চরম দারিদ্র্য ও অসহায়ত্বের শিকার হয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের মারুফা আক্তার (৩৫) ও তার স্বামী লালন মিয়া। অভাবের তাড়নায় এই দম্পতি তাদের সাত সন্তানের মধ্যে দুই পুত্র সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটেছে। মারুফা ভিক্ষাকরে সংসার চালান, আর লালন দিনমজুর। বিয়ের আট বছরের মধ্যে তাদের ঘরে একে একে সাত সন্তানের জন্ম হয়েছে।
জানা যায়, লালন ও মারুফার নিজস্ব কোনো বাড়ি বা জমি নেই। লালনের বাবা মৃত্যুর আগে অভাবের কারণে নিজেদের বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছিলেন। বর্তমানে অন্যের জমিতে একটি ঝুপড়ি ঘর তুলে আশ্রয় নিয়েছেন তারা।
সবশেষ গত সেপ্টেম্বর মাসে সন্তান জন্মের মাত্র ১৫ দিন পর দম্পতিটি তাদের এক নবজাতককে অন্যের হাতে তুলে দেন। বিনিময়ে তারা পান ৫০ হাজার টাকা। এর আগেও এই দম্পতি আরও একটি সন্তানকে জন্মের পরপরই ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছিলেন।
মারুফা আক্তার জানান, আমাদের কেউ নাই। অভাবে পড়লেই মানুষ গালি দেয়, লাথি দেয়। শিশুদের মুখে দুধ জোটে না। বিছনাপাতি নাই, মাডিত ঘুমাই। আর বুকের ভেতরে আগুন জ্বলে, তবুও কিছু করার নাই।
তিনি আরও বলেন, এহন যহন নিজের আবুইদ্যা বেইচ্যা দিছি মাইনসে আইসা মেলা কথা কয়। আমরার পেটে যখন খাওন থাহেনা তখন কেউ আইসা জিগাই না।
লালন-মারুফা দম্পতির ফুফু জাহানার বেগম বলেন, বেইচ্যা বেছতনা কিতা করব? ভিক্ষা কইরা খায়। কেউ এরার খবর নেয় না। আবুইদ্যাডা জন্মের পর থেইক্যা অসুস্থ আছিন। হের লাইগ্যা বিক্রি কইরা দিছে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ঝুপড়ি ঘরের ভেতরে অসুস্থ মারুফাকে ঘিরে রয়েছে তাদের বাকি পাঁচটি ছোট শিশু। মাটিতে বসে সেদ্ধ লাউ দিয়ে ভাত খাচ্ছে তারা।
এ বিষয়ে নাসিরনগর থানার নবনিযুক্ত ওসি মাকছুদ আহাম্মদ বলেন, আমি দুই দিন হয় এই উপজেলায় বদলি হয়ে আসছি। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীনা নাসরিন বলেন, এক্ষেত্রে সরকারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে শুরু করে বিভিন্ন এনজিও সঠিকভাবে কাজ করলে অযাচিত জন্মহার কমানো যেত।
তিনি আরও বলেন, এই পরিবারকে আর্থিক ও আশ্রয়ণের ঘর দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।