বরিশাল শহরের ঝুঁকিপূর্ণ সেই ৩৪টি ভবন ভাঙার কাজ শুরু করেছে সিটি করপোরেশন। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকালে শহরের সদর রোডে তিনতলা দুটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কার্যক্রম শুরু হয়।
দীর্ঘ ১০ বছর আগে ভবনগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সিটি প্রশাসন জানায়, এতে বসবাসরতদের প্রাণহানির শঙ্কা রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এতদিন ভবনগুলো অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে-পরে এ বিষয়ে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশসহ একাধিক পত্রিকায় লেখালেখি হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কীর্তনখোলার তীরের শহর বরিশালের ৫৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৩৫টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি)। ২০১৩ সালের জরিপে এসব ভবনকে বেহাল ও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ওই সময় বেশিরভাগ ভবন তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় একাধিকবার ভাঙার উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয় বিসিসি। পরবর্তীতে ভবনগুলো যাতে আইনগতভাবে ভাঙা না যায় সে জন্য আদালতে মামলা করা হয়। এতে আইনি জটিলতা দেখা দেওয়ায় বিসিসি দীর্ঘদিন নীরব থাকে।
জানা গেছে, সদর রোডসংলগ্ন বহুতল ভবন দুটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই কাজী মফিজুল ইসলাম কামাল অবৈধভাবে দখল করে রেখেছিলেন। তিনি বরিশাল-১ আসনের সাবেক এমপি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর শ্যালক। আওয়ামী লীগ শাসনামলে তিনি ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে বরিশালে ব্যাপক সন্ত্রাস চালিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সদর রোডে ভবন দুটির নিচের দোকানগুলো তিনি দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় ধরে নিজের দখলে রাখেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি একাধিক রাজনৈতিক মামলায় জড়িয়ে গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাবন্দি ছিলেন। জামিনে মুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি আত্মগোপনে আছেন।
একটি ভবনের মালিক নজরুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমার চাচা উলফাত হাজি ও শুককুর হাজি ১৯৬০ সালে একটি ভবন এবং ৩০ বছর আগে আরেকটি ভবন সদর রোডে নির্মাণ করেন। ২০১৩ সালে একটি ভবনে ফাটল দেখা দেয় ও পাশের ভবনের দিকে হেলে পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বরিশাল সিটি করপোরেশন ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। কিন্তু প্রভাবশালী ভাড়াটেরা জোর করে দখলে রাখায় তখন ভবনটি ভাঙা সম্ভব হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তনের পর আমি ভবন ভাঙার জন্য ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা সিটি করপোরেশনে জমা দিই। এরপর শুক্রবার সকাল থেকে ভবনটি অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে।’
বিষয়টি নিশ্চিত করেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘উলফাত ম্যানশন ও শাকুর ম্যানশন নামের ভবন দুটি আগেই ভাঙার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভাড়াটেরা আদালতে গিয়েছিলেন। আমরা কোর্টের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে রায় পেয়েছি। আগে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে নোটিশ দেওয়ার পরও তারা দখল ছাড়েননি। শুক্রবার সকালে তাদের চূড়ান্ত নোটিশ দিয়ে ভবন ভাঙা শুরু হয়। আশা করছি, সাত দিনের মধ্যে ভবন দুটি ভেঙে ফেলা সম্ভব হবে।’
বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী রূপালী বাংলাদেশকে জানান, ‘নগরের কাউনিয়া এলাকার জানুকি সিংহ রোডের মতি লস্করের বাড়ি, পূর্ব বগুড়া রোডে কাজি অফিসের পেছনে রবীন্দ্রনাথ সেনের ভবন, আগরপুর রোডে মহিলা কলেজসংলগ্ন মনু মিয়ার ভবন এবং সদর রোডসংলগ্ন ফজলুল হক অ্যাভিনিউর হোটেল বাহাদুর ভবনসহ ৩৪টি ভবনই পর্যায়ক্রমে ভেঙে ফেলা হবে। এর মধ্যে কিছু অনুমোদনহীন ভবনও রয়েছে।’