আন্দোলনে আন্দোলনে সরগরম দিন কেটেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিভিন্ন প্রেক্ষাপট ও দাবিতে পৃথক পৃথকভাবে আন্দোলন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শ শিক্ষার্থী।
রোববার (২ নভেম্বর) বেলা ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে ও বটতলায় এসব কর্মসূচি পালিত হয়।
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক মাজেদুল হক নয়ন ও হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি শহিদুল ইসলামের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি নিয়ে উক্ত বিভাগের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেন। এর কিছুক্ষণ পর উপজেলা সাংগঠনিক অবস্থানের প্রতিবাদে ঐতিহাসিক বটতলা থেকে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন শিক্ষার্থী, সাবেক সহ-সমন্বয়ক ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
একই সময়ে আল-কুরআন ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্ররা নারী শিক্ষার্থীদের পোশাক নিয়ে কটূক্তিকারী অধ্যাপক নাসিরউদ্দিন মিঝির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে তাদের পক্ষ থেকে আন্দোলনে নামে।
বিবিএ ফ্যাকাল্টির সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আসা মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের হাতে দেখা যায় প্ল্যাকার্ড— ‘সত্য! সে কেন বহিষ্কৃত? যে শেখায় ন্যায়, তার সাথে অন্যায় নয়; শিক্ষক ছাড়া ক্লাসে বসব না; আমাদের শিক্ষক বহিষ্কার, এটাই কি সংস্কার? We need our teacher back; Bring back our pride; Education needs teacher not punishment.’
শিক্ষার্থীরা বলেন, “আমরা ৫০০ শিক্ষার্থী—বিভাগের মাত্র পাঁচজন শিক্ষক থেকে একজনকে হারালে আমরা কোথায় যাব? মাজেদুল স্যার কখনো দুর্নীতির সাথে জড়িত হননি; আন্দোলনের সময় তিনি কোনো ছাত্রকে জবরদস্তি করেননি। তার বিরুদ্ধে অভিযুক্ত ‘জুলাই-বিরোধীতার’ ঘটনার পুনরায় নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত।”
হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন— ‘৪ আগস্ট স্যার ক্যাম্পাসে ছিলেন না; নিরপেক্ষ তদন্ত চাই; মিথ্যার বিরুদ্ধে স্বচ্ছতা চাই; শিক্ষকের সম্মান ফিরিয়ে দাও; সত্য জাগুক, মিথ্যাচার থামুক।’
তারা বলেন, এই সিদ্ধান্ত কী প্রক্রিয়ায় নেওয়া হয়েছে তা জানতে চান। আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, স্যারদের কাছ থেকে কেউ হুমকি-ধামকির শিকার হননি; বরং যখন তাদের একজন শিক্ষার্থী মারুফ পুলিশে আটক ছিল, স্যাররা সন্ধ্যার মধ্যে তাকে ছাড়িয়ে এনেছিলেন। ‘শিক্ষার্থীবান্ধব যে স্যারকে বহিষ্কার করা হয়েছে, প্রশাসন আমাদের মতামত ব্যতীত এমন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারে না,’ তারা যোগ করেন।
আলোচনায় বলা হয়, স্যার একসময় ভিন্ন মতাদর্শের সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন—কিন্তু তা শিক্ষাগত বা অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ ছাড়া কোনো শিক্ষকের বহিষ্কারের যৌক্তিকতা দিচ্ছে না। ‘আমরা ফ্যাসিস্টদের বিচার চাই; কিন্তু নিরপরাধ ব্যক্তিকে শাস্তি দেব না,’ শিক্ষার্থীরা বলেন।
জুলাই-বিরোধী শক্তির আস্ফালনের প্রতিবাদের সহিত বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিতরা স্লোগান দেন— ‘জেগেছে রে, জেগেছে ছাত্রসমাজ; আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না; দালালদের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা; ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা।’
সাবেক সমন্বয়ক এস.এম. সুইট বলেন, ‘প্রশাসন তালিকা দেওয়ার পরও আমরা হতাশ। যারা সরাসরি মিছিলে অংশ নিয়ে গণহত্যাকে বৈধতা দিয়েছে তাদের নাম তালিকায় নেই। ৩৫ জুলাইয়ের মিছিলে শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা ছিলেন, কিন্তু তাদের নাম আসেনি। এক সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক। শিক্ষকদের বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি দাঁড়ানোর নীলনকশা করলে আমাদেরও মোকাবিলা করতে হবে; নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বিভিন্নভাবে প্রভাব প্রয়োগ করবেন না।’



