ঢাকা বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

ইলিশ শিকারে সমুদ্রে যাত্রা জেলেদের

চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২৫, ০৮:৫১ পিএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বুকভরা আশা নিয়ে জীবন বাজি রেখে সমুদ্রের দিকে রওনা হয়েছেন ভোলার চরফ্যাশনের জেলেরা। গত শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাত ১২টার পর থেকে সাগরগামী ট্রলারগুলো পর্যায়ক্রমে যাত্রা শুরু করেছে। তাদের চোখে একদিকে জীবিকার আশাবাদ, অন্যদিকে গভীর উদ্বেগ ও ঋণের বোঝা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সমুদ্র জীবিকার ব্যয় বাড়লেও আয় তুলনামূলকভাবে কমে যাওয়ায় অধিকাংশ জেলে এখন দারিদ্র্য ও ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছেন। এভাবেই অনন্ত ঋণচক্রে বন্দি হয়ে পড়ছেন তারা।

গত ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেরা নতুন করে ঋণ নিতে বাধ্য হন। কেউ এনজিও থেকে, কেউ-বা স্থানীয় মহাজনের কাছ থেকে আগাম টাকা ধার করে। সেই টাকার বদলে নির্দিষ্ট দামে মাছ বিক্রি করতে বাধ্য হন তারা।

জেলেরা বলছেন, মৌসুম শেষে হাতে যে টাকা আসে, তা দিয়ে ঋণের বোঝা কাটে না। নিষেধাজ্ঞা ও জলদুর্যোগের কারণে বেশিরভাগ সময় তীরে থাকতে হওয়ায় ঋণ নিয়েই সংসার চালাতে হচ্ছে। এমনকি অনেকেই ঋণ নিয়ে ট্রলারসহ সমুদ্রে যাচ্ছেন।

সমুদ্রে যাওয়ার প্রাক্কালে সামরাজ মৎস্যঘাটের নুর মোহাম্মদ মাঝি বলেন, ‘প্রতিবার সমুদ্রে যাওয়ার আগে অন্তত কয়েক লাখ টাকা ধার নিতে হয়। জাল মেরামত, বরফ, জ্বালানি তেল ও খাবার—সব মিলিয়ে খরচ অনেক। মাছ না পেলে পুরো ঋণ ঘাড়ে পড়ে।’ তার মতো হাজারো জেলে একই বাস্তবতার মুখোমুখি।

অহিদ মাঝি জানান, সমুদ্রে ঝড়ের সংখ্যা বেড়েছে, মাছের আবাসস্থল বদলে যাচ্ছে। ফলে আগের মতো মাছ ধরা যাচ্ছে না। অনেক জেলে ১০-১৫ দিন সমুদ্রে কাটিয়েও তেমন কিছু হাতে পান না। সংসার চালাতেই আবার ঋণ নিতে হয়।

চরফ্যাশন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামাল গোলদার বলেন, জেলেদের আরেকটি বড় সমস্যা হলো সামাজিক নিরাপত্তার অভাব। ঝড় বা দুর্ঘটনায় জেলে মারা গেলে তার পরিবার কার্যত অনিশ্চয়তায় পড়ে যায়। সরকারি সহায়তা প্রায়ই দেরিতে পৌঁছায়—ফলে পরিবারটি ঋণ নিয়ে বাঁচতে বাধ্য হয়।

উপজেলা মৎস্য দপ্তরের তথ্যমতে, এই উপজেলায় নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলিয়ে জেলের সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক। এদের মধ্যে সরকারি নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৪৪ হাজার ৩১১ জন। সমুদ্রগামী জেলে রয়েছেন ১৭ হাজার ৫৬১ জন এবং সমুদ্রগামী ট্রলার রয়েছে ১ হাজার ৩৬৫টি।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, ‘আমাদের উপকূলীয় জেলেরা প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের কাঁধে রয়েছে আর্থিক অনিশ্চয়তা, ঋণের বোঝা ও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। অনেকেই উচ্চসুদে মহাজন বা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে নৌকা ও জাল কিনেন। মাছ না পেলে বা দুর্যোগে ক্ষতি হলে সেই ঋণ তাদের জীবনের বোঝায় পরিণত হয়। তবে আমরা উপজেলা মৎস্য দপ্তর থেকে জেলেদের পাশে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’