নারায়ণগঞ্জ শহরে ধর্ষণের অভিযোগে আবু হানিফ (৪২) নামের এক সিকিউরিটি গার্ডকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (২০ অক্টোবর) রাতে শহরের খানপুরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরশনের অধীনস্থ সংরক্ষিত এলাকা ওয়াসার জোড়া পানির ট্যাংকির বাউন্ডারির ভেতরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আবু হানিফ খানপুরের ইতু ভিলায় সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করতেন। তিনি বরিশালের শরণখোলা এলাকার আবুল কালামের ছেলে।
জানা গেছে, সিকিউরিটি গার্ডকে বাড়ি থেকে মারতে মারতে নাসিকের ওয়াসার জোড়া পানির ট্যাংকির ভেতরে নিয়ে এসে বেধড়ক পেটানো হয়। পরে হানিফকে শহরের খানপুরস্থ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আবু হানিফকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে রেখে চলে যান এলাকার কয়েকজন লোক। পরে রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার শরীর ও মাথায় গুরুতর জখম ছিল।
নিহত হানিফের বোন জয়নাব ওরফে রাবেয়া জানান, সোমবার দুপুরে হানিফ নিজ ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। এ সময় খানপুরের অভিসহ আরও কয়েকজন এসে হানিফকে লাথি মেরে বিছানা থেকে ফেলে দেয়। পরে হানিফের মাথা দেয়ালের সঙ্গে ঠুয়া দেয়। এরপর হানিফকে মারধর করতে করতে খানপুরে নাসিকের ওয়াসার জোড়া পানির ট্যাংকির ভেতরে নিয়ে যায়। অভিসহ তার লোকজন জানায়, হানিফ নাকি ১২-১৩ বছরের একটি মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। আমরা এটার সত্য মিথ্যা কিছু জানি না। কিন্তু যে মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলা হচ্ছে সেই মেয়ে কিন্তু সুস্থ স্বাভাবিক। অথচ তারা আমার ভাইকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।
রাবেয়া আরও জানান, হানিফকে তুলে আনার পরে অভি লোকজনের মাধ্যমে জোড়া পানির ট্যাংকির নিচে আমাদের ডেকে পাঠায়। তখন আমি ও আমার স্বামী ইবরাহিম সেখানে যাই। সেখানে অভি আমার স্বামী ইবরাহিমকেও চড়-থাপ্পড় মারে। আমার স্বামীর লুঙ্গি টেনে খুলে ফেলার চেষ্টা করে। আমাদের নানা ধরনের হুমকি দিয়ে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। রাতে আমরা খবর পাই আমার ভাই হানিফের লাশ খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে। খবর পেয়ে আমরা হাসপাতালে ছুটে এসে হানিফের লাশ দেখতে পাই।
তিনি আরও বলেন, হানিফের ৩ সন্তান রয়েছে। যার মধ্যে বড় সন্তানের বয়স ৬ বছর। মেজ সন্তানের বয়স আড়াই বছর ও ছোট সন্তানের বয়স ৬ মাস। আমার ভাই যদি অপরাধী হয়েও থাকে দেশে তো আইন-আদালত বিচার আছে। তাকে কেন এভাবে পিটিয়ে মারা হলো। এখন তার সন্তানরা তো না খেয়ে থাকবে।
নিহতের ভগ্নিপতি ইবরাহিম বলেন, দুপুরে আমার শালিকা ফোন করে জানায় আমার সম্বন্ধী হানিফকে মারধর করা হচ্ছে। আমি তখন কর্মস্থলে ছিলাম। পরে আমি বাসায় ছুটে এসে আমার সম্বন্ধীকে পাইনি। এরপর আমি আবার কর্মস্থলে ডিউটিতে চলে যাই। পরে বাসায় আসলে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে খানপুরে জোড়া পানির ট্যাংকির বাউন্ডারি দেয়ালের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে খানপুরের আজিম ভিলার অভি ও তার লোকজন আমাকে থাপ্পড় মারে, আমার লুঙ্গি টান দিয়ে খুলে ফেলার চেষ্টা করে। আমাদের গাল-মন্দ করে নানা ধরনের হুমকি দেয়। তখন আমাদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা চায়। আমরা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করি। এরপর তারা হানিফকে একটি অটোতে তোলে। তখন আমরা সেখান থেকে চলে আসি।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ নাছির আহমদ বলেন, দুপুরে ওই যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে এলাকার কয়েকজন যুবক মারধর করে। বাসা থেকে তুলে নিয়ে খানপুর জোড়া ট্যাংকি এলাকায় তাকে মারধর করা হয়। পুলিশ মরদেহ হাসপাতালে পায়। ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছে কি না তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ঘটনার বিস্তারিত জানতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন