ঢাকা মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫

মোরেলগঞ্জ হাসপাতালে ওষুধ সংকট ও দুর্নীতি: চরম ভোগান্তিতে রোগীরা

বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২৫, ১০:১৮ এএম
মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স । ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওষুধ সংকট, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে রোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। সরকারি তালিকায় ৩৫ প্রকারের ওষুধ থাকার কথা থাকলেও ভর্তি ও বহির্বিভাগের রোগীরা পাচ্ছেন মাত্র গুটিকয়েক সাধারণ ওষুধ। পাশাপাশি হাসপাতালের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও জোরপূর্বক ঘুষ নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১৯৬২ সালে ৩৫ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও ২০১৮ সালে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসা এই হাসপাতালটি। তবে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত জনবল এখনো স্বপ্নই রয়ে গেছে। সরকারি অর্থে কেনা আধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি বছরের পর বছর অব্যবহৃত পড়ে আছে। রুম সংকট, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, জরুরি বিভাগের সামনে পানি জমে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, প্রবেশপথ ও টিকিট কাউন্টারে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ- সব মিলিয়ে হাসপাতালের চিত্র এখন করুণ।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে হাসপাতালের জন্য ওষুধ কেনায় ১ কোটি ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও এর সঠিক ব্যবহার হয়নি। বরং দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। বিশেষ করে হাসপাতালের উচ্চমান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক মাতুব্বর মো. রেজোয়ান হোসেনের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অভিযোগ তুলেছেন একাধিক কর্মচারী।

এক আউটসোর্সিং কর্মচারী, আয়া শাহিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার বছরে বিল হয়, সেই বিল তোলার জন্য রেজোয়ান হোসেন আমার কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা নিয়েছেন। আমি যখন টাকা নেওয়ার কারণ জানতে চাই, তখনই আমাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে দেন।’

শুধু তাই নয়, অভিযোগ রয়েছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করছেন এবং আউটসোর্সিং কর্মচারীদের কাছ থেকে নিয়মিত ঘুষ আদায় করছেন।

রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, তালিকায় থাকা ৩৫ ধরনের ওষুধের বদলে রোগীরা পাচ্ছেন গ্যাসের ট্যাবলেট, প্যারাসিটামল, সর্দি-কাশির জন্য হিস্টাসিন ও সিরাপ এবং অল্প কিছু স্যালাইন। জ্বর ও ব্যথার জন্য একই ধরনের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, আর বাকি ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। এতে চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় রোগীরা প্রতিনিয়ত বিপাকে পড়ছেন।

তবে অভিযুক্ত কর্মকর্তা মাতুব্বর মো. রেজোয়ান হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কারো কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করিনি। কাউকে চাকরিচ্যুত করা বা যোগদান করানোর কোনো অধিকার আমার নেই।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুজাহিদুল ইসলাম জানান, ‘আউটসোর্সিং কর্মচারী শাহিনা আক্তার দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং তাদের নির্দেশনাতেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হিসাবরক্ষকের মেয়ে কীভাবে ওই পদে যোগ দিয়েছেন, সে বিষয়ে আমি অবগত নই।’

ওষুধ সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে সব হাসপাতালে সাময়িক সংকট থাকে, যা শিগগিরই কেটে যাবে।’