যশোরের বেনাপোল-শার্শা এলাকায় শীতের আমেজ শুরু হলেও সবজির দাম এখনও চড়া। মাছ ও পেঁয়াজের দামও বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ ভোক্তারা বিপাকে পড়েছেন। তারা দাবি করছেন, বাজারে স্বস্তি ফেরাতে নিয়মিত মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন।
বেনাপোল ও শার্শার বাজার ঘুরে রোববার (২৩ নভেম্বর) দেখা গেছে, সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও নানা কারণে দাম ক্রমেই বাড়ছে। শীতকালীন বেশিরভাগ সবজির দাম কেজিতে ২০-৪০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
পাইকারি সবজি বিক্রেতা মুজিবর রহমান বলেন, ‘আগাম শীতকালীন সবজি কয়েক সপ্তাহ ধরে বাজারে রয়েছে। কিছুদিন আগে দাম কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু মাঝে বৃষ্টিতে অনেক ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় সরবরাহ কমে গেছে। তাই শীতকালীন বেশিরভাগ সবজির দাম বাড়তি।’
খুচরা বিক্রেতা ফরহাদ আলী জানান, ‘পাইকারিতে দাম বেশি থাকায় খুচরায়ও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি এবং সার্বিক বাজার অস্থিরতার কারণে সবজির দাম এখনও স্বাভাবিক পর্যায়ে ফেরেনি।’
বাজারে সবজির দাম- পাতাকপি ৫০ টাকা, ফুলকপি ৭০ টাকা, শিম ১০০ টাকা, বেগুন ১০০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, ধনেপাতা ৩০০ টাকা, কচু ৫০ টাকা, ঢ্যাড়শ ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৪০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৪০ টাকা, গাজর ৬০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, আলু ২৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, পটল ৩০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা ও পেঁপে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া, লাউ প্রতি পিস ৩০-৪০ টাকা, পালং শাক আঁটি ২৫ টাকা, লাল শাক ২০ টাকা ও লেবু প্রতি হালি ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে পেঁয়াজ ও রসুনের দামও। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৩০ টাকা এবং রসুন ১৪০-২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
সবজির ঊর্ধ্বমুখী দামে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ভোক্তারা। জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘শীত মৌসুমের শুরুতে সাধারণত সবজির দাম হাতে নাগালের মধ্যে থাকে।
কিন্তু চলতি বছর পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। আয়-ব্যায়ের হিসাব মেলানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। মাছের দামও ক্রেতাদের চিন্তার বিষয়।’
মাছ বিক্রেতা বিকাশ দেবনাথ জানান, ‘বাজারে মাছের সরবরাহ কম তাই গত কয়েক মাস ধরেই দাম বাড়তি। সহসা দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই।’
অপর মাছ বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, ‘শীত শুরু হওয়ায় মাছ ধরার পরিমাণ কমেছে। এর প্রভাব বাজারে স্পষ্ট।’
বাজারে সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। পাবদা বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকা কেজি, শিং ৪৪০ টাকা, পাঙাশ ১৮০ টাকা, রুই ২৬০-৩৭০ টাকা, সিলভার কার্প ১৬০-২০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৭০ টাকা।
ছোট চিংড়ি পাওয়া যাচ্ছে ৬০০ টাকা কেজিতে, বড় চিংড়ি ৮০০-১০০০ টাকা, কৈ ৪০০-৬০০ টাকা, চিতল ৬০০-৭০০ টাকা, বোয়াল ৭৫০-৯০০ টাকা, আইড় ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
৩০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ: ৬৫০–১৪০০ টাকা, চন্দনা ইলিশ: ৩০০ টাকা, বড় কাতলা: ৪৫০ টাকা, ভেটকি: ৬৫০ টাকা, সামুদ্রিক পোমা: ৪০০ টাকা, টুনা: ৪০০ টাকা, ভাঙ্গুর: ৬৮০ টাকা। এছাড়া দেশি পুঁটি, টাকি, বাইনসহ বিভিন্ন ছোট মাছ ৪০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুরগি ও মাংসের দামও বাড়তি। কক মুরগি ২৫০ টাকা কেজি, সোনালি মুরগি ২৮০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৮০-২০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস ১২০০ টাকা।
চাল ও ডালের দামও বেড়েছে। মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা, বাংলামতি চাল ৮০ টাকা, চিনিগুঁড়া ১৫০ টাকা, নাজিরশাইল ১৪০ টাকা। দেশি মসুর ডাল ১২২-১২৫ টাকা, আমদানি করা ডাল ১২৫-১৩০ টাকা কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে।
ভোক্তারা জানান, বাজারে স্বস্তি ফেরাতে নিয়মিত মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। ক্রেতা আশানুর রহমান বলেন, ‘সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী। ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফার চাপ সাধারণ ক্রেতার ওপর পড়ছে। নিয়মিত মনিটরিং হলে মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পেত।’
হাবিবুর রহমান নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘প্রশাসন বাজার মনিটরিং করলেও এর প্রভাব বাজারে দৃশ্যমান নয়। সরকারের উচিত জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বাজার মনিটরিং প্রকৃত অর্থে জোরদার করা এবং কৃষকের বাজার গড়ে তোলা। এতে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম কমবে এবং সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।’



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন