আজ কালের দ্রুতগামী জীবনযাত্রায় সকালের পানীয় হিসেবে কফি ও চা প্রচলিত হলেও, সম্প্রতি গ্রিন টি তার স্বতন্ত্রতার কারণে মানুষের নজর কেড়েছে। সুগন্ধ, স্বাদ এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী উপাদানের কারণে এটি কেবল মানসিক প্রশান্তি দেয় না, বরং সকালের শক্তি বৃদ্ধিতেও কার্যকর। একজন লেখক সম্প্রতি ৩০ দিন ধরে গ্রিন টি নিয়মিত পান করে তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন, যা দেখায় ছোট পরিবর্তনও জীবনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
তিনি একটি কফি-চা হাইব্রিড হিসাবে বিবেচনা করেন। তিনি কফি ভালোবাসেন- ল্যাটে, ক্যাপুচিনো বা হ্যাজেলনাট আইসড কফি- এবং কালো চা বা ম্যাচা ল্যাটেও আগ্রহী। তবে গ্রিন টি কখনো তার প্রধান ক্যাফেইন উৎস ছিল না। ৩০ দিনের এই পরীক্ষার সময়, তিনি সকালে এক কাপ গ্রিন টি এবং বিকেলে আরেকটি পান করতেন। এই অভ্যাসের ফলে তিনি লক্ষ্য করেছেন যে, কফির তুলনায় তার সকালগুলো অনেক কম চাপপূর্ণ এবং শান্তিপূর্ণ হয়েছে।
কফি সকালের জন্য শক্তি যোগায়, কিন্তু অনেক সময় এটি উদ্বেগ এবং মানসিক চাপও বাড়ায়। অন্যদিকে, গ্রিন টি এর প্রাকৃতিক ক্যাফেইন, সুগন্ধ এবং স্বাদের সংমিশ্রণ মানসিক চাপ হ্রাস করে এবং দিন শুরুতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ এনে দেয়।
মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন অনুযায়ী, আট আউন্স গ্রিন টিতে প্রায় ৩০–৫০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে, যেখানে কফিতে একই পরিমাণে থাকে ৮০–১০০ মিলিগ্রাম। তাই কফি তুলনায় গ্রিন টি অনেক বেশি শান্তিপূর্ণ সকালের অভিজ্ঞতা দেয়।
গ্রিন টিতে থাকা এল-থিয়ানিন, একটি প্রাকৃতিক অ্যামিনো অ্যাসিড, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে। এটি মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং মানসিক সতর্কতা বাড়ায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, কমমাত্রার ক্যাফেইনের সঙ্গে এল-থিয়ানিন মিললে মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি এবং মানসিক কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। গ্রিন টি দৈনন্দিন কাজকর্মে আরও মনোযোগী হতে সাহায্য করে। কফি খাওয়ার পর যে ‘মস্তিষ্কের কুয়াশা’ অনুভূত হত, তা গ্রিন টি খেলে কমে।’
শরীরের জন্যও গ্রিন টি অত্যন্ত উপকারী। কফি অনেক সময় হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে, তবে গ্রিন টি পলিফেনল এবং ক্যাটেচিন সমৃদ্ধ থাকার কারণে অন্ত্রের জন্য শান্তিদায়ক। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ফ্রি র্যাডিকাল নিরপেক্ষ করে, প্রদাহ কমায় এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগ ও বার্ধক্য প্রতিরোধে সহায়ক।
লেখক বিশেষ করে উল্লেখ করেছেন, খালি পেটে কোনো ধরনের ক্যাফেইন পান না করার অভ্যাসও তার পেটের স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক প্রমাণিত হয়েছে।
গ্রিন টি ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হিসেবে বিবেচিত। এতে থাকা ক্যাফেইন এবং ক্যাটেচিন শরীরের বিপাক বৃদ্ধি করে এবং ফ্যাট জারণে সাহায্য করে। বিশেষত ইজিসিজি ফ্যাট জারণ বাড়ায়, যার ফলে শরীর ফ্যাটকে শক্তি হিসেবে আরও দক্ষভাবে ব্যবহার করতে পারে। লেখক দিনে তিন কাপ গ্রিন টি পান করে লক্ষ্য করেছেন, এটি সারাদিন শক্তি দেয় এবং হজমেও সহায়ক হয়েছে।
৩০ দিনের এই অভ্যাসের ফলাফল শুধুই শক্তি বা হজমে সীমাবদ্ধ নয়। এটি ত্বকের স্বচ্ছতা এবং স্বাস্থ্যেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। গ্রিন টিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ইজিসিজি প্রদাহ কমায়, যা ত্বককে উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যবান রাখে।
গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রিন টি ব্রণজনিত প্রদাহ কমাতে এবং ইউভি ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সহায়ক।
গ্রিন টিতে থাকা ক্যাফেইন এবং এল-থিয়ানিনের সমন্বয় মস্তিষ্কের কার্যকারিতাও বাড়ায়। এটি সতর্কতা এবং মনোযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, তবে কফির মতো উদ্বেগ ও অস্থিরতা সৃষ্টি করে না।
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এটি আলঝাইমারসহ নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা প্রদান করতে পারে।
লেখকের অভিজ্ঞতার আলোকে ৩০ দিনের এই অভ্যাসের বৈজ্ঞানিক উপকারিতা নিম্নরূপ: বিপাক বৃদ্ধি, ওজন নিয়ন্ত্রণ, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নতি, মানসিক চাপ হ্রাস, শক্তি বৃদ্ধি, ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নতি, হজমে সহায়তা, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সুবিধা, দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য উন্নতি এবং প্রাকৃতিক উদ্দীপনা।
লেখক বলেন, ছোট একটি পরিবর্তন- প্রতিদিন এক বা দুই কাপ গ্রিন টি- দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য ও মানসিক শান্তি বৃদ্ধি করতে পারে। গ্রিন টি কেবল একটি পানীয় নয়, বরং এটি সচেতন ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারার অংশ, যা ধীরে ধীরে মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করে।

