ঢাকা শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫

কী খেলে শীতে গরম থাকবে শরীর

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ১২:৫৫ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

শীতকালে ঠান্ডা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে। অফিস, স্কুল বা বাড়ি যেখানেই হোক, শীতের তীব্রতা শরীরকে ক্লান্ত এবং অস্বস্তিকর করে তোলে। তাই শীতের সময় শরীর গরম রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র গরম কাপড় পরা বা হিটার ব্যবহার করলেই হয় না; খাবারের মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপ বৃদ্ধি করা সম্ভব। আজকের ফিচারে আমরা বিস্তারিত জানব শীতে শরীর গরম রাখার খাবার, উপায় ও গুরুত্বপূর্ণ টিপস।

বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই শীতকালে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শরীর ঠান্ডা হয়ে আসে, ফলে নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। শীতকালীন অসুস্থতা, সর্দি-কাশি, ঘন ঘন ঠান্ডা অনুভব করার মতো সমস্যার মূল কারণই হলো শরীরের উষ্ণতা কমে যাওয়া। তাই শীতকালে শরীরকে গরম ও সুস্থ রাখতে খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। তাহলে প্রশ্ন আসে শীতে শরীর গরম রাখতে কী খাবেন? কিংবা কোন খাবার খেলে শীত কম লাগে? এ ফিচারে আলোচনা করা হলো শীতে শরীর গরম রাখার উপকারী খাবার ও খাদ্যাভ্যাস।

শীতে শরীর গরম রাখতে কী খাবেন?

মানুষের শরীরের জন্য কিছু খাবার প্রাকৃতিকভাবে ‘থার্মোজেনিক’ হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ সেগুলো খেলে শরীর ভেতর থেকে তাপ উৎপন্ন করে। বিশেষ করে মসলা, বাদাম, বীজ, শর্করা, প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার শরীরের তাপমাত্রা ধরে রাখতে সাহায্য করে। শীতকালে এগুলো খেলে শরীর ঠান্ডা হওয়া কমে যায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।

১. আদা ও রসুন: শীতে আদা ও রসুন খাওয়া খুবই উপকারী। আদা শরীরের মেটাবলিজম বাড়িয়ে শরীরকে গরম রাখতে সাহায্য করে। আবার রসুন রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, ফলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে। চা কিংবা খাবারে আদা ও রসুনের ব্যবহার বাড়াতে পারেন।

২. খেজুর, মধু ও গুড়: খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও প্রাকৃতিক চিনি, যা শরীরে তাপ উৎপন্ন করে। মধু ও গুড়ও একই কাজ করে। গুড় দিয়ে তৈরি পায়েস, পিঠা বা খেজুর-বাদাম দিয়ে তৈরি লাড্ডু খেলে শরীর গরম থাকে এবং তা শরীরে শক্তিও যোগায়।

৩. শর্করা ও শস্যজাত খাবার: ব্রাউন রাইস, ওটস, গম, চাপাতি ইত্যাদি শর্করা-সমৃদ্ধ খাবার ধীরে হজম হয়, ফলে দীর্ঘক্ষণ শরীর গরম থাকে। বিশেষ করে চাপাতি শরীর গরম করে কিনা এই প্রশ্নে উত্তর হলো, হ্যাঁ! চাপাতিতে থাকা জটিল শর্করা ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করে এবং শীতের সময় শরীরকে গরম রাখতে সহায়তা করে।

৪. বাদাম ও বীজ: চিনাবাদাম, কাঠবাদাম, কাজু, আখরোট, তিল ও ফ্ল্যাক্সসিডে রয়েছে স্বাস্থ্যসম্মত ফ্যাট ও প্রোটিন, যা ঠান্ডায় শরীরের তাপ ধরে রাখে। এগুলো ভাজা বা স্ন্যাকস হিসেবে খেতে পারেন, আবার সালাদ বা খিচুড়িতে ব্যবহার করলেও ভালো।

৫. মসলা জাতীয় খাবার: হলুদ, দারুচিনি, জয়ফল, মরিচ, গোলমরিচ ইত্যাদি মসলায় শরীর গরম রাখার ক্ষমতা রয়েছে। শীতকালে খাবারে এগুলোর পরিমাণ একটু বেশি রাখলে শরীর ঠান্ডা লাগবে না। বিশেষ করে মরিচ শরীরে তাপ তৈরি করে।

কোন খাবার খেলে শরীর গরম থাকে?

চাল, রুটি, ওটস বা জাউ শর্করা উষ্ণতার বড় উৎস। এগুলো হজম হতে সময় নেয়, ফলে শরীর দীর্ঘক্ষণ উষ্ণ থাকে। সুপে আদা, রসুন, সবজি, মুরগি বা গরুর মাংস ব্যবহার করলে তা শরীরের জন্য খুব উপকারী হয়। এগুলো হাইড্রেশন বজায় রাখার পাশাপাশি শরীর গরম রাখতেও সাহায্য করে।

শীতকালে শরীর গরম করার উপায়

খাদ্যাভ্যাস ছাড়াও কিছু অভ্যাস শরীর গরম রাখতে সাহায্য করে: গরম পানি বা লেবু-চা পান করুন, যুক্তিসম্মত পোশাক পরা, শীতবরণ করুন, নিয়মিত ব্যায়াম।

কী খেলে শীত কম লাগে?

শীতকালে এমন কিছু খাবার খেলে তাপের মাত্রা বাড়ে এবং শীত অনুভব কম হয়। যেমন: খেজুর, গুড়, মধু, আনারস, কমলা, ডালিম, ডিম, মাছ, মুরগি, মসলা, চা (বিশেষত আদা চা বা মসলা চা) এগুলো শুধু শরীর গরম রাখে না, প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।

চাপাতি কি শরীর গরম করে?

চাপাতি বা রুটি তৈরি হয় গমের আটা থেকে, যা জটিল শর্করা সমৃদ্ধ। এই শর্করা ধীরে হজম হয়, ফলে শরীর দীর্ঘক্ষণ শক্তি পায় এবং তাপ বজায় থাকে। তাই সাদা চালের ভাতের তুলনায় শীতকালে রুটি বা চাপাতি খাওয়া শরীরের জন্য বেশি উপকারী।

শীতের সময় শুধু বাহ্যিক পোশাক নয়, অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্যও ঠিক রাখা জরুরি। তাই শীতকালে শরীরকে গরম রাখতে আদা-রসুন, গুড়, বাদাম, চাপাতি, স্যুপ, মসলা ও প্রোটিনজাত খাবার বেশি খেতে হবে। এছাড়া পর্যাপ্ত পানি পান, ব্যায়াম ও সঠিক পোশাক পরিধানও শীত মোকাবিলায় অত্যন্ত কার্যকর।