কনকনে শীতের সকালে গরম কফির সঙ্গে এখন সোনালি রং সারা বিশ্বে নতুন এক স্বাস্থ্য ট্রেন্ড হয়ে উঠেছে। বিশেজ্ঞরা বলছেন, হলুদ কফি ও গোল্ডেন মিল্ক লাটে শুধু রঙে নয়, পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধি।
হলুদ, তার কারকিউমিন নামের সক্রিয় যৌগের কারণে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্ষমতার জন্য ব্যাপক পরিচিত। তাই কফিতে সামান্য হলুদ যোগ করেই মানুষ এখন চাইছেন উষ্ণতার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বাড়তি জোর।
স্বাস্থ্য বিশেজ্ঞরা বলছেন, হলুদের ভেতরের কারকিউমিন প্রদাহ কমাতে বিশেষভাবে কার্যকর, যা হৃদরোগ, ক্যানসার, টাইপ–২ ডায়াবেটিস, জ্ঞানীয় অবনতি বা হজমের সমস্যার মতো দীর্ঘমেয়াদি অসুখের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
গবেষণা বলছে, নিয়মিত কারকিউমিন গ্রহণ ব্যথা কমায়, স্নায়ুর প্রদাহ প্রশমিত করে এবং শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকর ফ্রি–র্যাডিক্যাল নিরপেক্ষ করে কোষকে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এভাবে শরীরের ইমিউন সিস্টেম আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
তবে বিশেজ্ঞরা সতর্ক করছেন, যেসব গবেষণায় বড় ধরনের উপকার দেখা গেছে, সেগুলোতে ব্যবহৃত কারকিউমিনের পরিমাণ সাধারণ একটি কাপ কফিতে থাকা হলুদের তুলনায় অনেক বেশি। তাই প্রতিদিনের হলুদ কফিতে স্বাস্থ্যগুণ থাকলেও তা গবেষণায় ব্যবহৃত উচ্চমাত্রার মতো শক্তিশালী নয়। তবুও খাদ্যাভ্যাসে নিয়মিতভাবে সামান্য হলেও হলুদ যোগ করা শরীরের সার্বিক সুস্থতায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
কফিতে হলুদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ: প্রতি কাপে আধা চা চামচ বা প্রায় ১.৫ গ্রাম হলুদ যথেষ্ট। স্বাদের প্রতি ঝোঁক থাকলে পরিমাণ বাড়ানো যায়, তবে অতিরিক্ত না হওয়াই ভালো। সাধারণ রান্নায় ব্যবহৃত মাত্রায় হলুদ নিরাপদ। তবে আলাদা করে কারকিউমিন সাপ্লিমেন্ট নিলে লেবেলে উল্লেখ করা ডোজ অনুসরণ করা উচিত।
হলুদের কারকিউমিন সহজে শরীরে শোষিত হয় না, এই একটি সীমাবদ্ধতা দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায়। তবে এর সহজ সমাধানও রয়েছে। কফিতে সামান্য কালো মরিচ যোগ করলে পিপারিন নামের উপাদান কারকিউমিন শোষণ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। আর যেহেতু কারকিউমিন ফ্যাট-সোলিউবল, তাই দুধ, কোকোনাট অয়েল, বাটার বা যেকোনো ধরনের স্বাস্থ্যকর ফ্যাট শরীরে এর কার্যকারিতা আরও বাড়ায়।
ঘরে বসেই সহজে বানানো যায় দারুন এক গোল্ডেন মিল্ক লাটে। এক কাপ দুধ বা যেকোনো প্ল্যান্ট-বেসড মিল্ক গরম করে তাতে মেশানো হয় আধা চা চামচ হলুদ, এক চিমটি কালো মরিচ, সামান্য দারুচিনি ও ভ্যানিলা। চাইলে মধু যোগ করা যায় স্বাদে মিষ্টতা আনার জন্য। যারা কফি পছন্দ করেন, তারা চাইলে এতে এক শট এসপ্রেসো মিশিয়ে নিতে পারেন। আর স্কিম মিল্ক ব্যবহার করলে অল্প কোকোনাট অয়েল বা এক চামচ বাটার যোগ করলেই কারকিউমিন শোষণ আরও বেড়ে যায়।

