার ওপর পিচ ঢালাই করেছে। তাই হাত দিলেই উঠে যাচ্ছে পিচ।
ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া টনিক বলেন, গ্রামবাসী শুরু থেকেই নানা আবদার করছিলেন। আমি শুরু থেকেই বলেছি, শিডিউল অনুযায়ী কাজ হবে। চার দিন সুন্দরভাবে কাজ করেছি এবং ২ হাজার ২৫০ মিটার কাপেটিং শেষ করেছি।
বাকি ২৫০ মিটার কাজ করতে গেলে তারা বলেন, তিন ইঞ্চি পিচ দিতে হবে। আমি জানাই, শিডিউলেিএক ইঞ্চির কথা বলা আছে, তাও কিছুটা বাড়িয়ে দেব। কিন্তু তারা ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং ঝামেলা সৃষ্টি করে। এখন যেসব জায়গার পিচ উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেখানে নতুন করে কাজ করতে হবে, এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
এ বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি সদর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. আজহারুল ইসলাম।
তবে তিনি জানান, নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারের সঙ্গে আমরা কাজের জায়গা পরিদর্শন করব। স্যাম্পল সংগ্রহ করে ল্যাব টেস্টে পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে জানতে জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
তবে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নুরুল ইসলাম বলেন, আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জানলাম। আগামীকাল বিষয়টি খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন