জুলাই সনদের আলোকে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নে বিলম্ব এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ‘নোট অব ডিসেন্ট’-কে গণঅভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী উল্লেখ করে অবিলম্বে গণভোটের আয়োজনের দাবি জানিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু)।
রোববার (২ নভেম্বর) রাতে জাকসুর সহসভাপতি আব্দুর রশিদ জিতু এবং সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান রাষ্ট্র সংস্কারের যে ঐতিহাসিক সুযোগ তৈরি করেছে, তা বাস্তবায়নে বিএনপির টালবাহানা গণঅভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে প্রতারণার শামিল। শাসকগোষ্ঠীকে ফ্যাসিবাদী করে তোলা রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙে নতুন কাঠামো গঠনের জন্য ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করতে বিএনপি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
জাকসুর নেতৃবৃন্দ দাবি করেন, ঐকমত্য কমিশনের ৮৪টি ধারার মধ্যে মাত্র পাঁচটিতে কোনো দলের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ নেই। বাকি ধারাগুলিতে বিএনপি সবচেয়ে বেশি আপত্তি জানিয়েছে, ফলে কমিশনের দেড় বছরের আলোচনা কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
-20251102171749.webp)
বিবৃতিতে বিএনপির বিরোধিতার মূল বিষয়গুলো তুলে ধরে বলা হয়:
-
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে স্বাধীন বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশন ও স্বতন্ত্র তদন্ত সার্ভিস গঠনের প্রস্তাবে বিএনপি আপত্তি জানিয়েছে।
-
সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সদস্য নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ব্যবস্থা ও স্বাধীন বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদানের প্রস্তাবেও বিরোধিতা করেছে।
-
একই ব্যক্তি যাতে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী না থাকতে পারেন—এই যুগোপযোগী সংস্কার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
-
উচ্চকক্ষে অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (PR) পদ্ধতি ও প্রার্থী তালিকা প্রকাশের প্রস্তাবেও আপত্তি জানিয়েছে।
-
এবং সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদে সংশোধনের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বাড়ানো ও জাতীয় চুক্তি সংসদে অনুমোদনের প্রস্তাবকেও প্রত্যাখ্যান করেছে দলটি।
এ ছাড়া পিএসসি, দুদক, ন্যায়পাল ও মহা-হিসাব নিরীক্ষকসহ গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে দলীয় প্রভাবমুক্ত নিয়োগ নিশ্চিত করার প্রস্তাবগুলোকেও বিএনপি প্রত্যাখ্যান করেছে বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। এতে জাকসুর দাবি, এতে স্পষ্ট হয় যে দলটি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র কাঠামো টিকিয়ে রাখতে চায়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে শুধু সরকার বদলাবে, কিন্তু রাষ্ট্র কাঠামো অপরিবর্তিত থাকবে—এটি জনগণ মেনে নেবে না। জনগণের রক্তে অর্জিত জুলাই সনদ কার্যকর করে ফ্যাসিবাদী কাঠামো ভেঙে নতুন রাষ্ট্র নির্মাণ করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাব অনুমোদনের একমাত্র অধিকার দেশের সার্বভৌম জনগণের। কোনো রাজনৈতিক দলের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ জনআকাঙ্ক্ষার ঊর্ধ্বে হতে পারে না। সুতরাং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে অবিলম্বে গণভোট আয়োজন করতে হবে। অন্যথায় ছাত্র-জনতা আবারও রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে।
