অতি ফর্সা রঙের আফিয়া খাতুন জন্মের পর থেকেই মা মনিরা খাতুনের জীবনে কষ্ট আর সংগ্রামের এক অধ্যায় যোগ করেছে। তার বৈশিষ্ট্যের কারণে তাকে স্বামী সংসার থেকে বঞ্চিত হন এবং বাবা পরিচয়ও না পেয়ে বড় হতে হয়েছে। আফিয়া বাবার কথা জানতে চাইলে ভাঙা কণ্ঠে বলে, ‘তার বাবা বিদেশে থাকে।’ এরপর থেকে মা-মেয়ে এককভাবে দিনযাপন শুরু করেন।
তবে সম্প্রতি তাদের জীবন ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। আফিয়া ও তার মা মনিরার জন্য দেওয়া হয়েছে ৩ শতাংশ জমি, যেখানে পাকা ঘর নির্মাণ করা হবে। ওই ঘরই হবে তাদের মাথা গোঁজার ঠিকানা।
২০২০ সালে যশোর সদর উপজেলার বাউলিয়া চাঁদপাড়া গ্রামের মোজাফফর হোসেন ও মনিরা খাতুনের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর যশোর শহরের জেলরোডে মাতৃসেবা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিজারিয়ান মাধ্যমে জন্ম নেন আফিয়া।
তার ফর্সা ত্বক, সাদা চুল ও হালকা ঘিয়ে রঙের কারণে বাবা মোজাফফর অপপ্রচার শুরু করেন এবং সন্তানের অস্বীকৃতি জানিয়ে জন্মের ৮ মাস পর বিদেশ পাড়ি জমান। এরপর থেকে আফিয়াকে নিয়ে মনিরা নিজস্ব শ্রমিক বাবার বাড়িতে চলে আসেন।
৬ নভেম্বর খবর প্রকাশিত হওয়ার পর আফিয়ার জীবনকাহিনী মানুষের নজরে আসে। সামাজিক ও গণমাধ্যমে খবর ও ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থা তার পাশে দাঁড়ান।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও যশোর-৩ সদর আসনের ধানের শীষ প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিত আফিয়ার নানা বাড়িতে গিয়ে ঘর নির্মাণ ও লেখাপড়ার দায়িত্ব নেন।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) মাতৃসেবা ক্লিনিকের মালিক মনিরুল ইসলাম ও পরিচালক (উন্নয়ন) সেলিম মোর্শেদ আফিয়ার মায়ের হাতে নগদ ২০ হাজার টাকা তুলে দেন এবং বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদানের ঘোষণা দেন।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) মানবিক সংগঠন ‘উই আর বাংলাদেশ’ এর প্রতিষ্ঠাতা এস এম আকবর আফিয়ার মায়ের হাতে ৩ শতাংশ জমির দলিল তুলে দেন। জমি ক্রয় ব্যয়ভার (১ লাখ ৩০ হাজার টাকা) বহন করেছে সংগঠনটি।
এস এম আকবর জানান, ‘জমির দলিল উপহার দিতে গিয়ে জানতে পেরেছি জন্মের পর থেকে আফিয়াকে বাবা একবারও কোলে নেয়নি। এখন অনেকেই তার পাশে আছেন।’
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আফিয়ার মায়ের সংগ্রামের গল্প যে কোনো মানুষের হৃদয় ছুয়ে যায়। মনিরা খাতুন ছোটবেলা থেকেই আর্থিক সংকট ও সমাজের অবহেলায় বড় হয়েছেন। আফিয়ার জন্মের পর সংসার ভেঙে যায়। এখন মা-মেয়ে পাশে দাঁড়ানো মানুষের সহায়তায় নিজের জমি ও ঘরে বসবাস করতে পারবে।
মাতৃসেবা ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গণমাধ্যমে দুর্দশার খবর জানতে পেরে পরিবারের পাশে দাঁড়ানো হয়েছে। আফিয়ার যাবতীয় চিকিৎসাসেবা বিনামূল্যে প্রদান করা হবে।’
অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘আফিয়া জেনেটিক ডিসঅর্ডারে ভুগছেন। তার বাবা ও পরিবারের অবহেলার কারণে এই কষ্ট হয়েছে। তবে আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা তার পাশে আছি এবং থাকব।’
মা মনিরা খাতুন বলেন, ‘ভিন্ন রঙের মেয়েকে নিয়ে নিজের বাড়িতে বসবাস করতে পারা খুশির খবর। মানুষের সহায়তা আমাদের জন্য আশীর্বাদ।’
আফিয়ার নানা শহিদ মোল্যা বলেন, ‘মা-মেয়ে ভালো থাকলেই আমাদের ভালো লাগে। মানুষের ভালোবাসায় তাদের কষ্ট দূর হবে। আগামীতে তাদের জন্য ভালো কিছু হবে।’


সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন