শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি যে, পৃথিবীতে এমন একটি দেশ রয়েছে যেখানে মানুষ অফিস শেষ করে বাস, ট্রেন কিংবা অন্যকোনো যানবাহনে নয় বরং নদীর স্রোতে বাড়ি ফেরার পথ বেছে নেয়। আর সেই দেশটি হলো সুইজারল্যান্ড।
গ্রীষ্মকাল এলেই আধুনিকতা, নিখুঁত পরিবেশ আর ব্যস্ত কর্মজীবনের দেশ সুইজারল্যান্ড রূপ নেয় এক অনন্য দৃশ্যে। দেশটির কর্মজীবী মানুষরা তখন বাড়িতে ফেরে গাড়ির বদলে সরাসরি নদীতে ভেসে। তাদের বিশেষ ধরনের এই অভ্যাস এখন বেশ জনপ্রিয় এক জীবনধারায় পরিণত হয়েছে।
বার্ন আর ব্যাসেল- দুই শহরের ব্যতিক্রমী দৃশ্য
সুইজারল্যান্ডের বার্ন ও ব্যাসেল শহরের অফিসপাড়া ঘেঁষেই বয়ে গেছে নির্মল জলধারা আরএ নদী ও রাইন নদী। কাজ শেষে স্থানীয়রা সরাসরি নদীর ধারে চলে আসেন। তাদের সঙ্গে থাকে বিশেষ জলরোধী ব্যাগ—যেখানে থাকে মোবাইল, মানিব্যাগ ও পোশাক। এই ব্যাগগুলো জিনিসপত্রকে নিরাপদ রাখার পাশাপাশি ছোট ভাসমান টিউব হিসেবেও কাজ করে। ব্যাগটি বুকে বা পিঠে ঝুলিয়ে দিয়ে তারা স্রোতের সঙ্গে ভেসে চলেন নিজের গন্তব্যের দিকে।
স্রোতে ভেসে ২০ থেকে ৩০ মিনিটেই বাড়ির কাছাকাছি
অনেকেই ২০ থেকে ৩০ মিনিট নদীতে ভেসে নিজের বাসার কাছের অংশে পৌঁছে যান। এতে একদিকে যাতায়াত খরচ শূন্যের কোঠায় নেমে আসে, অন্যদিকে পরিবেশও থাকে সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত। কারণ কোনো গাড়ি, জ্বালানি বা মোটর ব্যবহৃত হয় না। ফলে কার্বন নিঃসরণ প্রায় সম্পূর্ণ শূন্যে নেমে আসে।
টেকসই জীবনযাপনের দৃষ্টান্ত
সুইজারল্যান্ড বহু বছর ধরে টেকসই জীবনযাপনের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর একটি। পরিবেশবান্ধব এই যাতায়াত পদ্ধতিও সেই সচেতনতারই একটি প্রতিফলন- যা এখন দেশটির নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে।
নিরাপত্তা ও সুবিধায় সরকারের বিশেষ ব্যবস্থা
মানুষের সুবিধার কথা ভেবে নদীর পাড়ে ছোট ছোট পরিবর্তনকক্ষ, শাওয়ার রুম ও বিশ্রামস্থল তৈরি করেছে সরকার। সেখানে এসে মানুষ সহজে পোশাক বদলে বাড়ির পথে হাঁটতে পারে। পাশাপাশি নদীর পানির মান নিয়মিত পরীক্ষা করা হয়, যাতে সাঁতার কাটতে বা ভেসে চলতে কোনো ঝুঁকি না থাকে।
শারীরিক–মানসিক উভয় দিকেই উপকারী
বিশেষজ্ঞদের মতে, নদীতে ভেসে যাতায়াত শুধু শারীরিক ফিটনেস বাড়ায় না, কর্মজীবনের চাপ কমিয়ে মানসিক প্রশান্তিও এনে দেয়। ব্যতিক্রমী এই পরিবেশবান্ধব যাতায়াত এখন বিশ্বব্যাপী নজর কাড়ছে।

